সোমবার, ২৮ Jul ২০২৫, ০১:০৫ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনামঃ
জাবি হলে ছাত্রশিবিরের উদ্যোগে সাইকেল পাম্পার বিতরণ পরকীয়ার জেরে স্ত্রীকে লাইভে রেখে প্রবাসে স্বামীর আত্মহত্যা চুনারুঘাটের বৃক্ষ মেলার সমাপনী অনুষ্ঠান সম্পন্ন রাজাপুরে দুই বিদ্যালয়ের নবগঠিত পরিচালনা কমিটির পরিচিতি ও মতবিনিময় সভা নাগেশ্বরী উপজেলা বিএনপির আহবায়কের গ্রেপ্তারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ দুমকীতে বাঁধ ভেঙে পানিবন্দি শতাধিক পরিবার ‎ভূরুঙ্গামারীতে শতবর্ষী বটগাছ উপড়ে প্রধান সড়ক বন্ধ, দুর্ভোগে ১০ হাজার মানুষ ফরিদপুরে মাদক মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি গ্রেপ্তার পত্নীতলা বিজিবি’র অভিযানে বিপুল পরিমানে ফেন্সিডিল উদ্ধার ফরিদপুর নগরকান্দায় পূজা উদযাপন ফন্টের কমিটি গঠন ও মত বিনিময় সভা আমতলীতে ওয়ার্ল্ড ভিশন ও এনএসএসএর কিশোরী সমাবেশ অনুষ্ঠিত দুর্গাপুরে মসজিদ ভিত্তিক কুরআন শিক্ষা প্রতিযোগিতার ফলাফল প্রকাশ ও পুরস্কার বিতরণ কটিয়াদীতে কিন্ডারগার্টেন শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় অন্তর্ভুক্তির দাবিতে মানববন্ধন হরিরামপুরে বর্ষা মৌসুমেও পানিশূন্যতায় ইছামতী নদী এক বছরেও গ্রেফতার হয়নি মারিয়া হত্যা মামলার আসামি নারী কেলেংকারীতে জড়িত সারোয়ার তুষারকে প্রধান আলোচক করে জবি বাগছাসের অনুষ্ঠান কর্মসূচি কুড়িগ্রামে মাদক মুক্ত সমাজ গড়তে মতবিনিময় সভা ও বৃক্ষরোপন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত বৃক্ষরোপন কর্মসূচিতে সচিবের কাছে ঠাকুরগাঁও ডিসি অফিসের কর্মচারী শহিদুলের দুর্নীতির অভিযোগ বিএনপির ক্লাবে নেতাদের মাঝে বসে ছবি তুললেন এএসআই, দেখা দিলো বিতর্ক পত্নীতলায় জুলাই পুনর্জাগরণ ও সমাজ গঠনে শপথ পাঠ

হরিরামপুরে বর্ষা মৌসুমেও পানিশূন্যতায় ইছামতী নদী

 

মফিজুর রহমান, হরিরামপুর ( মানিকগঞ্জ ) প্রতিনিধিঃ

মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার বুক চিরে প্রবাহিত ইছামতী নদী পানিশূন্যতায় এখন মৃতপ্রায়। বর্ষা মৌসুমেও এই নদীতে নেই পানির প্রবাহ। একসময় যে নদীর তীব্র স্রোতে চলত পালতোলা নৌকা,সেই নদী এখন আবর্জনা, কচুরিপানা ও জলজ আগাছায় ঢেকে গিয়েছে।পানি না থাকায় নদীটি হারিয়ে ফেলেছে তার জীবনীশক্তি। নদীর দুই পাড়জুরে গড়ে উঠেছে অসংখ্য বসতবাড়ি,হাসঁ-মুরগির খামার ও গরু-ছাগল পালনের ঘর। এসব স্থাপনা থেকে প্রতিনিয়ত ফেলা হচ্ছে ময়লা-আবর্জনা, যা সরাসরি নদীতে গিয়ে পড়ছে। ফলে দিন দিন নদীর গভীরতা কমে যাচ্ছে এবং পানি প্রবাহ ব্যাহত হয়ে নদীটি হয়ে পড়ছে প্রায় পানিশূন্য।

