শুক্রবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৫, ০৬:২৮ অপরাহ্ন
মেহেরাব হোসেন, শিবচর (মাদারীপুর) প্রতিনিধি:
আশ্বিন পেরিয়ে ক্যালেন্ডারে আজ কার্তিক ২২, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ। গ্রীষ্মের উত্তাপ আর বর্ষার স্যাঁতস্যাঁতে ভাব সরে গিয়ে প্রকৃতি এখন গায় শীতের আগমনী সুর।
ভোরের মাঠে নামে কুয়াশার সাদা চাদর। ধানক্ষেতের সোনালি শীষে ঝুলে থাকে শিশিরবিন্দু—যেন প্রকৃতির চোখে ছোট ছোট মুক্তো। কাশফুলের ঢেউ দুলে ওঠে হিমেল হাওয়ার ছোঁয়ায়। সূর্যের প্রথম আলো কুয়াশার পর্দা সরিয়ে পৃথিবীতে নামতে একটু সময় নেয়। বাতাসে ভেসে আসে পাকা ধানের গন্ধ, যেন প্রকৃতি চুপিসারে জানিয়ে দিচ্ছে—শীত খুব কাছেই।
গ্রামবাংলায় এখন অন্যরকম সকাল। উঠোনে গরম চায়ের ধোঁয়া, খেজুর গাছে বাঁধা রসের হাড়ি, চুলোর আগুনে হাত পোহানো আর ছোটদের খুনসুটি—সব মিলিয়ে এক চিরচেনা উষ্ণতা। শহরেও ছুঁয়ে গেছে ঋতুর ছায়া; কেউ গায়ে জড়িয়ে নিচ্ছে পাতলা চাদর, কেউ আবার শিশিরভেজা পথ ধরে হাঁটছে সকালের সতেজ হাওয়ায়।
প্রকৃতিও নতুন সাজে ব্যস্ত। বরই গাছে ফুটেছে ক্ষুদ্র সাদা ফুল; মৌমাছিরা ছুটছে মধু সংগ্রহে। কৃষকরা ধান কাটার প্রস্তুতিতে ব্যস্ত, মৌচাষিরা প্রস্তুত মধু সংগ্রহের মৌসুমে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বরই ফুলের মধু শীতকালে সর্দি–কাশি প্রতিরোধে কার্যকর, শরীরকে রাখে উষ্ণ ও সতেজ।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চিরন্তন পঙ্ক্তির মতো—
“শিশিরে ভিজিল বকুল-ডালে, জাগে শীতল হাওয়া,
শিউলির গন্ধে ভোরের আকাশ মুগ্ধ করে গাওয়া।”
বাংলার প্রকৃতি যেন আজ সেই কবিতার জীবন্ত প্রতিচ্ছবি। কুয়াশায় মোড়া প্রভাত, শিউলির সুবাস, মৃদু শীতের ছোঁয়া আর ধানের সোনালি হাসি—সব মিলিয়ে বাংলার প্রতিটি কোণে ঘনিয়ে উঠছে শান্তি ও স্নিগ্ধতার এক মনোরম আবেশ।
বাঙালির কাছে শীত মানে শুধু ঋতু নয়, উৎসবের আমেজও বয়ে আনে। পিঠা–পুলি, খেজুরের রস, তাজা সবজি, অতিথি পাখির ডানা মেলানো—সব মিলিয়ে শীত বাঙালির হৃদয়ে জাগায় আনন্দের নতুন ঢেউ।
কার্তিকের মাঝামাঝি এই সময়, আশ্বিনকে বিদায় জানিয়ে বাংলার প্রকৃতি দাঁড়িয়ে আছে হেমন্তের স্নিগ্ধ আলিঙ্গনে। ভোরের কুয়াশা, ধানের সুবাস আর মানুষের মুখে তৃপ্তির হাসি জানান দিচ্ছে—শীত এসেছে দরজায়, নিয়ে এসেছে নতুন দিনের শান্ত সুর ও স্নিগ্ধ সৌরভ।
2025 © জনপদ সংবাদ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
প্রয়োজনে যোগাযোগঃ ০১৭১২-০৬৮৯৫৩