নিউজ ডেক্স
- ৪ জুন, ২০২৫ / ১৪৩ বার পঠিত

মো: জিসান রহমান, মাভাবিপ্রবি প্রতিনিধি:
মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (মাভাবিপ্রবি)–তে ঈদের ছুটির ফাঁকা সময়কে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসে বাড়ছে বহিরাগতদের আগমন। দিন দিন বেড়ে চলেছে আড্ডা, মাদকসেবন, বাইক রেসিং, অশ্লীল ও অসামাজিক কার্যকলাপ এবং টিকটকের নামে অশোভন ভিডিও ধারণের মতো কর্মকাণ্ড। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে, সৃষ্টি হয়েছে চুরির আশঙ্কা এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে উদ্বেগও বাড়ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ১ম গেট দিয়ে বাইক নিয়ে প্রায় বাধাহীনভাবে প্রবেশ করছে বহিরাগতরা। হাতির কবর, বিজয় অঙ্গণ, শহীদ মিনার, পুরাতন ছাত্রলীগ কার্যালয়, বুদ্ধিজীবী চত্বর, ক্যাফেটেরিয়া ও প্রশাসনিক ভবনসংলগ্ন এলাকা সহ একাডেমিক ভবনের আশপাশে চলমান এসব অনিয়ন্ত্রিত কার্যক্রম ক্যাম্পাসের পরিবেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। মুক্তমঞ্চের পেছন ও সেন্ট্রাল ফিল্ড এলাকায় মাদক সেবনের ঘটনাও দেখা যাচ্ছে। ছেলেদের আবাসিক হলের আশপাশেও ছেলেমেয়েদের অশ্লীল টিকটক ভিডিও তৈরির অভিযোগ উঠেছে।
শিক্ষার্থীদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া
গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী সাইদুল হাসান সোহাগ বলেন,“শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মানেই জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র। কিন্তু ছুটির সময়ে বহিরাগতদের অবাধ বিচরণ এখন ভয়াবহ সামাজিক সমস্যায় রূপ নিচ্ছে। এতে শিক্ষার পরিবেশ যেমন ব্যাহত হচ্ছে, তেমনি ক্যাম্পাসের ভাবমূর্তিও প্রশ্নের মুখে পড়ছে।”
পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সাকিব আল হাসান রাব্বি বলেন,“ক্যাম্পাস যেন ছাত্রদের নয়, বরং বহিরাগতদের জন্য বানানো হয়েছে! এখন মনে হয় এটা বিশ্ববিদ্যালয় না, যেন টিকটক স্টুডিও! নিরাপত্তা ব্যবস্থা বলতে গেলে অদৃশ্য, প্রশাসনের ভূমিকা কার্যত অকার্যকর।”
টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান রাকিব বলেন, “অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে যেখানে ছুটির সময় বহিরাগতদের প্রবেশ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত, সেখানে আমাদের ক্যাম্পাসে নজরদারির ঘাটতি প্রকট। এতে নিরাপত্তার পাশাপাশি পরিবেশও বিপন্ন হচ্ছে।”
এফটিএনএস বিভাগের শিক্ষার্থী সমাপ্তি খান জানান, “ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা কর্মী থাকলেও, তাদের নজরদারির অভাবে বহিরাগতদের কর্মকাণ্ড বেড়েই চলেছে। প্রশাসনের কাছ থেকে আমরা দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ আশা করছি।”
প্রশাসনের বক্তব্য
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. ইমাম হোসেন বলেন, “আমরা নিয়মিত টহল দিচ্ছি এবং কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা নজরে আসলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিচ্ছি। নিরাপত্তা রক্ষায় নিরাপত্তাকর্মীরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। শিক্ষার্থীদেরও সহায়তা প্রয়োজন।”
নিরাপত্তা শাখার উপ-রেজিস্ট্রার মো. রবিউল ইসলাম বলেন, “আমাদের দায়িত্ব পালনে অবহেলা নেই। গেট দিয়ে বাইক প্রবেশের সময় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। আনসার সদস্য সীমিত হওয়ায় সব জায়গায় কভার করা যাচ্ছে না। তবে অসামাজিক কার্যকলাপ দেখলে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।”
উদ্বিগ্ন শিক্ষক ও সচেতন মহল
বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান নিরাপত্তাজনিত অবস্থান নিয়ে উদ্বিগ্ন শিক্ষকগণ ও সচেতন মহল প্রশাসনের দায়িত্বহীনতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তারা মনে করছেন, বিশ্ববিদ্যালয় একটি নিরাপদ ও সুশৃঙ্খল শিক্ষার পরিবেশ গড়ে তুলতে প্রশাসনকে আরও সচেতন ও কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।