সোমবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৮:১০ অপরাহ্ন
বাঘাইছড়ি, প্রতিনিধিঃ
রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার একমাত্র বালিকা বিদ্যালয় কাচালং বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে শিক্ষার্থীরা এখানে পড়াশোনা করতে আসে। প্রতি বছর পাবলিক পরীক্ষায় বিদ্যালয়ের ফলাফল সন্তোষজনক ও প্রশংসনীয় হয়ে থাকে। বিদ্যালয়টিতে বর্তমানে ১৮ জন শিক্ষক-কর্মচারী এবং ৩৩০ জনেরও বেশি শিক্ষার্থী রয়েছে।
তবে সাম্প্রতিক সময়ে বিদ্যালয়ের একমাত্র যাতায়াতের সড়কটি ডুবে যাওয়ায় পুরো শিক্ষা কার্যক্রমই স্থবির হয়ে পড়েছে। লাল মিয়ার বাড়ি থেকে বিদ্যালয়ের মাঠ পর্যন্ত রাস্তাটি টানা ৭-৮ দিন ধরে পানির নিচে তলিয়ে থাকায় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে যাতায়াত করতে পারছেন না। যার কারণে ১০ম শ্রেণির প্রাক-নির্বাচনী পরীক্ষাও বন্ধ হয়ে গেছে, যা শিক্ষার্থীদের জন্য একটি বড় ধাক্কা।
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোঃ আব্দুল হামিদ বলেন, “এ বিদ্যালয়ে শুধু বাঘাইছড়ি পৌর এলাকা নয়, পুরো উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকেও শিক্ষার্থীরা এখানে পড়াশোনা করছে। প্রতিবছর বর্ষায় লাল মিয়ার বাড়ি থেকে স্কুল মাঠ পর্যন্ত রাস্তাটি হাঁটু থেকে কোমর পর্যন্ত পানিতে ডুবে যায়। এবারে টানা ৭-৮ দিন ধরে রাস্তাটি ডুবে আছে। গত বছরও আমরা বিষয়টি রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদ ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করেছি। কিন্তু এখনও কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ দেখা যায়নি। বিদ্যালয়টি প্রতি বছর প্রায় ৫০ হাজার টাকা পৌর কর পরিশোধ করে। অথচ শিক্ষার্থীরদের জন্য নিরাপদ যাতায়াতের ব্যবস্থা করা হচ্ছে না। এভাবে দীর্ঘদিন চললে শিক্ষার মান ও পরিবেশের চরমভাবে ক্ষতি হবে।”
আরেক সহকারী শিক্ষক লোকবল তালুকদার বলেন, “শিক্ষকরা নিয়মিত স্কুলে আসতে পারছেন না, শিক্ষার্থীরাও আসতে পারছে না। এতে শুধু পাঠদান বন্ধ হচ্ছে না, পরীক্ষাও নেওয়া যাচ্ছে না। শিক্ষার্থীরা বাড়িতে বসে সময় নষ্ট করছে। এভাবে চললে তাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হবে। শুধু পড়াশোনা নয়, মানসিক চাপও বেড়ে যায়। আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।”
দশম শ্রেণির ছাত্রী ভূমিকা চাকমা বলেন, “প্রাক-নির্বাচনী পরীক্ষা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমরা পড়াশোনায় অনেক পিছিয়ে যাচ্ছি। স্কুলে আসা যায় না, বাড়িতে বসে পড়াশোনা করা কঠিন। দ্রুত রাস্তাটি সংস্থার করে উঁচু করা হোক।”
নবম শ্রেণির ছাত্রী নওরীন জাহান রিয়া বলেন, “প্রতিদিন স্কুলে আসা ভয়ঙ্কর হয়ে গেছে। বর্ষাকালে পানি ডিঙিয়ে আসতে গিয়ে ঝুঁকির মুখে পড়তে হয়। এখন পুরো রাস্তা পানির নিচে। এতে পড়াশোনার ক্ষতি ছাড়াও ছাত্রীদের নিরাপত্তা হুমকির মধ্যে রয়েছে।”
সরেজমিনে পরিদর্শন করে বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদ ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে জানানো হয়েছিল এবং সংস্কারের জন্য আবেদনও করা হয়েছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো দপ্তর থেকে দৃশ্যমান উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। এতে বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা বেড়ে গেছে।
সকলের দাবি একটাই— বিদ্যালয়ে প্রবেশের রাস্তাটি লাল মিয়ার বাড়ি থেকে বিদ্যালয় পর্যন্ত কমপক্ষে তিন ফুট উঁচু করে সংস্কার ও পুনঃনির্মাণ করা হোক, যাতে সারা বছর শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারে এবং বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম চালু রাখা সম্ভব হয়।
2025 © জনপদ সংবাদ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
প্রয়োজনে যোগাযোগঃ ০১৭১২-০৬৮৯৫৩