সোমবার, ১২ মে ২০২৫, ০৭:৪৬ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনামঃ
আ. লীগ নিষিদ্ধ করায় বিশ্ব বিলাপ করবে, এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়: প্রেস সচিব পরিবর্তনের মানসিকতা নিয়ে চিকিৎসাসেবায় আত্মনিয়োগ করুন: প্রধান উপদেষ্টা ৫ আগস্ট গুলিবিদ্ধ তরুণ সালমানের পাশে তারেক রহমান রাজাপুরে ১২ কোটি টাকা হাতিয়ে এনজিও মালিকদের আত্মগোপন, শতাধিক গ্রাহকের মানববন্ধন ও বিক্ষোভ চোখে জল, মনে ভালোবাসা—মা দিবসে মাভাবিপ্রবি হয়ে উঠল ভালোবাসার বর্ণমালা কুড়িগ্রামের উলিপুরে ইয়াবা ও হিরোইন সহ এক মাদক কারবারি আটক আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট সব পেজ বন্ধে চিঠি দেবে বিটিআরসি আওয়ামী লীগের নিবন্ধন দ্রুত বাতিল করতে হবে, ইসিকে (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম কক্সবাজারের মরিয়ম বেগমের গর্ভে জন্ম নিল ৬ নবজাতক কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র নদে গোসল করতে নেমে দুই সহোদর ভাই নিখোঁজ মাভাবিপ্রবি শিক্ষার্থীর উপর হামলা,আসামি গ্রেপ্তারে পুলিশকে ৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের খবরে ইবিতে বিজয়ের উল্লাস কুড়িগ্রামে সরকারি ভাবে ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু,ধানের কেজি ৩৬ চাউল ৪৯ টাকা ভারতের ১২টি ড্রোন ভূপাতিতের দাবি পাকিস্তানের ডিমের খাঁচায় বিশেষ কৌশলে গাঁজা পাচার: গ্রেপ্তার ২

চোখে জল, মনে ভালোবাসা—মা দিবসে মাভাবিপ্রবি হয়ে উঠল ভালোবাসার বর্ণমালা

মো জিসান রহমান, মাভাবিপ্রবি:

টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে মা দিবস, যেন এক নিঃসঙ্গ দিন—যতটুকু ভালোবাসা ছিল, তা শুধুই স্মৃতিতে রয়ে যায়।আজ মা দিবস। বিশ্বজুড়ে সন্তানরা নানা উপায়ে মাকে ভালোবাসা জানাচ্ছে, সময় কাটাচ্ছে মায়ের সঙ্গে। কিন্তু মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক শিক্ষার্থীদের কাছে দিনটা যেন একটু অন্যরকম। এখানকার শিক্ষার্থীদের অনেকেই পরিবার থেকে বহু দূরে। সকালটা শুরু হয়েছে অন্যান্য দিনের মতোই—ক্লাস, ল্যাব, অ্যাসাইনমেন্ট কিংবা ক্লাস টেস্ট নিয়ে ব্যস্ততায়। কিন্তু হৃদয়ের ভেতরে আজ যেন এক অদ্ভুত শূন্যতা, নিঃশব্দে একরাশ মায়া।

