বৃহস্পতিবার, ০৭ অগাস্ট ২০২৫, ০৭:৩৪ অপরাহ্ন
সানজানা তালুকদার ,কুবি প্রতিনিধি:
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) ২৮১ জন শিক্ষকের মধ্যে ছুটিতে আছেন ৯৮ জনই। এরমধ্যে, ৯৫ জন শিক্ষা ছুটিতে, দুইজন ডেপুটেশনে এবং একজন আছেন বাধ্যতামূলক ছুটিতে। যা মোট শিক্ষকের এক-তৃতীয়াংশের বেশি। ফলে শিক্ষক সংকটে নিয়মিত পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে অনেক বিভাগে।
রেজিস্ট্রার দপ্তরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী কুবিতে মোট শিক্ষক আছেন ২৮১ জন। এর মধ্যে সিএসই বিভাগের ০৯ জন, গণিত, পদার্থ বিজ্ঞান এবং রসায়ন বিভাগের ৮ জন করে, পরিসংখ্যান, ফার্মেসী এবং নৃবিজ্ঞান বিভাগের ০৭ জন করে, ইংরেজি এবং একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের ০৬ জন করে, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ০৫ জন, বাংলা, লোক প্রশাসন এবং আইসিটি বিভাগের ০৪ জন করে, অর্থনীতি এবং মার্কেটিং বিভাগের ০৩ জন করে, ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং, ব্যবস্থাপনা শিক্ষা এবং প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ০২ জন করে মোট ৯৫ জন শিক্ষক উচ্চ শিক্ষার জন্য শিক্ষা ছুটিতে আছেন।
এছাড়া, ডেপুটেশনে ২ জন এবং বাধ্যতামূলক ছুটিতে ১ জন সহ মোট ৯৮ জন শিক্ষক ছুটিতে আছেন। যা মোট শিক্ষকের ৩৪.৮৮ শতাংশ।
এদিকে রেজিস্ট্রার দপ্তর সূত্রে আরও জানা যায়, ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে সদ্য ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের বাদে বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫ হাজার ৮৪৮ জন। এরসাথে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে সদ্য ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের যোগ করলে সেই সংখ্যা দাঁড়ায় ৬ হাজার ৮৮৮ জন। সেই হিসেবে ৩৭ জন শিক্ষার্থীর জন্য মাত্র একজন শিক্ষক রয়েছেন। যেখানে আন্তর্জাতিক শিক্ষক-শিক্ষার্থীর আদর্শ অনুপাত হলো ১:২০ অর্থাৎ, প্রতি ২০ জন শিক্ষার্থীর জন্য একজন শিক্ষক থাকবেন।
শিক্ষক সংকট নিরসনে শিক্ষক নিয়োগের জন্য ইতোমধ্যে ফার্মেসী বিভাগের শিক্ষার্থীরা গত ১৭ জুলাই সকল ক্লাস- পরীক্ষা বর্জন করে শ্রেণীকক্ষে তালা দিয়েছিল। পরবর্তীতে উপাচার্যের আশ্বাসে তারা ক্লাসে ফিরলেও এখনো শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়নি। এরপর গতকাল (০৩ আগস্ট) তারা প্রশাসনিক ভবনে ৪ ঘন্টারও বেশি সময় তালা দিয়ে রেখেছিল। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) থেকে চিঠি পেয়ে তারা তালা খুলে দেয়।
এ ব্যাপারে ফার্মেসি বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী তাসনিয়া ইসলাম তারিন বলেন, ‘আমাদের চলমান ৮টি ব্যাচ এর বিপরীতে শিক্ষক রয়েছে মাত্র ৫ জন। যার কারণে প্রতিনিয়ত আমাদের ক্লাস, মিড ও ল্যাব পেছানো হচ্ছে। ফলে আমরা তীব্র সেশন জটে পড়ছি। এখন প্রশাসনের কাছে আমাদের একটাই দাবি অতি দ্রুত শিক্ষক চাই।’
ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থী মোঃ সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের নানাবিধ সমস্যার মধ্যে শিক্ষক সংকট অন্যতম। শিক্ষক সংকটের কারণে ঠিক মতো ক্লাস-পরীক্ষায় হয় না। অনেক বিভাগ সেশনজটের কবলে পড়ে যায়। এছাড়াও ডিপার্টমেন্টে যে অল্প কয়জন শিক্ষক আছেন তাদের উপর চাপ বেড়ে যায়। আমি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করব দ্রুত শিক্ষক নিয়োগের মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করার জন্য।’
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) ‘টিচিং লোড ক্যালকুলেশন পলিসি অব পাবলিক ইউনিভার্সিটি ২০২২’ অনুযায়ী, কোনো বিভাগ বা প্রতিষ্ঠানের অধিক সংখ্যক শিক্ষক শিক্ষা ছুটিতে বিদেশে অবস্থান করলে ঐ বিভাগ বা প্রতিষ্ঠানের টিচিং লোড ক্যালকুলেশনের ভিত্তিতে প্রাপ্ত শিক্ষক সংখ্যার অতিরিক্ত ২০% পর্যন্ত শিক্ষক নিয়োগের জন্য বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনে অতিরিক্ত শিক্ষকের আবেদন করতে পারবে।
এই শিক্ষক সংকট নিরসনের জন্য কি উদ্যোগ গ্রহণ করছেন তা জানতে চাইলে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ হায়দার আলী জানান, ‘আমাদের ৯৮ জন শিক্ষক শিক্ষা ছুটিতে আছেন। ইউজিসি’র আইন অনুযায়ী শিক্ষা ছুটিতে থাকা শিক্ষকের সংখ্যার ২০% শিক্ষক নিয়োগের আবেদন করা যায়। আমি গত ১৪ জুলাই শিক্ষক নিয়োগের জন্য আবেদন করে আসছি। আশা করি দ্রুততম সময়ের মধ্যে আমাদের শিক্ষক সমস্যা কিছুটা হলেও নিরসন হবে।’
এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের কিছু নিয়ম আছে। আমরা তো চাইলেও নিয়মবহির্ভূত নিয়োগ দিতে পারব না। শিক্ষক নিয়োগের বিষয়টা বাজেটের সাথে সম্পর্কিত। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষক নিয়োগের জন্য চাহিদা দেওয়া হয় এরপরে আমাদের একটা জনবল নিয়োগের মিটিং হয়। সেই মিটিংয়ে বাজেট অনুযায়ী আমরা শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে থাকি।’
তিনি আরও জানান, ‘এই মাসেই আমাদের জনবল নিয়োগের মিটিং হবে। সেই মিটিংয়ের পরে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে।’
2025 © জনপদ সংবাদ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
প্রয়োজনে যোগাযোগঃ ০১৭১২-০৬৮৯৫৩