মো: জিসান রহমান, মাভাবিপ্রবি:
আজ ২৪ মে, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৬তম জন্মবার্ষিকী। “বিদ্রোহী কবি” নামে পরিচিত এই কালজয়ী ব্যক্তিত্ব ১৮৯৯ সালের এই দিনে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাংলা সাহিত্য, সংগীত ও সংস্কৃতিতে তাঁর অসামান্য অবদান আজও বাঙালির চেতনায় দীপ্তমান।
শৈশব ও শিক্ষা জীবন:
নজরুল ইসলামের জন্ম এক সাধারণ মুসলিম পরিবারে। ছোটবেলায় পিতৃবিয়োগের পর সংসারের দায়িত্ব নিতে তিনি বিভিন্ন কাজ করেন, যার মধ্যে স্থানীয় লেটো গানের দলে অংশগ্রহণও ছিল। প্রাথমিকভাবে তিনি মক্তবে ইসলাম ধর্ম, আরবি ও ফারসি পড়েন। পরে হিন্দু ধর্ম ও সংস্কৃত শিক্ষারও সুযোগ পান। আর্থিক সঙ্কটের কারণে তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক উচ্চশিক্ষা পূর্ণতা পায়নি, কিন্তু তিনি স্বশিক্ষায় নিজেকে গড়ে তোলেন।
সামরিক জীবন ও সাহিত্যিক উত্থান:
১৯১৭ সালে নজরুল ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দেন এবং ৪৯তম বেঙ্গল রেজিমেন্টে কর্মরত ছিলেন। এই সময়েই তিনি লেখালেখি চালিয়ে যান। ১৯২০ সালে সেনাবাহিনী ত্যাগ করে তিনি কলকাতায় এসে সাহিত্য, সাংবাদিকতা ও সংগীতজগতে আত্মনিয়োগ করেন। ১৯২২ সালে প্রকাশিত বিদ্রোহী কবিতা তাঁকে বিপ্লবী কণ্ঠস্বর হিসেবে পরিচিতি দেয়।
সাহিত্য ও সংগীতে অবদান:
কাজী নজরুল ছিলেন একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, সাংবাদিক ও গীতিকার। তিনি চার হাজারেরও বেশি গান রচনা ও সুরারোপ করেছেন, যা নজরুলগীতি নামে পরিচিত। তাঁর গান ও কবিতায় ভালোবাসা, ধর্মীয় সম্প্রীতি, বিপ্লব এবং মানবতার বার্তা ছিল স্পষ্ট। তিনি হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের পক্ষে উচ্চকণ্ঠ ছিলেন।
উপাধি ও সম্মাননা:
তাঁর বিদ্রোহী মনোভাবের কারণে তিনি “বিদ্রোহী কবি” নামে পরিচিত হন। ১৯৪৫ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে “জগততারিণী স্বর্ণপদক” প্রদান করে। ১৯৭৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সম্মানসূচক “ডক্টর অব লিটারেচার (ডি.লিট.)” ডিগ্রি প্রদান করে। স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭২ সালে তাঁকে “জাতীয় কবি” হিসেবে রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। ভারত সরকার প্রস্তাবিত “পদ্মভূষণ” পুরস্কার তিনি বিনয়ের সাথে প্রত্যাখ্যান করেন।
শেষ জীবন ও মৃত্যু:
১৯৪২ সালে নজরুল একটি দুরারোগ্য স্নায়বিক রোগে আক্রান্ত হন, যার ফলে তিনি বাকশক্তি হারান। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ সরকার তাঁকে রাষ্ট্রীয়ভাবে ঢাকায় নিয়ে আসে এবং বিশেষ সন্মানে ভূষিত করে। ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তাঁকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে সমাহিত করা হয়।
সারাদেশব্যাপী উদযাপন:
জাতীয় কবির জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ দেশব্যাপী বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও শ্রদ্ধানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠিত হচ্ছে আলোচনা সভা, কবিতা পাঠ, সংগীতানুষ্ঠান ও প্রদর্শনী।