শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:১৪ অপরাহ্ন
সানজানা তালুকদার, কুবি প্রতিনিধি:
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) এক শিক্ষার্থীকে সিএনজি চালক ও সিএনজি মালিক কর্তৃক মারধরের অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শরীফ উল ইসলাম।
শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত নয়টার দিকে কোটবাড়ির চাঙ্গিনী দক্ষিণ মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, অভিযুক্ত সিএনজি চালক আনোয়ার এবং সিএনজির মালিক হারুন। ভুক্তভোগী শরীফ টিউশন শেষ করে কুমিল্লা শহর থেকে সিএনজিতে করে কোটবাড়ির দিকে রওনা দেন। সেসময় বৃষ্টি পড়ায় সিএনজির পর্দা টেনে দেন। বৃষ্টি কমলে পর্দা ভাজ করতে বলে চালক। এ নিয়ে দুইজনের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। পরবর্তীতে কোটবাড়ি বিশ্বরোড এলাকায় সিএনজি থেকে শরীফকে নামিয়ে দিতে চায় সিএনজি চালক। তখন শরীফ না নামতে চাইলে সিএনজি চালক শরীফকে নিয়ে আসে চাঙ্গিনী দক্ষিণ মোড় এলাকায় সিএনজি গ্যারেজে। সেখানে নামিয়ে তাকে গালাগালি করা হয় এবং সিএনজি চালক ও সিএনজি মালিক মিলে মারধর করে। শরীফ সহপাঠীদের ফোন দিলে রাত সাড়ে নয়টার দিকে কয়েকজন শিক্ষার্থী মিলে সেই সিএনজি গ্যারেজে যায় সমাধান করতে। তখন সিএনজি চালক, মালিক এবং গ্যারেজে থাকা অন্যান্য লোকজন মিলে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে। এসময় শিক্ষার্থীদের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে ধাওয়া দেয়। হামলা থেকে বাঁচতে শিক্ষার্থীরা ঘটনাস্থল থেকে দৌড়ে গন্ধমতি নামক এলাকায় অবস্থান নেয়।
তবে সিএনজি মালিক ও চালকের দাবি, তখন শিক্ষার্থীরা সমাধান করার কথা বলে তাদের মারধর করেন।
এরপর দশটার দিকে গন্ধমতি থেকে প্রায় একশ জন শিক্ষার্থী মিলে আবারও সিএনজি গ্যারেজে যায়। তখন পুলিশ প্রশাসনের উপস্থিতিতে সিএনজি চালকের ওপর উৎসুক জনতা হামলা করে। এতে সিএনজি চালক কিছুটা আহত হন।
তারপর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন মিলে শিক্ষার্থীদের শান্ত করে এবং সমাধানের জন্য আহ্বান করে।
শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীসহ কয়েকজন শিক্ষার্থী ও অভিযুক্ত চালক ও সিএনজি মালিক এবং গ্যারেজ মালিক আলোচনায় বসে।
আলোচনায় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী শরীফ উল ইসলাম বলেন, ‘আমাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে মারধর শুরু করে। আমার পায়ে আঘাত করে। কিন্তু, পকেটে ফোন থাকায় সেটিতে আঘাত লাগে। এছাড়া আমাদের ওপর বৃষ্টির মত ইট মেরেছে।’
এসময় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর একটি ফোন আঘাতে ভেঙে যেতে দেখানো হয়। এছাড়া, আরেক শিক্ষার্থীর ফোনও ভাঙা অবস্থায় দেখানো হয়। পাশাপাশি, আরেক শিক্ষার্থী একটি স্মার্ট ওয়াচ, একজনের পাওয়ার ব্যাংক ও নগদ টাকা ঘটনাস্থলে হারিয়ে গেছে বলে দাবি করেন।
সমাধানের উদ্দেশ্যে যাওয়ার পর মারধরের শিকার শাহিনুল ইসলাম গালিব বলেন, ‘আমরা গিয়েছি কথা বলে সমাধান করতে। কিন্তু, আমরা অটোরিকশা থেকে নামার সাথে সাথে আমাদের ওপর আক্রমণ করা হয়। আমার একটি স্মার্ট ওয়াচ সেখানে হারিয়ে গেছে। আমাদের ওপর রড এবং দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা করা হয়েছে। পাশাপাশি, বৃষ্টির মত ইট নিক্ষেপ করা হয়েছে।’
রাত একটার দিকে পুলিশ প্রশাসন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোঃ আবদুল হাকিম ও সহকারী প্রক্টর মুতাসিম বিল্লাহ, ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা ও অভিযুক্তরা এবং এলাকাবাসী মিলে আলোচনায় বসে সমাধান করা হয়। এসময় অভিযুক্তদের মুচলেকা ও ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
অভিযুক্ত সিএনজি চালক আনোয়ার বলেন, ‘তিনি (শিক্ষার্থী) যখন সিএনজিতে উঠেন তখন বৃষ্টি পড়ছিলো। বৃষ্টি পড়া বন্ধ হলে আমি পর্দাটি ভাজ করতে বলি। তখন আমাকে বাজে ভাষায় গালাগালি করে। তখন তিনি (শিক্ষার্থী) ফোনে লোকজনকে আসতে বললে আমি ভয়ে তাকে গ্যারেজের সামনে নামিয়ে দেই। আমি বাকি যাত্রীদের কোটবাড়ি নামিয়ে আবার গ্যারেজে আসলে ২০ থেকে ২৫ জন এসে আমারে মারধর করে ও পরে আবারও ৬০ থেকে ৭০ জন এসে মারধর করে।’
অভিযুক্ত সিএনজির মালিক হারুন বলেন, ‘আমি প্রথমে গ্যারেজের ভেতরে ছিলাম। পরে চিল্লাচিল্লি শুনে বাহিরে এসে দেখি উনার (শিক্ষার্থী) সাথে ঝামেলা। এরপরে ২০ থেকে ২৫ এসে চালককে মারধর করতে থাকলে আমি বাঁধা দেই।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোঃ আবদুল হাকিম বলেন, ‘সিএনজি চালক ও মালিকের সাথে হওয়া ঝামেলায় ঘটনাটি সমাধান করা হয়েছে। চালক ও সিএনজি মালিকের মুচলেকা নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের ক্ষতিপূরণ দিতে বলা হয়েছে। আমি বলবো শিক্ষার্থীদেরও আরও সহনশীল হতে হবে।’
2025 © জনপদ সংবাদ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
প্রয়োজনে যোগাযোগঃ ০১৭১২-০৬৮৯৫৩