রবিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৫, ০৭:২১ অপরাহ্ন
মোঃ রাশেদুল ইসলাম, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:
কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার শিলখুড়ি ইউনিয়নের উত্তর ছাট গোপালপুর গ্রামের গৃহহীন শহিদুল ইসলামের এখন আর মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই। দুই শিশু সন্তান, অসুস্থ বৃদ্ধ মা ও স্ত্রীকে নিয়ে খোলা আকাশের নিচে রাত্রিযাপন করছেন তিনি। চরম মানবেতর জীবন যাপন করছেন এ পরিবারটি।
জানা গেছে, শহিদুল একসময় শিলখুড়ি ইউনিয়ন ভূমি অফিসে চুক্তিভিত্তিক ঝাড়ুদারের কাজ করতেন। অন্যের জমিতে একটি ছোট্ট ঝুপড়ি ঘরে পরিবারসহ বসবাস করতেন। মা অসুস্থ হয়ে পড়লে কাজ ও ঘর ছেড়ে চিকিৎসার জন্য ঢাকা চলে যান। কিছুদিন পর এলাকায় ফিরে এসে দেখেন, তার বসবাসের জায়গাটি জমির মালিক অন্য কাজে ব্যবহার করছেন। ফলে শহিদুল পরিবারসহ গৃহহীন হয়ে পড়েন।
এরপর থেকে প্রায় ১১ মাস ধরে বিভিন্ন দোকানের বারান্দা ও বাজার এলাকার খোলা জায়গায় রাত কাটান তারা। সম্প্রতি উপজেলা পরিষদের পুরাতন ভবনের বারান্দায় আশ্রয় নিলে পরিচ্ছন্ন কর্মীরা তাদের জিনিসপত্র থানায় জমা দিয়ে সরিয়ে দেন। এতে হতভম্ব হয়ে পড়েন শহিদুল।
অবশেষে শুক্রবার (৭ নভেম্বর) রাতে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের পাশে খোলা আকাশের নিচে দুই শিশু সন্তান ও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে রাত্রিযাপন শুরু করেন তিনি। বিষয়টি জানাজানি হলে স্থানীয় লোকজনের ভিড় জমে যায়।
শহিদুলের মা ছকিনা বেওয়া (৬২) বলেন, “বাবাগো, আমাদের আর কোনো ঘরবাড়ি নাই। অনেক দিন ধইরা ছোট দুইডা নাতি আর ছেলের বউ নিয়া বারান্দায় ঘুমাইতাছি। বৃহস্পতিবার দারোয়ান আমাগো জিনিসপত্র থানায় দিয়া তাড়ায় দিছে। এখন এই ঠান্ডায় কই যামু?”
শহিদুল ইসলাম বলেন, “নিজের জায়গা না থাকায় কবরস্থানের পাশে একসময় থাকতাম। পরে একজন মানুষ দয়া করে পরিত্যক্ত জায়গায় থাকতে দেয়। এখন সেখান থেকেও উচ্ছেদ। সরকারি আশ্রয়ন প্রকল্পে অনেক ঘর নাকি ফাঁকা আছে — যদি একটি ঘর পেতাম, শিশু সন্তানদের নিয়ে অন্তত শান্তিতে ঘুমাতে পারতাম।”
এ বিষয়ে শিলখুড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, “শহিদুলের মা অসুস্থ হয়ে পড়লে সে কাজ ছেড়ে ঢাকায় চলে যায়। সে আশ্রয়ন প্রকল্পে ঘরে থাকতে চাইলে তার জন্য ব্যবস্থা করা হবে।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপ জন মিত্র বলেন, “শহিদুল যদি আশ্রয়ন প্রকল্পে বসবাসের জন্য আবেদন করে, তাহলে তাকে ঘর প্রদানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
2025 © জনপদ সংবাদ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
প্রয়োজনে যোগাযোগঃ ০১৭১২-০৬৮৯৫৩