শনিবার, ০১ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:১৪ অপরাহ্ন
চৌদ্দগ্রাম প্রতিনিধি:
পানিতে ডুবে প্রাণ গেল ৩ বছর বয়সী একমাত্র কন্যা আরওয়া’র। খবর শুনে আফ্রিকা প্রবাসী বাবা ওসমান গণি শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে ছুটে এলেন হেলিকপ্টারে। আদরের কন্যাকে শেষবারের মতোন দেখলেন, ছুঁয়ে আদর করলেন। অঝোরে নিজে কাঁদলেন, কাঁদালেন সবাইকে।
শুক্রবার হৃদয়বিদারক এমন দৃশ্যের অবতারণা হয় কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার আলকরা ইউনিয়নের লক্ষীপুর গ্রামে। স্থানীয় গুণবতী স্কুল মাঠে অবতারণ করা হেলিকপ্টার দেখতে উৎসুক জনতার ভিড়ে ছিলনা হৈ-হুল্লোড়, সবাই দেখলেন হেলিকপ্টার থেকে নেমে ক্ষিপ্ত গতিতে এক বাবার ছুটে যাওয়া।
স্থানীয়রা সাংবাদিকে জানায়, বাবা ওসমান গণি বাদল গত ১৫ বছর আফ্রিকা থাকেন। সেখানে গড়ে তুলেছেন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। বিয়ের পর কন্যা আরওয়ার জন্ম হয়। চলতি বছর ছুটিতে এসে ৮ মাস মেয়ের সাথে কাটিয়ে আগস্টে ফিরে যান। বৃহষ্পতিবার দুপুর ১২ ঘটিকায় বাড়ির সামনে পুকুরের পানিতে ডুবে প্রাণ যায় আরওয়ার। একমাত্র কন্যার মৃত্যুর খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক টিকেট কেটে ওসমান গণি দেশে ফিরলেন শুক্রবার সকালে। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে হেলিকপ্টারে ছড়ে সকাল ১০টায় নামলেন এলাকায়। এরপর মেয়েকে দেখলেন, ছুঁলেন, কাঁদলেন এবং জানাজায় অংশ নিয়ে কলিজার টুকরা একমাত্র কন্যাকে দাফন করলেন। এ ঘটনায় এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
দাদা শফিকুর রহমান বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুরে আমি বাড়ি থেকে বের হয়ে একটু দূরে হাঁটতে যাই। হঠাৎ পিছনে তাকিয়ে দেখি, নাতনী আরওয়া আমার পিছু নিয়েছে। আমি তাকে বাড়িমুখী করে দিয়ে আমার গন্তব্যে চলে যাই। কিছুক্ষণ পর বাড়িতে এসে জানতে পারি, আরওয়াকে পাওয়া যাচ্ছে না। আমরা বাড়ির সকলে মিলে সম্ভাব্য সকল স্থানে আরওয়াকে খুঁজতে থাকি। কিন্তু কোথাও তাকে পাওয়া যায়নি, বিকেল বেলার দিকে বাড়ির পাশের একটি পরিত্যক্ত পুুকুরে আরওয়ার লাশ ভেসে উঠে।
শুক্রবার আরওয়ার বাবা সাউথ আফ্রিকা প্রবাসী ওসমান গণি বাদল বলেন, আমি আট মাস আগে ছুটি শেষে সাউথ আফ্রিকা চলে যাই। বৃহস্পতিবার বিকেলে বাড়ি থেকে খবর পাই, আমার মেয়ে আরওয়া পানিতে পড়ে মারা গেছে। তার সবেমাত্র বয়স তিন বছর। দুই মাস আগেও বাড়ি যাওয়ার আগে আরওয়াকে নিয়ে খেলাধুলা করতাম। মেয়েটি ভাঙা ভাঙা শব্দে আমার সাথে কথা বলতো। একমাত্র সন্তানের মৃত্যুর খবর কোন অবস্থাতে মেনে নিতে পারছিলাম না। তাই সিদ্ধান্ত নেই, আমার সন্তানকে দাফন করতে আমি বাড়িতে যাবো। মুহুর্তের মধ্যে টিকেট কেটে বিমানে উঠে পড়ি। শুক্রবার সকালে ঢাকা বিমানবন্দরে এসে পৌছায়। সড়ক পড়ে অনেক সময় লাগবে, তাই তাড়াতাড়ি আসতে হেলিকপ্টার ভাড়া করে গ্রামের বাড়িতে এসে পৌছায়। সন্তান হারানোর বেদনা যে কত কষ্টের, তা বলে বুঝানো যাবে না।
সমান গণির বন্ধু মো: ইস্রাফিল কালবেলা কে বলেন, মেয়েকে শেষ বারের মতোন দেখা ইচ্ছে শুনে আমরা লাশবাহী ফ্রিজিং গাড়িতে আরওয়াকে রাখি। ওসমান গণির ফুফা সাইদুল বলেন, মেয়ে মৃত্যুর খবরটি আমরা বৃহষ্পতিবার দুপুর ১২ ঘটিকায় বাদলকে জানালে পরদিন সকালেই সে এসে হাজির হয়।
2025 © জনপদ সংবাদ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
প্রয়োজনে যোগাযোগঃ ০১৭১২-০৬৮৯৫৩