সোমবার, ১১ অগাস্ট ২০২৫, ০৪:০২ অপরাহ্ন
আমির ফয়সাল, জাবি প্রতিনিধিঃ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ছাত্রদলসহ সকল রাজনৈতিক দলের হল কমিটি বাতিল ও আবাসিক হলের অভ্যন্তরে সকল প্রকার রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে একটি বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
এ সময় শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের কাছে ছাত্রদলসহ সকল প্রকার রাজনৈতিক দলের পূর্বঘোষিত হল কমিটি বাতিল ও হলে ছাত্র সংগঠনগুলোর রাজনীতি বন্ধের দাবি উত্থাপন করলে তিনি বলেন, “হলের রাজনীতি বন্ধ ও কমিটি দেওয়া কিংবা বাতিলের এখতিয়ার আইনত কোনো উপাচার্যের নেই। তবে কোনো আবাসিক হলে কখনো যদি আমরা রযাগিং, গেস্টরুম, কিংবা জোরপূর্বক মিছিলে নেওয়ার মতো ঘটনার প্রমাণ পাই, তবে অভিযুক্ত ব্যক্তি যে কোনো সংগঠনের, যে কোনো পদের হোক না কেনো, আমি উপাচার্য কামরুল আহসান সেটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো।”
শনিবার (৯ আগস্ট) সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ হল ও ২১ নং হল থেকে মিছিলের যাত্রা শুরু করে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল আবাসিক হলগুলো প্রদক্ষিণ করে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। সেখানে উপস্থিত শিক্ষার্থীরা অবস্থান কর্মসূচি পালনপূর্বক পরে উপাচার্যের সাথে কথা বলার মাধ্যমে তাদের দাবিগুলো সুস্পষ্টভাবে উত্থাপন করে, তাদের বিক্ষোভ কর্মসূচি শেষ করেন তারা।
এ সময় শিক্ষার্থীরা মিছিলকে “হল কমিটি, হল কমিটি, বাতিল করো, বাতিল করো”, “আমার হলে রাজনীতি, চলবে না রে চলবে না”, “ওয়ান, টু, থ্রি, ফোর, হল পলিটিক্স নো মোর”, “গেস্টরুমের আগমন, রুখে দাও দিতে হবে”, “হলে হলে খবর দে, হল পলিটিক্স এর কবর দে” ইত্যাদি স্লোগানে মুখরিত করেন।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মাঝে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের ৪৮ তম আবর্তনের শিক্ষার্থী শাকিল আহমেদ বলেন, “আমরা বিগত বছরগুলোতে দেখেছি হল পলিটিক্স এর মাধ্যমে ছাত্রলীগ কীভাবে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে রেখেছিল। আমরা চাই না নতুন করে আবার সেই পুরোনো কালচার ফিরে আসুক। আমরা চাই আমাদের হলগুলো সকল প্রকার ছাত্র রাজনীতি থেকে মুক্ত থাকুক।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে একটি সুস্পষ্ট দাবি নিয়ে এসেছি এবং এটি হলো- অনতিবিলম্বে হল কমিটি ঘোষণা দেওয়া ছাত্রদলসহ সকল রাজনৈতিক দলের ঘোষিত হল কমিটিগুলো বাতিল করতে হবে।”
এদিকে আন্দোলনে অংশ নেওয়া সাধারণ শিক্ষার্থীরা উপাচার্য বরাবর ৬ দফা দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলো হলো: (১) সকল প্রকার ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে; (২) হলে ছাত্র রাজনীতির সাথে জড়িত শিক্ষার্থী, গণরুম, গেস্ট রুম এবং রযাগিং কালচারের সাথে জড়িত শিক্ষার্থীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে; (৩) অতি দ্রুত জাকসু তথা হল সংসদ কার্যকর করতে হবে এবং ছাত্রদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে; (৪) রাজনৈতিক সংগঠন থেকে প্রাপ্ত যেকোনো উপহার সামগ্রী গ্রহণ করে সেটা হল প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় স্থাপন করতে হবে; (৫) হলের অভ্যন্তরীণ কোন বিষয়ে অছাত্র বা বহিরাগতদের অযাচিত কোন হস্তক্ষেপ বরদাস্ত করা হবে না এবং সে অনুযায়ী আমাদের হল প্রশাসনকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে; এবং (৬) হলের মেয়াদ উত্তীর্ণ ছাত্রদের বিরুদ্ধে অনতিবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
উপস্থিত শিক্ষার্থীদের উত্থাপিত দাবির প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, “একজন উপাচার্য হিসাবে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আমি কোন সিদ্ধান্ত দিতে পারি না। আমি তোমাদের সাথে একমত পোষণ করছি যে, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে গণরুম, গেস্টরুম কালচার আবারও ফিরে আসুক সেটা কখনই চাই না। আমরা কখনো, যে কোনো অবস্থাতেই যদি প্রমাণ সাপেক্ষে এরকম রযাগিং, গণরুম, গেস্টরুম কালচারের খবর পাই, তবে সাথে সাথে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।”
ইতোমধ্যে জাবি ছাত্রদল ঘোষিত হল কমিটি বাতিল করার জন্য উপাচার্য কি পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন এ সম্পর্কে তিনি সরাসরি কোনো মন্তব্য করেননি। তিনি বলেন, “একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল গুলোতে রাজনীতি বন্ধ করার এখতিয়ার উপাচার্যের নেই।”
তিনি আরও বলেন, “আমি শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো লিখিত আকারে পেশ করার কথা বলেছি। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিল এবং হল প্রভোস্টসহ সংশ্লিষ্ট সবার সাথে আলোচনা করে এ ব্যাপারে একটা নীতিগত সিদ্ধান্ত দিতে পারবেন বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেছেন।
2025 © জনপদ সংবাদ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
প্রয়োজনে যোগাযোগঃ ০১৭১২-০৬৮৯৫৩