বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫, ১০:২৪ অপরাহ্ন
নোমাইনুল ইসলাম, বাঘাইছড়ি (রাঙামাটি) প্রতিনিধি:
“পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে”—এই দাবিকে সামনে রেখে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ ও বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থার প্রকল্পে জাতিগত বৈষম্যের অভিযোগে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) সকাল ১০টায় পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের উদ্যোগে বাঘাইছড়ি উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে এই কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। এতে বাঘাইছড়ি উপজেলার সর্বস্তরের সাধারণ জনগণ অংশ নেন।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের বাঘাইছড়ি উপজেলা শাখার সভাপতি মো. উক্তার হোসেন সোহেল। সঞ্চালনা করেন উপজেলা যুগ্ম-সম্পাদক আব্দুর রহমান।
প্রধান অতিথি ছিলেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মো. আব্দুল কাইয়ুম। প্রধান বক্তা ছিলেন বাঘাইছড়ি পৌর শাখার সভাপতি মো. মহিউদ্দিন।
এছাড়া মো. ইলয়াস, নুরুজ্জামান, রাফসান হোসেন মাসুদসহ নাগরিক পরিষদের নেতাকর্মী এবং বাঘাইছড়ি উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের সাধারণ মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
বক্তারা অভিযোগ করেন, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ কর্তৃক বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে দীর্ঘদিন ধরে বাঘাইছড়িবাসী বঞ্চিত হয়ে আসছে। উন্নয়নের নামে স্বজনপ্রীতি, অনিয়ম ও বৈষম্যের মাধ্যমে এক শ্রেণির ব্যক্তি এবং উপজাতি গোষ্ঠীকে অগ্রাধিকার দিয়ে প্রকল্প বিতরণ করা হচ্ছে।
তাদের দাবি, সাজেকের উদয়পুর এলাকায় কফি ও কাজুবাদাম চাষের নামে প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকার প্রকল্পে তিন শতাধিক ব্যক্তিকে বরাদ্দ দেখানো হলেও বাস্তবে ওই সংখ্যক ব্যক্তি অস্তিত্বই নেই। এভাবে কাগজে-কলমে প্রকল্প তৈরি করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন বক্তারা।
বক্তারা আরো জানান, সাজেক ইউনিয়নে ১টি ঘর, ১টি টিউবওয়েল এবং সাড়ে চারশ মেট্রিক টন সার বরাদ্দের কথাও ভিত্তিহীন ও অবাস্তব। তারা বলেন, “এসব প্রকল্প শুধু কাগজে-কলমে থাকলেও বাস্তবে জনগণ এর সুফল পায়নি।”
সমাবেশে বক্তারা দাবি করেন, বাঘাইছড়ি উপজেলার মোট ৮টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা থাকলেও বাঙালি অধ্যুষিত এলাকায় দীর্ঘদিন কোনো উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়নি।
তাদের অভিযোগ, রাস্তাঘাট, মসজিদ-মন্দির ও জনসেবা খাতে কোনো দৃশ্যমান উন্নয়ন হয়নি; বরং উপজাতি অধ্যুষিত এলাকাগুলিতে একই প্রকল্পের নামে একাধিক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
বক্তারা আরও বলেন, বাঘাইছড়ি পৌরসভা দেশের একটি তৃতীয় শ্রেণির পৌরসভা হলেও এখানকার জনগণ অবকাঠামোগত উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত।
রাস্তা-ঘাট, ড্রেনেজ ব্যবস্থা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও জনস্বাস্থ্য সুবিধা উন্নয়নের কোনো কার্যক্রম দৃশ্যমান নয়। অথচ প্রতি বছর পৌর প্রশাসন কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করছে—তবু তার কোনো প্রতিফলন জনগণের জীবনে দেখা যায় না।
বক্তারা আরও উল্লেখ করেন, দেশের সর্ববৃহৎ উপজেলা হওয়া সত্ত্বেও বাঘাইছড়িতে এখনো ফায়ার সার্ভিস স্টেশন স্থাপন করা হয়নি। নিয়মিত অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হলেও স্থানীয়ভাবে কোনো অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নেই। তারা দ্রুত একটি ফায়ার সার্ভিস স্টেশন স্থাপনের দাবি জানান।
বক্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সম্প্রতি পাহাড়িদের একটি চাকরি কল্যাণ সমিতিকে ৩০ লাখ টাকার বিশেষ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, যা সম্পূর্ণ বৈষম্যমূলক। তারা প্রশ্ন তোলেন, “এ বরাদ্দ কার স্বার্থে দেওয়া হলো? কোন নীতির ভিত্তিতে এই টাকা বরাদ্দ হলো?”
সমাবেশে বক্তারা ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে বলেন, “এই বিতর্কিত বরাদ্দ প্রত্যাহার করা না হলে জেলা পরিষদের সদস্য দেবপ্রসাদ দেওয়ানকে বাঘাইছড়ি উপজেলায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হবে।” তারা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে বিশ্বাসী, কিন্তু অন্যায়ের প্রতিবাদে প্রয়োজন হলে কঠোর কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য হবো। এর দায়ভার জেলা পরিষদকেই নিতে হবে।”
মানববন্ধনে বক্তারা জেলা পরিষদের প্রকল্পে বৈষম্য, উন্নয়ন বঞ্চনা ও অনিয়মের অভিযোগ এনে বাঙালি অধ্যুষিত এলাকায় সমান উন্নয়ন দাবি করেন। একই সঙ্গে ৩০ লাখ টাকার বিতর্কিত প্রকল্প বরাদ্দ প্রত্যাহারের দাবিতে ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম ঘোষণা করেন।
2025 © জনপদ সংবাদ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
প্রয়োজনে যোগাযোগঃ ০১৭১২-০৬৮৯৫৩