রবিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:১৮ অপরাহ্ন
রণবীর সরকার, শেরপুর প্রতিনিধি:
আজ ৭ ডিসেম্বর, শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলার পাক হানাদার মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে বীর মুক্তিযোদ্ধারা নিজেদের জীবনকে বাজি রেখে পাক হানাদার বাহিনীকে পরাস্ত করে নালিতাবাড়ীকে হানাদারমুক্ত করেন।
মুক্তিযোদ্ধা ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শেরপুর জেলার সীমান্তবর্তী গুরুত্বপূর্ণ পাহাড়ি জনপদ নালিতাবাড়ীতে টানা দুই দিন দুই রাত সরাসরি যুদ্ধের পর বিজয় অর্জিত হয়। সেই স্মৃতি আজও মানুষের হৃদয়ে ভাস্বর হয়ে আছে।
এদিন পাক হানাদার বাহিনী বর্তমান উপজেলা পরিষদ, রামচন্দ্রকুড়া ফরেস্ট অফিস, হাতিপাগার বিডিআর ক্যাম্প, তিনআনী ও আহাম্মদনগরে শক্তিশালী ক্যাম্প স্থাপন করে মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে লড়াই চালায়।
স্বাধীনতা যুদ্ধের দীর্ঘ ৯ মাসে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পাক হানাদার বাহিনী নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালায়। এতে নারী-পুরুষসহ অসংখ্য মানুষ দেশের স্বাধীনতার জন্য প্রাণ হারান।
টানা দুই দিন দুই রাত গুলিবর্ষণের পর ৬ ডিসেম্বর মিত্রবাহিনীর জঙ্গি বিমান দিয়ে বোমাবর্ষণের পরিকল্পনা করা হয়। তবে জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির কথা বিবেচনা করে সে পরিকল্পনা বাতিল করা হয়।
এদিকে মুক্তিযোদ্ধাদের গোলাবারুদ ফুরিয়ে যাওয়ায় তারা আক্রমণ কিছুটা শিথিল করেন। এই সুযোগে উপজেলা সদরের বিভিন্ন ক্যাম্পে অবস্থানরত আল বদর ও রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা পালিয়ে যায়। সারারাত এলাকায় আর কোনো তৎপরতার শব্দ শোনা যায়নি। আতঙ্কগ্রস্ত এলাকাবাসী অপেক্ষা করতে থাকেন কখন ভোর হবে।
অবশেষে ৭ ডিসেম্বর পূর্বদিগন্তে সূর্যের লাল আভা ফুটে উঠতেই মুক্তিযোদ্ধারা ‘জয় বাংলা, জয় বাংলা’ স্লোগানে মুখরিত করে এলাকায় প্রবেশ করেন। ক্রমেই সেই স্লোগানের আওয়াজ চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। কেটে যায় মানুষের দীর্ঘদিনের ভয় আর শঙ্কা।
মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে আনন্দে মেতে ওঠে সর্বস্তরের মানুষ। মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী এগিয়ে যায় সামনের দিকে, পিছু হটে হানাদার বাহিনী। শত্রুমুক্ত হয় নালিতাবাড়ী। উড়তে থাকে লাল-সবুজের পতাকা। স্বাধীন হয় সোনার বাংলাদেশ।
2025 © জনপদ সংবাদ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
প্রয়োজনে যোগাযোগঃ ০১৭১২-০৬৮৯৫৩