রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০২:০৩ পূর্বাহ্ন
আমির ফয়সাল, জাবি প্রতিনিধি:
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (জাকসু) নির্বাচনে ৩ হাজার ৩৩৪ ভোট পেয়ে দশম ভিপি হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুর রশিদ জিতু। আর ৩ হাজার ৯৯০ ভোটে জিএস নির্বাচিত হয়েছেন ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের মো. মাজহারুল ইসলাম।
শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বিকেলে জাবি সিনেট হলে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করা হয়।
ভোট গ্রহণের দুদিন পর অবশেষে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে। সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুর রশিদ জিতু ও সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ছাত্র শিবির সমর্থিত সমন্বিত শিক্ষার্থী জোটের মাজহারুল ইসলাম জয়ী হয়েছেন।
শনিবার বিকাল ৫টার পর জাকসুর চূড়ান্ত ফল ঘোষণা শুরু করেন নির্বাচন কমিশন। ফল ঘোষণা অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন নির্বাচন কমিশনের সদস্য সচিব ও প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম রাশিদুল আলম।
ভোট গণনা শেষে দেখা যায়, ভিপি পদে জয় পেয়েছেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও পরবর্তীতে জুলাই আন্দোলনের সমন্বয়ক, স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুর রশিদ জিতু। তার সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে শিবির সমর্থিত সমন্বিত শিক্ষার্থী জোটের প্রার্থী আরিফ উল্লাহর।
জিএস পদে বিপুল ভোটে জয় পেয়েছেন ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থী মাজহারুল ইসলাম। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বাগছাসের প্রার্থী আবু তৌহিদ মোহাম্মদ সিয়াম।
জাকসুতে মোট পদের সংখ্যা ২৫টি। এর মধ্যে ভিপি, সাংস্কৃতিক সম্পাদক, ক্রীড়া সম্পাদক ও সমাজসেবা সম্পাদক পদে শিবির সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থীরা জিততে পারেননি। জিএসসহ বাকি ২১টি পদেই বড় জয় পেয়েছে শিবিরের প্রার্থীরা।
এর আগে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১টি হলে অনুষ্ঠিত হয় জাকসু নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। ওইদিন ভোট গণনা শুরু হয় রাত সোয়া ১০টায়। তবে ম্যানুয়ালি ভোট গণনা করায় ফল প্রকাশে এত সময় নিল নির্বাচন কমিশন।
তবে ৩৩ বছর পর অনুষ্ঠিত বহুল প্রতীক্ষিত এ নির্বাচন বয়কট করেছেন ছাত্রদলসহ চারটি প্যানেল ও স্বতন্ত্র পাঁচ প্রার্থী। নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড না থাকা ও নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে একজন নির্বাচন কমিশনারসহ বিএনপিপন্থি চার শিক্ষক পদত্যাগ করেছেন।
এবারের নির্বাচনে কেন্দ্রীয় ২৫ পদের বিপরীতে প্রার্থী ১৭৭ জন। মোট ভোটার ১১ হাজার ৮৯৭ জন। এরমধ্যে ছাত্র ৬ হাজার ১১৫ এবং ছাত্রী ৫ হাজার ৭২৮ জন। নির্বাচনে প্রায় ৬৮ শতাংশ ভোট পড়েছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফলে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদে বিভিন্ন প্যানেলের প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে জয়ী হয়েছেন তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী আব্দুর রশিদ জিতু। তিনি স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী প্যানেল থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে নির্বাচিত হয়েছেন ইংরেজি বিভাগের ৪৮তম ব্যাচের মাস্টার্স শিক্ষার্থী মাজহারুল ইসলাম, যিনি শিবির প্যানেলের প্রার্থী ছিলেন।
সহ-সাধারণ সম্পাদক (ছাত্র) বা এজিএস পদে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ৪৯তম ব্যাচের মাস্টার্স শিক্ষার্থী ফেরদৌস আল হাসান নির্বাচিত হয়েছেন, আর সহ-সাধারণ সম্পাদক (ছাত্রী) পদে জয়ী হয়েছেন দর্শন বিভাগের ৪৮তম ব্যাচের মাস্টার্স শিক্ষার্থী আয়েশা সিদ্দিকা মেঘলা। দুজনই শিবির প্যানেলের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক পদে বিজয়ী হয়েছেন ফার্মেসি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু উবায়দা উসামা, আর পরিবেশ ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী মো. শাফায়েত মীর।
সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে জয়ী হয়েছেন ইংরেজি বিভাগের মো. জাহিদুল ইসলাম বাপ্পি। সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের মহিবুল্লাহ শেখ জিসান স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জয়ী হয়েছেন, তবে সহ-সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে বিজয়ী হয়েছেন উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের মো. রায়হান উদ্দীন, যিনি শিবির প্যানেলের প্রতিনিধি। নাট্য সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের মো. রুহুল ইসলাম।
ক্রীড়া সম্পাদক পদে জয়ী হয়েছেন বাংলা বিভাগের ৪৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান কিরন, যিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন। তবে সহ-ক্রীড়া সম্পাদক (নারী) হয়েছেন গণিত বিভাগের ফারহানা আক্তার লুবনা এবং সহ-ক্রীড়া সম্পাদক (ছাত্র) হয়েছেন মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের মহাদী হাসান, দুজনই শিবির প্যানেল থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। তথ্য প্রযুক্তি ও গ্রন্থাগার সম্পাদক পদে জয়ী হয়েছেন ফার্মেসি বিভাগের ৪৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. রাশেদুল ইসলাম লিখন।
সমাজসেবা ও মানবসম্পদ উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক পদে নির্বাচিত হয়েছেন গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস)-এর প্রার্থী আহসাব লাবিব। তবে সহ-সমাজসেবা সম্পাদক পদে দুইজন নির্বাচিত হয়েছেন—ফার্মেসি বিভাগের ছাত্রী নিগার সুলতানা এবং মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের মো. তৌহিদ হাসান, দুজনই শিবির প্যানেলের। স্বাস্থ্য ও খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ক সম্পাদক হয়েছেন প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী হুসনী মোবারক।
পরিবহন ও যোগাযোগ সম্পাদক পদে জয়ী হয়েছেন পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের মো. তানভীর রহমান। কার্যকরী সদস্য হিসেবে পুরুষদের মধ্যে নির্বাচিত হয়েছেন তিনজন মো. তরিকুল ইসলাম, মো. আবু তালহা (দুজনই শিবির প্যানেল থেকে), এবং মোহাম্মদ আলী চিশতী, যিনি বাগছাসের প্রার্থী ছিলেন। কার্যকরী সদস্য হিসেবে নারী প্রতিনিধিদের মধ্যে নির্বাচিত হয়েছেন নাবিলা বিনতে হারুণ, ফাবলিহা জাহান এবং নুসরাত জাহান ইমা, এরা সবাই শিবির প্যানেল থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন।
সর্বমোট ফলাফল অনুযায়ী দেখা যায়, শিবির প্যানেলের প্রার্থীরাই অধিকাংশ পদে জয়লাভ করেছেন। স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী প্যানেল এবং বাগছাসও কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদে নিজেদের অবস্থান নিশ্চিত করতে পেরেছে।
2025 © জনপদ সংবাদ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
প্রয়োজনে যোগাযোগঃ ০১৭১২-০৬৮৯৫৩