স্থানীয় সুত্রে জানা যায়,উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ইছামতি নদী একটি অন্যতম প্রাচীন নদী। জেলার দৌলতপুর থেকে ঘিওর, শিবালয়ের উথুলী হয়ে হরিরামপুর উপজেলার মাচাইন, ঝিটকা হয়ে প্রায় ৩৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ইছামতী নদীটি বাহাদুরপুর এসে পদ্মার সাথে মিলিত হয়েছে। আশির দশকের দিকে পদ্মার ভাঙনের ফলে ইছামতীর বেশকিছু অংশ পদ্মায় মাঝেও রয়েছে।তবে বর্তমানে নদীটি উপজেলার রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের বকচর,আলগীরচর এলাকার পদ্মা নদী থেকে বাহিরচর বাজার, বাহিরচর পূর্বপাড়া, আন্ধারমানিক, যাত্রাপুর, পশ্চিম খলিলপুর, কাণ্ঠাপাড়া, পূর্ব খলিলপুর, সট্টি, বহলাতলী, সুলতানপুর হয়ে সদর উপজেলার ভাঙাবাড়িয়া দিয়ে বালিরটেক কালিগঙ্গায় মিলিত হয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন স্থানে নদীর মাঝ দিয়ে একাধিক স্থায়ী বাঁধ নির্মাণে গতিপথ রোধ করায় নদীটির পানি প্রবাহ অচল হয়ে মৃতপ্রায় অবস্থায় পরিণত হয়েছে।

সুত্রে আরও জানা যায়, ২০২০–২১ অর্থবছরে দৌলতপুর থেকে বাহাদুরপুর পর্যন্ত ১৯ কিলোমিটার নদী খনন করা হলেও তা স্থায়ী কোনো সমাধান দেয়নি। খননকৃত মাটি নদীর পাড়ে রেখে যাওয়ায় বর্ষা মৌসুমে সেই মাটি আবার নদী ভরাট করে ফেলে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, নদীর অধিকাংশ জায়গায় এখন পানি নেই বললেই চলে। আবার কোথাও কোথাও পানি থাকলেও তা স্থির অবস্থায় জমে রয়েছে, যা অনেকটা জলাশয়ের মতো নিস্তেজ এবং প্রাণহীন। আবার কিছু অংশ সম্পূর্ণভাবে কচুরিপানা ও নানা রকম জলজ আগাছায় ঢেকে গেছে, যার ফলে নদীর মূল প্রবাহপথ চিহ্নিত করাও কঠিন হয়ে পড়েছে। পানি না থাকায় নদী এখন মৃতপ্রায় অবস্থায় পড়ে আছে।

স্থানীয়রা জানান, এক সময় এই নদী দিয়ে বর্ষা মৌসুমে স্রোত বয়ে যেতো। নদীর উপর দিয়ে গৃহস্থালির নৌকা চলত, মানুষজন যাতায়াত করত। কিন্তু এখন সেই দৃশ্য আর দেখা যায় না। বর্ষা এলেও নদীতে পানি আসতে পারে না। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, নদীর প্রবেশমুখে বড় বাঁধ দিয়ে পানি প্রবেশের পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে নদীতে বর্ষার পানিও আর ঢুকতে পারে না। নদীতে পানি না থাকায় সেটি ক্রমশ শুকিয়ে জঞ্জালের ভাগাড়ে পরিণত হচ্ছে। আশেপাশের বাড়িঘরের বাসিন্দারা নিয়মিতভাবে তাদের ময়লা-আবর্জনা ফেলে দিচ্ছেন নদীতে। এতে করে নদীর পরিবেশ ভয়াবহভাবে দূষিত হচ্ছে। এছাড়াও নদীর পাড়ঘেঁষে থাকা গাছপালার শুকনো পাতা, ডালপালা পড়ছে নদীতে, যা জমে নদীটি আরও নোংরা ও অকার্যকর হয়ে উঠছে।

