মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ০২:৪৭ পূর্বাহ্ন
সুদানের উত্তর দারফুর রাজ্যের একটি ব্যস্ত বাজারে ড্রোন হামলায় অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছেন বলে রোববার উদ্ধারকর্মীরা জানিয়েছেন।
তবে কারা এই হামলা চালিয়েছে, সে সর্ম্পকে কিছু উল্লেখ করা হয়নি।
এই হামলার মধ্যেই দেশের অন্য অংশে লড়াই আরও তীব্র হয়েছে। পরিস্থিতির অবনতির কারণে দক্ষিণের অবরুদ্ধ ও দুর্ভিক্ষকবলিত শহর কাদুগলি থেকে রোববার মানবিক সহায়তা কর্মীদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানের সেনাবাহিনী ও আধাসামরিক রযাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ)-এর মধ্যে চলমান সংঘাতে এ পর্যন্ত কয়েক দশ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে এবং প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন, আর এর ফলে সৃষ্টি হয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বাস্তুচ্যুতি ও খাদ্য সংকট।
উত্তর দারফুর এমার্জেন্সি রুমস কাউন্সিল সুদান জুড়ে সহায়তা সমন্বয়কারী শতাধিক স্বেচ্ছাসেবী গোষ্ঠীর একটি।
কাউন্সিল জানিয়েছে, শনিবার আরএসএফ-নিয়ন্ত্রিত মালহা শহরের আল-হাররা বাজারে ড্রোন হামলা হয়। এতে ১০ জন নিহত হয়।
কাউন্সিলটি আরও জানায়, হামলায় দোকানপাটে আগুন ধরে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
তবে করা এই হামলা চালিয়েছে, তাদের নাম তারা প্রকাশ করেনি।
এ বিষয়ে সুদানের সেনাবাহিনী কিংবা আরএসএফ, কোনো পক্ষই তাৎক্ষণিকভাবে কোন মন্তব্য করেনি।
খবর বার্তা সংস্থা এএফপি’র।
বর্তমানে যুদ্ধের প্রধান কেন্দ্র দক্ষিণ করদোফান।
রাজ্যের রাজধানী কাদুগলিতে সংঘর্ষ বেড়েছে।
গত সপ্তাহে সেখানে একটি ড্রোন হামলায় শহর ছাড়তে চেষ্টা করা আট জন নিহত হয়।
কাদুগলিতে কাজ করা একটি মানবিক সংস্থার সূত্র এএফপিকে জানায়, নিরাপত্তাজনিত কারণে রোববার শহরটি থেকে সব সহায়তাকর্মীকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
ওই সূত্র আরও জানায়, জাতিসংঘ কাদুগলি থেকে তাদের লজিস্টিকস হাব সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার গ্রহণ করার পর এই পদক্ষেপ আসে।
তবে কর্মীরা কোথায় গেছেন, সূত্রটি তা জানায়নি।
হাম ও রোগের সংকট
যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই কাদুগলি ও আশপাশের ডিলিং শহর আধা-সামরিক বাহিনীর অবরোধে রয়েছে।
গত সপ্তাহে আরএসএফ কাদুগলি-ডিলিং সড়কের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা অঞ্চল ব্রনো এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার দাবি করে।
অক্টোবরে দারফুর অঞ্চলের শেষ সেনা ঘাঁটি এল-ফাশের দখলের পর আরএসএফ তাদের নজর দিয়েছে সম্পদ সমৃদ্ধ করদোফানে, এই অঞ্চলটি সেনা-নিয়ন্ত্রিত উত্তর ও পূর্বাঞ্চলকে পশ্চিমের আরএসএফ-নিয়ন্ত্রিত দারফুরের সঙ্গে যুক্ত করা একটি কৌশলগত সংযোগস্থল।
দারফুরের মতো করদোফানেও বহু অ-সুদানি আরব জাতিগোষ্ঠীর বসবাস। এল-ফাশের পতনের পর সহিংসতার বড় অংশ জাতিগতভাবে লক্ষ্য ভিত্তিক ছিল বলে জানা গেছে।
করদোফানে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন, আর গত মাসে জাতিসংঘ কাদুগলিতে দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করে। জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) তথ্য মতে, অক্টোবরের শেষ দিক থেকে এ অঞ্চল ছেড়ে পালিয়েছেন ৫০ হাজারের বেশি বেসামরিক মানুষ।
এদিকে এএফপি’র সংগ্রহ করা তথ্য থেকে জানা যায় যে এদের মধ্যে অনেকেই আশপাশের জঙ্গলে খাবার খুঁজে বেঁচে থাকার চেষ্টা করছেন।
চলমান সংঘাতে কার্যত সুদান দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে।
সহিংসতায় বিপর্যস্ত দেশটির উত্তর, পূর্ব ও মধ্যাঞ্চল রয়েছে সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে, আর দারফুরের পাঁচটি রাজ্যের রাজধানীসহ দক্ষিণের কিছু অংশ আরএসএফ ও তাদের মিত্রদের দখলে রয়েছে।
এদিকে, চিকিৎসা সংস্থা ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস (এমএসএফ) রোববার জানায়, দারফুরের চারটি রাজ্যের মধ্যে তিনটিতে হাম রোগ দ্রুত ছড়াচ্ছে।
সংস্থাটি আরও জানিয়েছে, ‘কেন্দ্রীয়, দক্ষিণ ও পশ্চিম দারফুরে প্রতিরোধযোগ্য হাম রোগের প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়ছে। ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর থেকে এমএসএফ দলগুলো ১ হাজার ৩০০টির বেশি রোগীর চিকিৎসা দিয়েছে। টিকা পরিবহন, অনুমোদন ও সমন্বয়ে বিলম্বের কারণে বহু শিশু এই রোগ থেকে সুরক্ষাবিহীন রয়ে যাচ্ছে।’
সূত্রঃ বাসস
2025 © জনপদ সংবাদ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
প্রয়োজনে যোগাযোগঃ ০১৭১২-০৬৮৯৫৩