বুধবার, ০৯ Jul ২০২৫, ০২:৪৬ পূর্বাহ্ন
মোস্তাফিজুর রহমান আকাশ, ঠাকুরগাঁওঃ
লোহার খাঁচাদিয়ে বানানো ঠেলা গাড়িতে ১৩ মাস বয়সী তিন শিশুকে নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছে এক নারী। খাঁচার পাশে তার সাথেই হাটছে সাড়ে ৩ বছর বয়সী আরও একটি শিশু। এমনি এক দৃশ্যের দেখা মিলেছে ঠাকুরগাঁওয়ে।
জানাগেছে, ১৩ মাস বয়সী তিন জমজ শিশু আব্দুল্লাহ, আমেনা ও আয়শা। সেইসাথে সাড়ে ৩ বছর বয়সি মরিয়ম সহ ৪ শিশু সন্তানের জননী জান্নাত বেগম। বছর পাঁচেক আগে ঢাকায় বিয়ে হয় হাবিল নামক এক লোকের সাথে। প্রেমের পরে বিয়ে করে ঠাকুরগাঁও আসে ময়মনসিংহের মেয়ে এই জান্নাত।
তবে প্রথমে এক কন্যা সন্তান ও পরে একই সাথে দুই কন্যা ও এক পুত্র সন্তানকে জন্মদানের কিছুদিন পরেই জান্নাতকে ছেড়ে চলে যায় হাবিল। এর পর থেকেই ৪ শিশু সন্তানকে নিয়ে বিপাকে পরেন অল্প বয়সী সংগ্রামী মা জান্নাত। অল্প বয়সী চার শিশুকে রেখে কোথাও কাজ করে উপার্জনের উপায় পাচ্ছিলেন না এই নারী। তবে যেভাবেই হোক সন্তানদের খুধা নিবারন করতে এক অভিনব উপায় খুজে বের করেন এই অসহায় মা।
তিনি কামারের দোকানে চাকা লাগানো একটি লোহার খাচা তৈরী করান। সেই খাচার ভিতরে ১৩ মাসের তিন শিশুকে নিয়ে এবং সাথে সাড়ে ৩ বছরে আরেক শিশুকে সাথে বেরিয়ে জান ভিক্ষা করতে।
জান্নাত বেগম জানান, বিভিন্ন সময় অনেকেই তার সন্তানদের কিনে নিতে লাখ লাখ টাকার প্রস্তাব দিয়েছে। তবে সন্তানের প্রতি মায়া হার মেনেছে টাকার লোভের কাছে।
জান্নাত বলেন, আমি সাহায্য তুলে দিনযাপন করছি। যা আপমার জন্যে অবশ্যই লজ্জার। তবে এ ছাড়া আমার কোনো উপায় নেই। বিভিন্ন সময় বাসাবাড়িতে কাজের প্রস্তাব পেয়েছি, কিন্তু ছোটো ছোটো ৪ শিশু বাচ্চাদের কার কাছে রেখে কাজে যাবো? তাই আমার পক্ষে কোথাও কাজ করার আর সুযোগ হয়নি। উপায় না পেয়ে ৭ হাজার খরচ করে এই চাকা সহ খাঁচার গাড়িটি বানিয়েছি। সন্তানদের এই খাঁচায় করে নিয়েই এখন আমি রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে সাহায্য তুলি। তবে এভাবে ঘুরে আসি খুব বেশি পরিমাণে অর্থ উপার্জন করতে পারিনা৷ তাই আমার সন্তানদের যথাযোগ্য পুষ্টিকর খাবার কবনে দিতে পারিনা৷ অনেক সময় তারা পেট ভরে খাবারও পায়না।
জান্নাতের প্রতিবেশীরা প্রায়শই তার এই কষ্টের জীবন দেখে আফসোস করে। অনেক সময় তারা জান্নাতের সন্তানদের ক্ষুধায় জ্বালায় কান্নাকাটি করতেও দেখে। সেসময় কিছু প্রতিবেশী সাহায্যে এগিয়ে যায়।
এই বিষয়ে কথা হয় তার প্রতিবেশীদের সাথে। জান্নাতের প্রতিবেশী রোকসানা পারভীন জানান, যে কোনো নারীর পক্ষে এত ছোটো ছোটো ৪টি বাচ্চা লালন পালন করা বেশ কষ্টকর। কিন্তু সেখানে এই নারী বাচ্চাদের লালন পালনের পাশাপাশি উপার্জনের দায়িত্ব নিতে হচ্ছে। এই নারীকে দেখলেই বোঝা যায় একটা মানুষের অসহায় হতে পারে।
আরেক প্রতিবেশী শারমিন হাসান বলেন, অনেক সময় তার বাচ্চাদের কান্নার শব্দ শুনলে খুবই খারাপ লাগে। এত ছোটো ছোটো বাচ্চা, কোনো পুষ্টিকর খাবার পাচ্ছেনা। অনেক সময় পেট ভরে খাবারও পায়না। বিত্তশালীরা কত কত জায়গায় সাহায্য সহযোগিতা করে থাকে। কিন্তু এই নারীকে সেভাবে কেউ সাহায্যে এগিয়ে আসেনি।
এই বিষয়ে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা খায়রুল ইসলাম বলেন, বিষয়টা জানা ছিলোনা। আমি দ্রুতই এর খোঁজখবর নিবো। পরিস্থিতি বিবেচনায় ঠাকুরগাঁও প্রশাসন যতটা সম্ভব তার পাশে দাড়ানোর চেষ্টা করবে।
2025 © জনপদ সংবাদ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
প্রয়োজনে যোগাযোগঃ ০১৭১২-০৬৮৯৫৩