মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:২৮ অপরাহ্ন
আবু বকর সুজন, চৌদ্দগ্রাম (কুমিল্লা) প্রতিনিধিঃ
চুরির অপবাদ দিয়ে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে নুরুল আলম (২২) নামে এক যুবককে গাছের সাথে বেধে মধ্যযোগী কায়দায় নির্যাতনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার (৪ অক্টোবর) উপজেলার কাশিনগর ইউনিয়নের উত্তর যাত্রাপুর গ্রামে।
নির্যাতনের শিকার নুরুল আলম একই গ্রামের আবুল হাসেমের ছেলে। আশংকাজনক অবস্থায় তাকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নির্যাতনের শিকার নুরুল আলমের বাবা আবুল হাসেমের সাথে দীর্ঘদিন ধরে একই এলাকার মৃত আব্দুল হামিদের ছেলে ইসমাইল মিয়া (৫৫) ও শফিক মিয়া প্রকাশ বাচ্চু মিয়া (৫৯) এর সাথে দীর্ঘদিন ধরে জায়গা সম্পত্তির বিরোধকে কেন্দ্র করে আদালতে মামলা চলে আসছে। বিষয়টি এলাকার সাহেব সর্দারগণ একাধিকবার শালিসী সভা করে নিষ্পত্তি করার চেষ্টা করলেও ইসমাইল মিয়া ও বাচ্চু মিয়ারা মেনে নেয়নি। শনিবার ভোরে আবুল হাসেমের ছেলে নুরুল আলম বাড়ীর পাশে একটি খালে মাছ ধরতে গেলে বাচ্চু মিয়ার নিকট আত্মীয় স্বপন মিয়া ও মোঃ সোহেল মিয়া তাকে জোর করে ধরে এনে আবুল হাসেম নামে অপর অভিযুক্তের বাড়ীর আম গাছের সাথে বেধে মধ্যযোগী কায়দায় নির্যাতন শুরু করে। ভোর থেকে বিকাল পর্যন্ত নুরুল আলমকে নির্যাতন করে এক পর্যায়ে মসজিদের মাইকে চোর ধরেছে বলে ঘোষনা করে অভিযুক্তরা পালিয়ে যায়।
এ সময় নুরুল আলম অজ্ঞান হয়ে গেলে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় তার স্বজনরা নুরুল আলমকে উদ্ধার করে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে এলে সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করা হয়। সেখানে তার অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় কতর্ব্যরত ডাক্তার তাকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে।
নির্যাতনের শিকার নুরুল আলমের পিতা আবুল হাসেম বলেন, আমার সাথে পাশ্ববর্তী বাড়ীর ইসমাইল মিয়া ও বাচ্চু মিয়ার সাথে জমি সংক্রান্ত বিরোধ চলে আসছে। এ নিয়ে আদালতে মামলাও চলছে। বাচ্চু মিয়ারা প্রায় সময় আমাদের উপরে হামলা চালাতো। শনিবার ভোরবেলায় আমার ছেলে নুরুল আলম বাড়ীর পাশে মাছ ধরতে গেলে বাচ্চু মিয়ার আত্মীয় স্বপন মিয়া ও সোহেল মিয়া তাকে ধরে নিয়ে আবুল হাসেম নামে তাদের নিকট আত্মীয়ের বাড়ীতে নিয়ে আম গাছের সাথে বেধে দিনভর লোহার রড, লাঠি এবং ধারালো কুচ দিয়ে তাকে অমানসিক নির্যাতন করে। পরে তারা মাইকে ঘোষনা দেয় চোর ধরেছে। এই সময় লোকজন জড়ো হলে তারা আমার ছেলেকে রেখে পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় তাকে উদ্ধার করে ডাক্তারের কাছে নিয়ে আসি।
চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর চিকিৎসক সাইদ আল মুনসুর ইনাম বলেন, শনিবার বিকেলে নুরুল আলমকে যখন হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় তখন তার অবস্থা খুবই খারাপ ছিলো। তার পায়ের তালু, হাতের তালুকে মারাত্মক জখম পাওয়া গেছে। সমস্ত শরীরে রক্তাক্ত জখম পাওয়া গেছে। এছাড়াও শরীরের বিভিন্ন স্থানে রক্তাক্ত আঘাতের চিহ্ন ও পাওয়া যায়। তার অবস্থা আশংকাজনক। এখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।
৪৩ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, নির্যাতনের শিকার নুরুল আলমকে অভিযুক্ত আবুল হাসেমের বাড়ীর একটি আম গাছের সাথে রশি দিয়ে বেধে মোঃ স্বপন মিয়া ও সোহেল মিয়া নামে দুই ব্যক্তি লাঠি ও শক্ত এসএস এর পাইপ দিয়ে মারাত্মক ভাবে আঘাত করে যাচ্ছে। আঘাতের যন্ত্রনা নুরুল আলম সহ্য করতে না পেরে চিৎকার করে কান্না করছিলো। সেই সময় আশেপাশের নারী ও পুরুষরা এই চিত্র দেখে যাচ্ছে।
এই ব্যাপারে অভিযুক্তদের বক্তব্য জানার চেষ্টা করা হলেও আত্মগোপনে থাকায় তাদের কারো বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ হিলাল উদ্দিন আহাম্মেদ বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নুরুল আলমকে নির্যাতনের একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে বিষয়টি আমাদের নজরে আসলে আমরা অভিযুক্তদের আটক করতে একাধিক টিম অভিযানে নেমে পড়ি। নির্যাতনের শিকার নুরুল আলমের পরিবারকে আইনি সকল সহযোগিতা দেওয়া হবে।
ছবির ক্যাপসান ঃ নুরুল আলমকে নিযাতন করছে স্বপন ও সোহেল মিয়া
2025 © জনপদ সংবাদ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
প্রয়োজনে যোগাযোগঃ ০১৭১২-০৬৮৯৫৩