শুক্রবার, ০৬ Jun ২০২৫, ০৮:৫৮ অপরাহ্ন
মো: আইয়ুব আলী, হারাগাছ (রংপুর), প্রতিনিধিঃ
সারা দেশের মুসলিম সম্প্রদায় আগামীকাল পবিত্র ঈদুল আযহা উদযাপন করবে। হজরত ইব্রাহিম (আ.) ও তাঁর পুত্র ইসমাইল (আ.)-এর আল্লাহর প্রতি আনুগত্য ও আত্মত্যাগের ঐতিহাসিক ঘটনার স্মরণে এই দিনটি উদযাপিত হয়। কুরবানি শুধু পশু জবাই নয়, বরং তা একজন মুমিনের ভেতরকার আত্মশুদ্ধি, ত্যাগ ও সামাজিক দায়িত্ববোধের বাস্তব প্রতিফলন।
করণীয়: শরিয়ত সম্মত পালন ও মানবিকতার অনুশীলন
তাকবীর তাশরিক পাঠঃ
৯ জিলহজ ফজর থেকে ১৩ জিলহজ আসর পর্যন্ত প্রতিটি ফরজ নামাজের পরে তাকবীর বলা সুন্নাত।
ঈদের নামাজ আদায়ঃ
নির্ধারিত সময় ও নিয়ম অনুযায়ী ঈদুল আযহার জামাতে অংশগ্রহণ করা ঈমানি দায়িত্ব।
শরিয়ত মোতাবেক কুরবানিঃ
পশু কুরবানি যেন যথাযথ নিয়ম ও দয়া সহকারে করা হয়। পশুর প্রতি নিষ্ঠুরতা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ।
পরিচ্ছন্নতা ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনাঃ
কুরবানির স্থান পরিষ্কার রাখা এবং বর্জ্য সঠিকভাবে অপসারণ করা নাগরিক দায়িত্ব। স্থানীয় পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনগুলোর পক্ষ থেকে এই বিষয়ে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
গোশত বিতরণে ভারসাম্য বজায় রাখাঃ
আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী ও দরিদ্রদের মাঝে কুরবানির গোশত সুষ্ঠুভাবে বণ্টন করা ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ।
চামড়া যথাযথ সংরক্ষণঃ
চামড়া বিক্রির অর্থ যেন সৎ কাজে ব্যয় হয় এবং চামড়া নষ্ট না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা প্রয়োজন।
বর্জনীয়: অজ্ঞতা, অসচেতনতা ও অসৌজন্যমূলক আচরণ
দেখনদারি ও অপচয়: বড় পশু কেনার প্রতিযোগিতা, সামাজিক মাধ্যমে প্রদর্শনী, কিংবা আত্মপ্রচারের উদ্দেশ্যে কুরবানি করা ইসলামী আদর্শবিরোধী।
জবাইয়ের অশালীনতাঃ
সবার সামনে কুরবানি করা, শিশুদের চোখের সামনে রক্তাক্ত দৃশ্য উপস্থাপন করা অনুচিত
পরিবেশ দূষণঃ
কুরবানির বর্জ্য রাস্তায় বা নালায় ফেলে জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে ফেলা মারাত্মক অপরাধ।
অমানবিক আচরণঃ
পশু মারার সময় নির্দয়তা, মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার আগেই চামড়া ছাড়ানো শরিয়তবিরোধী ও নিষিদ্ধ
ধর্মীয় গুজব ও বিদ্বেষ ছড়ানোঃ
ঈদের এই পবিত্র সময়ে সাম্প্রদায়িক উসকানি বা কুসংস্কার ছড়ানো সমাজে বিভাজন সৃষ্টি করে।
বিশেষজ্ঞদের মতামতঃ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহমুদুল হাসান বলেন, “ঈদুল আযহা কেবল পশু কুরবানির উৎসব নয়, এটি আত্মশুদ্ধি, সামাজিক সহাবস্থান ও পরিবেশ সচেতনতার বাস্তব শিক্ষা দেয়। সমাজকে এই উপলক্ষে আরও সচেতন হওয়া দরকার।”
ধর্মীয় দৃষ্টিকোণঃ
ইসলাম ধর্ম কুরবানিকে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করে। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেন, “কুরবানির পশুর রক্ত মাটিতে পড়ার আগেই তা আল্লাহর দরবারে কবুল হয়ে যায়।” (তিরমিযি)
ঈদুল আযহা আমাদের শিক্ষা দেয়—ত্যাগই শ্রেষ্ঠ অর্জন। এই ত্যাগ হতে হবে হৃদয় ও চরিত্রের, হতে হবে সমাজ ও পরিবেশ সচেতনতায় দৃঢ়। কুরবানির মাহাত্ম্য যেন শুধু রীতিনীতির মধ্যে সীমাবদ্ধ না থাকে, বরং তা হোক মানবতা, শৃঙ্খলা ও ইসলামী আদর্শ প্রতিষ্ঠার এক উজ্জ্বল উপলক্ষ।
2025 © জনপদ সংবাদ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
প্রয়োজনে যোগাযোগঃ ০১৭১৫-১২৫২৪৩