সোমবার, ১০ মার্চ ২০২৫, ০৯:২৪ অপরাহ্ন
আবু বকর সুজন, চৌদ্দগ্রাম (কুমিল্লা) প্রতিনিধি:
রমজান মাসে আসলে বাজারের সয়াবিন তেলের চাহিদা বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে যায়। এসময় দাম বাড়তে থাকে সয়াবিন তেলের । দাম বৃদ্ধির আশঙ্কার চৌদ্দগ্রাম বিভিন্ন হাট বাজার থেকে উধাও হয়ে গেছে বোতল জাত সয়াবিন তৈল। বাজারে অনেক দোকান ঘুরেও মিলছেনা ভোজ্যতেল। তবে বোতলজাত না মিললেও পাওয়া যাচ্ছে খোলা সয়াবিন তেল । সকল খোলা ভোজ্যতেল বিক্রি হচ্ছে বাড়তি দামে। খুচরা বিক্রেতাদের অভিযোগ পাইকারি বিক্রেতা ও ডিলারদের বিরুদ্ধে। পাইকার বলছে ডিলার তেল দিতে পারছেনা, ডিলাররা বলছেন প্রতিমাসে চৌদ্দগ্রামে ৪০ থেকে ৫০টন ভোজ্য তেলের প্রয়োজন। পরিবেশকরা কোম্পানিগুলো ঠিকমতো সরবরাহ করছেনা। রমজানের আগে এই তেল সংকটে ক্ষোভ ক্রেতা বিক্রেতাদের। নিয়মিত বাজার তদারকি না থাকায় প্রশাসনের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন এই ক্রেতা।
সরেজমিন বৃহস্পতিবার দুপুরে চৌদ্দগ্রাম বাজার ঘুরে দেখা যায়, গত ৯ ডিসেম্বর সরকার সয়াবিন তেলের দাম লিটার প্রতি ৮টাকা বৃদ্ধি করে। ফলে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল এখন বিক্রি হচ্ছে ১৮৫ টাকায়। প্রতি কেজি খোলা সয়াবিন তেল ১৭০ টাকা থেকে বেড়ে ১৯৫-২০০টাকা বিক্রি হচ্ছে। খোলা পামওয়েল তেল লিটার প্রতি ১৭৫ টাকা থেকে বেড়ে ১৮৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া বোতলজাত ৫ লিটার সয়াবিন তেলের দাম এখন ৯৪৫টাকা, যা আগে ছিল ৯২৫ টাকা।
পৌরসভার গোমারবাড়ী এলাকার মোঃ জামাল মিয়া বলেন, বেশ কয়েকটি খুচরা দোকান ঘুরে ৫ লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল পাওয়া যায়নি। কিছু দোকানে ১ থেকে ২ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন মিললেও দোকানি চাচ্ছেন মোড়কে উল্লেখিত দামের চেয়েও অনেক বেশি দাম। বাধ্য হয়ে টিচার ব্রান্ডের ৯৫০ মিলি বোতল কিনেছি ২শ টাকা দিয়ে।
মুন্সিরহাট বাজারের শফিক নামের এক ক্রেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, নির্দিষ্ট দুই এক জন বিক্রেতার কাছে বেশি দামে সয়াবিন তেলের ছোট বোতল মিললেও ৫ লিটারের বোতল মিলছে না। খোলা সুপার তেলের দাম ছাচ্ছেন ১৮০ টাকা। আবার তেলের সাথে প্যাকেটজাত চাল আটা মশলা কিনতে হবে বলছে দোকানদার।
একই বাজারে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক খুচরা দোকানদার জানান, ডিলারদের কাছে চাহিদা অনুযায়ী তেল পাওয়া যাচ্ছে না। কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিরা কল রিসিভ করেন না। তেল চাইলে ডিলাররা তেলের সাথে ওই কোম্পানির কয়েক ধরনের পন্য কেনার শর্ত জুড়ে দেন।
উপজেলার দুইটি বড় বাজার চৌদ্দগ্রাম ও মুন্সিরহাট। চৌদ্দগ্রাম বাজার ঘুরে দেখা মিলেনি সয়াবিন তেলের ৫ লিটারের বোতল। নাম না প্রকাশের শর্তে বাজারের এক দোকানদার বলেন, নিরুপায় হয়ে গতকাল তীর ব্রান্ডের ৫ কার্টুন (২০বোতল) সয়াবিন ক্যানোলা কিনেছি; এর সাথে কিনতে হয়েছে তীর ব্রান্ডের ১০ ব্যাগ লবন (প্রতিটি ২৫কেজি), ৫ বস্তা আটা (প্রতিটি ২৫ কেজি), ১ বস্তা ময়দা (২৫ কেজি), ৫০কেজির ১ বস্তা চিনিগুড়া চাল। একই শর্ত ফ্রেশ ব্রান্ডের ডিলারেরও।
ফ্রেশ ব্রান্ডের ডিলার পরিচয় ট্রেডার্স এর স্বত্বাধিকারী রোমেল জানান, চাহিদা অনুযায়ী কোম্পানি তেল দিচ্ছে না। আবার তেলের সাথে কোম্পানির অন্যান্য পন্য বিক্রির নির্দেশ রয়েছে। সরকার নির্ধারিত মূল্যের চাইতে বেশি দামে তেল বিক্রির কথাও স্বীকার করেন এবং কোম্পানি বাড়তি দামে তেল সরবরাহ করছে বিধায় বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
চৌদ্দগ্রাম বাজারের প্রাইম ব্যাংকের গলিতে মুন্সি বাড়ির সামনে শফিক পাটোয়ারী গোডাউন, জামে মসজিদ রোডে বিসমিল্লাহ ট্রেডার্সের গোডাউন, আছু শাহ ফকির রোডের মাছ বাজারের পাশে পরিচয় ট্রেডার্সের গোডাউনের আশপাশের লোকজন অভিযোগ করেন বলেন নিয়মিত এই গোডাউন গুলোতে তৈল মজুদ করছেন ডিলারা।
তীর ব্রান্ডের ডিলার বিসমিল্লাহ ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী রিংকু জানান, গত শুক্রবার আমরা ১৫০কার্টুন ক্যানোলা সয়াবিন এবং ১২০ কার্টুন সয়াবিন সরবরাহ করেছি। প্রতি ৫ লিটার ৯২৫ টাকা দরে। প্রতিমাসে আমাদের তেলের চাহিদা থাকে ৪০/৫০ টন। এবং তেলের সাথে অন্যান্য পন্য কিনতে বাধ্য করার কথা অস্বীকার করেন।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ জামাল হোসেন বলেন, ‘বাজারে ভোজ্যতেল সংকটের কথা জেনেছি। সরবরাহ সংকটের কথা বলা হচ্ছে। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নিব।’
কুমিল্লার জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো: কাউছার মিয়া বলেন, রমজান মাস আসলে ভোজ্য তেলের চাহিদা বেড়ে যায়। ভোক্তা অধিকার ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যৌথ ভাবে বাংলাদেশের বড় বড় ভোজ্য তেল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান মেঘনা, তীর, রুপচাঁদা ও প্রাণ কোম্পানীর সাথে আলোচনা চলছে রমজানে যেন ভোজ্য তেলের সরবরাহ স্বাভাবিক থাকে।
2025 © জনপদ সংবাদ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
প্রয়োজনে যোগাযোগঃ ০১৭১৫-১২৫২৪৩