মা দিবসে অনেকেই খুব সকালেই ফোন করেছে বাড়িতে। মায়ের গলা শোনার পর কেউ হেসেছে, কেউ কেঁদেছে—কেউবা বারান্দায় চুপ করে দাঁড়িয়ে থেকেছে অনেকক্ষণ, যেন মায়ের উপস্থিতি অনুভব করার চেষ্টা করছে। এমনকি কিছু ডিপার্টমেন্টে শিক্ষার্থীরা একসাথে বসে নিজেদের অনুভূতি ভাগাভাগি করেছে, মাকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেছে। কেউ লিখেছে ফেসবুকে ছোট্ট আবেগঘন পোস্ট, কেউ পাঠিয়েছে মায়ের জন্য একটি কবিতা।
কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ইমরান হোসেন(নাদভী) বলেন,“আজ মা দিবস। তবে আমার কাছে মা কোনো দিবসের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। মা-ছেলের সম্পর্ক, ভালোবাসা, মায়া, মমতা—এগুলো প্রতিটি মুহূর্তেই বর্তমান।
মা হচ্ছেন ভরসার আরেক নাম। পড়াশোনার কারণে টাঙ্গাইলে থাকি, প্রতিদিনই মায়ের অভাবটা অনুভব করি—মায়ের হাতের রান্না, সকালে ঘুম থেকে তোলার ডাকটা খুব মিস করি। বাসায় থাকলে মা না ডাকলে দুপুর ১২টাও বাজে, কারণ মায়ের ডাকের ভরসাতেই ঘুমাই।
মা এমন এক জাতি, যিনি সন্তানের জন্য নিঃস্বার্থ। তাঁর ঋণ কোনো সন্তানই শোধ করতে পারে না। আমি যদি আমার শরীরের চামড়া দিয়ে জুতা বানিয়ে দিই, আর মা তা পরে হাজার বছর হাঁটেন—তবুও এক ফোঁটা দুধের ঋণ শোধ হবে না।
মায়ের কাছ থেকে ধার নিলে মা হাসতে হাসতে দেন, আমি কখনো শোধ করতে পারি, আবার অনেক সময় পারি না।
ঝড়ে যাওয়া পাতাগুলো কি
হেমন্তের ঋণ শোধ করতে পারে কখনো?
মায়ের ঋণ কি কোনোদিন শোধ করা সম্ভব?
মা দিবসের বিশেষ শুভেচ্ছা নয়, শুধু একটাই দোয়া—সব মা যেন ভালো থাকেন, সুস্থ থাকেন।
“রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বায়ানী সাগীরা।”
অর্থনীতি বিভাগের ফারিয়া ইমরোজ বলেন:
ছোটবেলায় ভাবতাম, মা-বাবা আর চারপাশের কিছু মানুষজন—এই বুঝি জীবনাঙ্গন। কিন্তু না, একটু বড় হতে হতে যখন পা রাখলাম বাড়ির সীমানা ছাড়িয়ে বাইরের বিস্তৃত প্রান্তে, তখন ছোটবেলার সেই ধারণাকে ভুল প্রমাণ করে দিয়ে পৃথিবী আমার সামনে তুলে ধরল তার চিরন্তনতা। যেখানে মা ছাড়া সবকিছুই অসম্পূর্ণ লাগে। আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রান্তে দাঁড়িয়েও নিজেকে নির্ভরহীন লাগে শুধুমাত্র “মা”কে ছাড়া।
দিনের শেষে মায়ের সঙ্গে যখন একটু কথা হয়, তখন নিজেকে সর্বসুখী মনে হয়। পৃথিবীতে একমাত্র ব্যক্তি এই ‘মা’, যার সঙ্গে সব রাগ ঝাড়লেও উল্টো রাগ দেখানো—এটা যেন মায়ের পক্ষে অসম্ভব ব্যাপার। কেন জানি না, মা এতো ভালো হয়!
জানি, বছরে এই একদিন শুধু একটু ভালোবাসা দেখালেই মায়ের ঋণ শোধ হবে না, সম্ভবও নয়। তবুও আজকের মা দিবসে সকল মায়ের জন্য রইল অসীম ভালোবাসা। আমাদের প্রত্যেকের ভালোবাসার প্রথম স্থানটা শুধুই মায়ের জন্যই বরাদ্দ থাকুক!