উপজেলার রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা আক্কাস বেপারী জানান, একসময় এই নদীই ছিল আমাদের ব্যবসায়ের প্রধান পথ। পালতোলা নৌকা নিয়ে আমরা দূর-দূরান্তে যেতাম ব্যবসার উদ্দেশ্যে। এখন এমন অবস্থা যে, বর্ষা মৌসুমেও নদীতে পানি পাওয়া যায় না। নদী শুকিয়ে গেছে বললেই চলে।

স্থানীয় বাসিন্দা সালমা বেগম জানান, বাচ্চারা আগে নদীতে গোসল করতো, খেলা করতো। এখন নদী দেখে মনে হয় ফেলে রাখা জমি। বর্ষা আসলেও পানি আসে না,শুধু গন্ধ আর মশার উৎপাত। এটা এখন আর নদী নেই,আমাদের জন্য দুঃখের কারণ হয়ে গেছে।

ইছামতী ঔক্য পরিষদ আগ্রাইল- এর সভাপতি টিপু সুলতান বলেন, ইছামতী নদী আমাদের প্রাণ,আমাদের সংস্কৃতি ও জীবনের অংশ। কিন্তু দুঃখজনকভাবে আজ এই নদী অস্তিত্ব সংকটে। আমরা আগেও মানববন্ধন করেছি,বিভিন্ন সময়ে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষকে জানিয়েছি- ইছামতী নদীকে যেন তার আগের জীবন্ত অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হয়।
তিনি আরও বলেন, নদীর ভিতরে জমে থাকা ময়লা- আবর্জনা ও কচুরিপানা দ্রুত পরিষ্কার করতে হবে। নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহতকারী যেসব অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে, সেগুলো অপসারণ করে নদীর স্বাভাবিক গতিপথ পুনরুদ্ধার করতে হবে। নদী রক্ষায় সরকারি, বেসরকারি ও স্থানীয় জনগণের সম্মিলিত উদ্দ্যোগ ছাড়া কোনো স্থায়ী সমাধান সম্ভব না। তাই আমরা সবাই মিলে ইছামতী নদীকে পুনরুজ্জীবিত করতে ঔক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে চাই।

পরিবেশ বান্ধব সংগঠন ‘হরিরামপুর শ্যামল নিসর্গ’-এর সভাপতি ওয়াহিদুর রহমান বলেন,
“ইছামতী নদী শুধু একটি জলধারা নয়, এটি হরিরামপুরের জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। একসময় এই নদীর পানিতে কৃষকের সেচ, জেলের মাছ ধরা আর গ্রামবাসীর জীবন চলত স্বাভাবিক ছন্দে। আজ তা হারিয়ে যেতে বসেছে মানুষের অবহেলা,ও অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণের কারণে।আমরা ‘শ্যামল নিসর্গ’ দীর্ঘদিন ধরে পরিবেশ ও নদী রক্ষায় কাজ করে আসছি। ইছামতী নদীর প্রাণ ফিরিয়ে আনতে দরকার সবার সম্মিলিত উদ্যোগ। প্রশাসন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, পরিবেশবাদী সংগঠন ও সাধারণ মানুষকে একসাথে এগিয়ে আসতে হবে।

মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ আক্তারুজ্জামান বলেন, ইছামতী নদী পূর্নখননের মাধ্যমে পানি প্রবাহ বৃদ্ধি ও ভাঙ্গন প্রতিরোধে ঘিওর ও দৌলতপুর উপজেলায় প্রকল্প গ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসক সম্মেলন ২০২৫- এ সিদ্ধান্ত হয়েছে । সিদ্ধান্তের আলোকে প্রকল্প গ্রহণের জন্য কারিগরি কমিটি গঠনের জন্য প্রস্তাবনা বাপাউবোর উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট প্রেরণ করা হয়েছে ।তাছাড়া মাঠ পর্যায়ে জরিপ কাজ চলমান রয়েছে।আর বিলে পানি প্রবেশসহ হরিরামপুর উপজেলার অংশে ইছামতী নদীর পানি প্রবাহ স্বাভাবিক করতে সমীক্ষা কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন

2025 © জনপদ সংবাদ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

প্রয়োজনে যোগাযোগঃ ০১৭১২-০৬৮৯৫৩