রবিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৫, ০৬:৪৫ অপরাহ্ন
জাহিদুল ইসলাম জাহিদ, জৈন্তাপুর (সিলেট) প্রতিনিধি:
সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার নয়নাভিরাম ডিবিরহাওড় লাল শাপলা বিল— প্রকৃতিপ্রেমী ও ভ্রমণপিপাসুদের কাছে একটি জনপ্রিয় নাম। প্রতিবছর নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মৌসুমে ফুটে ওঠে হাজারো লাল শাপলা, যা মন কাড়ে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের। কিন্তু চলতি মৌসুমের শুরুতেই দেখা দিয়েছে এক নতুন বিপত্তি— কচুরিপানায় ঢেকে যাচ্ছে এই সৌন্দর্যের রাজ্য।
সরেজমিনে দেখা যায়, ডিবিরহাওড়ের চারটি মূল বিল— ডিবি বিল, কেন্দ্রীবিল, ইয়ামবিল ও হরফকাটা বিল—এর বিশাল অংশজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে কচুরিপানা। মনে হয়, কয়েক দিনের মধ্যেই লাল শাপলার বদলে বিলজুড়ে দেখা যাবে শুধু সবুজ কচুরিপানার সমারোহ।
২০১৪-১৫ সালের দিকে জৈন্তাপুর ফটোগ্রাফি সোসাইটির প্রচেষ্টায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয় এই বিলের মনোরম দৃশ্য। এরপর থেকেই ভ্রমণপিপাসুদের পদচারণায় মুখর হতে শুরু করে ডিবিরহাওড় এলাকা। উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে পর্যটন সুবিধা নিশ্চিত করতে নেয়া হয় নানা পদক্ষেপ— নির্মিত হয় বাঁধ, ওয়াকওয়ে, বিশ্রামাগার, শৌচাগার, এমনকি গঠন করা হয় ‘লাল শাপলা বিল সুরক্ষা কমিটি’।
এছাড়া, আশপাশে রাজা বিজয় সিংহের সমাধিস্থল সংরক্ষণ, বৃক্ষরোপণ ও সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে সবুজ পরিবেশ তৈরির উদ্যোগও নেয়া হয়। বর্তমানে সেই বনায়ন চোখে পড়ার মতো রূপ নিচ্ছে।
তবে সব অর্জন ম্লান করে দিচ্ছে কচুরিপানার দখল। বিশেষ করে ইয়ামবিলের প্রায় ৬৫ শতাংশ এলাকা এখন কচুরিপানায় আচ্ছাদিত। প্রবেশমুখসহ বিভিন্ন অংশে শাপলার দেখা পাওয়া যাচ্ছে না বললেই চলে। গত মৌসুমে যেখানে শাপলার মাঝে সরিষা ফুলের হলুদ আভা পর্যটকদের মুগ্ধ করেছিল, সেই স্থান এখন সম্পূর্ণভাবে কচুরিপানায় ভরপুর
লাল শাপলার টানে পরিবারসহ বেড়াতে আসা ইতালি প্রবাসী মোহাম্মদ শাহ্ নেওয়াজ বলেন, “ভিডিও দেখে আসার পর লাল শাপলা দেখার আগ্রহ ছিল প্রবল। কিন্তু এসে দেখি সাদা ফুল ফুটেছে ভেবে ভুল করেছিলাম— পরে বুঝি এটা কচুরিপানার ফুল! লাল শাপলার বদলে সবুজে ভরা বিল দেখে সত্যিই হতাশ।”
লাল শাপলা বিল সুরক্ষা কমিটির সভাপতি সাইফুল আহমেদ বলেন, “আগে কখনো এত কচুরিপানা দেখা যায়নি। বাজেট ঘাটতির কারণে বিলে নিয়মিত পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা সম্ভব হয়নি। উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে দ্রুত এ বিষয়ে আলোচনা করা হবে।”
অন্যদিকে, জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জর্জ মিত্র চাকমা জানান, “সাম্প্রতিক বৈঠকে কচুরিপানার বিষয়টি কেউ উল্লেখ করেনি। সুরক্ষা কমিটি এ দায়িত্বে থাকলেও তাদের আয়-ব্যয়ের সুনির্দিষ্ট হিসাবও এখনো জমা দেয়নি। দ্রুত সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বৈঠক করে কচুরিপানা অপসারণে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
এক সময়ের লাল শাপলার রাজ্য এখন কচুরিপানায় ঢাকা পড়ে তার নিজস্ব সৌন্দর্য হারাতে বসেছে। স্থানীয় প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপ ও টেকসই সংরক্ষণ উদ্যোগই ফিরিয়ে আনতে পারে ডিবিরহাওড়ের সেই হারানো রূপ
2025 © জনপদ সংবাদ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
প্রয়োজনে যোগাযোগঃ ০১৭১২-০৬৮৯৫৩