হিসাববিজ্ঞান বিভাগের সুবর্ণ স্বর্ণা বলেন:
“এটি একটি খুবই আবেগপূর্ণ অনুভূতি। মা দিবস একটি বিশেষ দিন, যেদিন আমরা আমাদের মায়েদের প্রতি শ্রদ্ধা, ভালোবাসা এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি। কিন্তু ক্যাম্পাসে থাকার কারণে মাকে কাছে না পাওয়ার যে তীব্র অনুভূতি—তা কেবল দূরে থাকা সন্তানরাই বোঝে। তবুও দূর থেকেই বলি, ‘অনেক ভালোবাসি মা।’
শুভ মা দিবস!”
ফুড টেকনোলজি অ্যান্ড নিউট্রিশনাল সায়েন্স বিভাগের সমাপ্তী খান বলেন,
“মাকে নিয়ে আসলে যেভাবে কিছু বলা যায় না। মাকে কতটা ভালোবাসি, সেটাও বলা হয় না—কারণ এই ভালোবাসাটা কোনো শব্দের মাধ্যমেই পুরোপুরি প্রকাশ করা সম্ভব নয়। বড় হয়েছি, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছি, কিন্তু মায়ের কাছে এখনো সেই ছোট্ট মেয়েটাই আছি। নিজে সব করতে পারি, কিন্তু কোনো কিছুই মার মতো সুন্দর হয় না। মা ছাড়া সবকিছুই অপূর্ণ লাগে। মাঝে মাঝেই ভাবি, ‘মা না থাকলে কী হতো!’ মা দিবসে একটা কথাই বলব— ‘ভালোবাসি, আম্মা।’”
ফুড টেকনোলজি অ্যান্ড নিউট্রিশনাল সায়েন্স বিভাগের মো আবু রায়হান শিকদার বলেন,
“মা দিবসে সকল মায়ের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা।
মা, মা, মা!!
তুমি আছো বলেই পৃথিবীটা গোছানো মনে হয়। তোমার আঁচলটাই আমার একমাত্র নিরাপদ আশ্রয়। পৃথিবীর সবচেয়ে সুখকর মুহূর্ত তোমার মুখের মৃদু হাসি।
ছোটবেলায় ফুটবল খেলতে গিয়ে যখন হাত ভেঙেছিল, তখন তোমার অগোছালো কান্না প্রথমবার দেখেছিলাম। শেষ রাতে ঘুম ভেঙে দেখতাম—তুমি একরাশ দুশ্চিন্তা নিয়ে পাশে শুয়ে আছো।
মা, যখন কোনো বিপদে পড়ি, তখন তোমার সান্ত্বনাই সবচেয়ে বড় সাহস। আর যখন বলো, ‘তুমি পারবে রায়হান’, তখন সত্যিই বিশ্বাস হয়—আমি পারব।
তোমার সেই নির্ভরতা, বিশ্বাস আর নিঃশব্দ ত্যাগেই আমি আজকের আমি।
সবচেয়ে বড় চাওয়া—দিন শেষে যেন তোমার মুখে শুনতে পাই,
‘আমার আদরের কালো মানিক আসছে, আমার আর কোনো অভিযোগ নেই।’
শুধু এটাই চাই, তুমি ভালো থেকো মা, সুস্থ থেকো।
শুভ মা দিবস, মা!”
ক্যাম্পাসে থাকা শিক্ষার্থীদের অনেকেই জানায়, মা দিবসে তারা নতুন করে উপলব্ধি করে, মায়ের ভালোবাসার কোনো বিকল্প নেই। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের ব্যস্ততা মাঝে মাঝে মাকে সময় না দেওয়ার উপলক্ষ তৈরি করলেও, এই একটি দিন মনে করিয়ে দেয়—সবকিছুর ওপরে একজনই, তিনি মা।
আজ মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আকাশে যেমন ছায়া-মেঘের আনাগোনা, তেমনি শিক্ষার্থীদের মনেও চলছে স্মৃতির হালকা ঝড়। কিন্তু সব অনুভূতির কেন্দ্রে শুধুই একজন—মা।

সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন

2025 © জনপদ সংবাদ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

প্রয়োজনে যোগাযোগঃ ০১৭১৫-১২৫২৪৩