সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:১৭ অপরাহ্ন
মেহেরাব হোসেন, শিবচর (মাদারীপুর) প্রতিনিধি:
২০২১ সালে যখন সারা বিশ্ব করোনা ভাইরাসের প্রভাবে টালমাটাল, ঠিক তখনই গার্মেন্টস খাতে HR ম্যানেজার পদে কর্মরত আশকার উদ্দিন আহমেদ শাহিন তার চাকরি হারান। সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হিসেবে চাকরি হারানো হতাশা ও দুশ্চিন্তায় পরিবারসহ নিজ গ্রামে শিবচরে ফিরে আসেন।
পরিবারের চাপ ও বেকারত্বের কষ্ট সত্ত্বেও শাহিন নতুনভাবে জীবন গড়ার পরিকল্পনা করেন। তিনি ঠিক করেন গরুর খামার শুরু করবেন। যদিও প্রথমে এই উদ্যোগ পরিবার ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের দ্বারা পুরোপুরি সমর্থিত হয়নি, শাহিন তার লক্ষ্য থেকে পিছপা হননি। ছোট বোন ও বড় ভাইয়ের উৎসাহ এবং আর্থিক সহায়তায় মাত্র ৫টি ষাড় গরু দিয়ে তিনি খামার শুরু করেন।
অক্লান্ত পরিশ্রম ও ধৈর্যের ফলে সেই ছোট খামার থেকে আজ শাহিন একজন সফল খামারি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। গরুর খামারের পাশাপাশি তিনি একটি লেয়ার জাতের মুরগীর খামারও গড়ে তুলেছেন। বর্তমানে সেখানে প্রায় ১ হাজারের বেশি মুরগী রয়েছে, যেখানে প্রতিটি মুরগীর দৈনিক খরচ ৮ টাকা এবং আয় ১০ টাকা। শীঘ্রই তিনি একটি মাছের খামার চালুর পরিকল্পনাও করছেন।
শাহিন মিয়া স্থানীয় যুবকদের জন্য এক অনুপ্রেরণার উৎস। তিনি বলেন, “যদি সৎভাবে হালাল রুজি করতে চান, চাকরীর পিছনে না ঘুরে উদ্যোক্তা হোন। ছোট পরিসরে ব্যবসা শুরু করুন, কঠোর পরিশ্রম করুন—সাফল্য আসবেই। নিজের হাতে কাজ করতে হবে; নিজে কাজ করলে সফলতা নিশ্চিত।”
শাহিন মিয়ার মামা আকতারুজ্জামান বলেন, “আমার ভাগিনা ছোট থেকে শুরু করে আজ একজন সফল খামারি হয়েছে। এলাকা জুড়ে সবার কাছে তিনি অনুসরণীয়। তিনি প্রমাণ করেছেন, চেষ্টা থাকলে যে কেউ সফল হতে পারে।”
প্রতিবেশী মুফতি আলাউদ্দিন যোগ করেন, “শাহিন মিয়ার সাফল্য দেখে এলাকার তরুণরা উদ্যোক্তা হওয়ার আগ্রহী হচ্ছে। তারা বিশ্বাস করে, চাকরীর পিছনে না ঘুরেও ছোট পরিসরে ব্যবসা করে সফলতা অর্জন সম্ভব। এতে ব্যক্তি স্বাবলম্বী হয় এবং নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগও তৈরি হয়।”
শাহিনের গল্প প্রমাণ করে, সংকটকালে সাহসী সিদ্ধান্ত ও পরিশ্রম যেকোনো তরুণকে সফলতার শিখরে পৌঁছে দিতে পারে।
2025 © জনপদ সংবাদ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
প্রয়োজনে যোগাযোগঃ ০১৭১২-০৬৮৯৫৩