বৃহস্পতিবার, ০৮ মে ২০২৫, ১১:৩৩ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনামঃ
শ্রম বিষয়ক মিডিয়া পুরষ্কার পাওয়ায় সাংবাদিক এমদাদকে গণ সংবর্ধনা শিবগঞ্জে প্রধান শিক্ষকের অপসারণ দাবিতে মানববন্ধন জান্নাতি হত্যা মামলা: মুখোশধারীদের হুমকিতে আইনজীবী আতঙ্কে কুড়িগ্রাম উলিপুরে মসজিদের জায়গা নিয়ে বিরোধ: বৈঠকে সংঘর্ষ, থানায় মামলা ইবির উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগে নবীন বরণ ও প্রবীণ বিদায় অনুষ্ঠিত কৃষ্ণচূড়া ফুলে সাজানো মাভাবিপ্রবি ক্যাম্পাস লালমনিরহাটে গৃহবধূর আত্মহত্যা: অসুস্থতা ও আর্থিক সংকটই কারণ বলে ধারণা ভালুকার পাঁচ তরুণের মানবিক উদ্যোগে গাজায় খাবার পেল ২০০ জন মানুষ চৌদ্দ হাত জায়গায় বসত মিলেনি খোদেজার,থাকেন অন্যের বাড়িতে চৌদ্দগ্রামে মহাসড়কে পাশ থেকে লাশ উদ্ধার ‘সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশে বাতিল হচ্ছে আগের ৯টি ধারা ও ৯০ শতাংশ মামলা’’ শাহজাদপুরে পানির মধ্যে দাঁড়িয়ে সোনাই নদী খননের দাবি কৃষক ও জেলেদের ঐতিহাসিক মহাস্থান মাজার সংলগ্ন বসতি এলাকায় যৌথবাহিনির অভিযান নাটোরের সিংড়ায় চাঁদা আদায়ের সময় গ্রেফতার ১জন ফকিরাপুলে সিটিজি ক্রাইম টিভির, নতুন হেড অফিস উদ্বোধন করেন আজগর আলী মানিক

কৃষ্ণচূড়া ফুলে সাজানো মাভাবিপ্রবি ক্যাম্পাস

মো. জিসান রহমান, মাভাবিপ্রবি:
টাঙ্গাইলে অবস্থিত মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সবুজে ঘেরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অনন্য নিদর্শন। এ ক্যাম্পাসের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে “কৃষ্ণচূড়া লেন” নামে পরিচিত এক অপূর্ব পথ।
২০১৯ সালে ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের একটি ব্যাচের শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে একাডেমিক ভবন-২ পর্যন্ত সড়কজুড়ে কৃষ্ণচূড়া গাছ রোপণ করেন। ধীরে ধীরে গাছগুলো বেড়ে ওঠে এবং প্রতিটি গ্রীষ্মে লাল কৃষ্ণচূড়ার রঙে ভরে ওঠে পুরো সড়কপথ। এই মনোমুগ্ধকর দৃশ্য ক্যাম্পাসজুড়ে এনে দেয় এক স্বর্গীয় আবহ।
শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই নয়, আশপাশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে দূরদূরান্ত থেকে আগত দর্শনার্থীরাও এই লেনে ছুটে আসেন। কেউ ছবি তোলেন, কেউ গল্পে আড্ডায় মেতে ওঠেন, কেউবা নিঃশব্দে উপভোগ করেন প্রকৃতির সৌন্দর্য।
নবীন শিক্ষার্থীদের বরণ করে নেওয়ার ক্ষেত্রেও কৃষ্ণচূড়া লেন আজ এক সাংস্কৃতিক প্রতীক হয়ে উঠেছে। এ লেন যেন ক্যাম্পাসের গর্ব, শিক্ষার্থীদের ভালোবাসা এবং বাইরের মানুষের চোখে মাভাবিপ্রবির এক পরিচিত রূপ।
সাধারণ শিক্ষার্থীরা আরো জানান, কৃষ্ণচূড়ার লেনে নে।
ফুড টেকনোলজি অ্যান্ড নিউট্রিশনাল সাইন্স ডিপার্টমেন্টের সমাপ্তী খান জানান, কৃষ্ণচূড়ালেন মাভাবিপ্রবি ক্যাম্পাসের সবচেয়ে সুন্দরতম রাস্তা। ক্যাম্পাসের বেশির ভাগ যাতায়াতের রাস্তায় গাছপালা নেই, ছায়াও নেই। গ্রীষ্মের প্রখর রোদের দিনে তাই এই সবুজে ঘেরা রাস্তায় যাতায়াত করতে সবাই অত্যন্ত স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। ক্যাম্পাসের হাজারও হাসি-মজা আর বন্ধুত্বের সাক্ষী এই কৃষ্ণচূড়ালেন। গ্রীষ্মে ফোটা কৃষ্ণচূড়া আর লাল সোনালু ফুলের সৌন্দর্য সবার নজর কারে এবং ক্যাম্পাসের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে এক নতুন রূপ দেয়।
হিসাববিজ্ঞান ডিপার্টমেন্টের এস. এম. কারবেল আযীম জানান, মাভাবিপ্রবি সবুজে ঘেরা চিরচেনা ক্যাম্পাসের একটি অনন্য সৌন্দর্যের নাম “কৃষ্ণচূড়া লেন”। গ্রীষ্মকাল এলেই কৃষ্ণচূড়া লেন নতুন রূপ ধারণ করে। কমলা-লাল ফুলে আচ্ছাদিত গাছগুলোর নিচ দিয়ে হেঁটে গেলে মনে হয়, কেউ যেন আকাশ থেকে রঙ ঢেলে দিয়েছে। হালকা বাতাসে যখন কৃষ্ণচূড়ার পাপড়িগুলো ঝরে পড়ে, তখন পথটি রূপ নেয় এক রঙিন চাদরে—যেখানে প্রতিটি পা ফেলার শব্দই যেন এক স্নিগ্ধ ছন্দের সৃষ্টি করে। কৃষ্ণচূড়া লেন শুধু একটি রাস্তা নয়, বরং এটি ছাত্রছাত্রীদের জন্য এক অনুভবের জায়গা—কখনো একাকিত্বের সঙ্গী, কখনো আবার বন্ধুদের হাসি-আড্ডার সাক্ষী। এই পথ ধরে হেঁটে যাওয়ার সময় অনেকেই নিজেদের ভাবনায় হারিয়ে যায়, কেউ কবিতা লেখে, কেউ ছবি তোলে, কেউ হয়তো জীবনের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবনায় মগ্ন থাকে।
ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স ডিপার্টমেন্টের মুহাম্মাদ তকী তাহমিদ ফরহাদ জানান, কৃষ্ণচূড়া লেন ক্যাম্পাসের এক শান্ত, সুন্দর প্রান্ত। গাছের ছায়া আর ফুলের রঙ রাস্তাটিকে করে তোলে প্রাণবন্ত। এটি এখন শুধু চলার পথ নয়—ভালোবাসার, স্মৃতির আর ছবি তোলার জায়গা।
আরও গাছ লাগিয়ে এই সৌন্দর্য বাড়ানো সম্ভব। তবে সবচেয়ে জরুরি, আমরা সবাই সচেতন হই যেন এই লেনের সৌন্দর্য নষ্ট না হয়।
আমার ক্যাম্পাস, আমার গর্ব—আমার দায়িত্ব, একে রক্ষা করা।
অর্থনীতি ডিপার্টমেন্টের ফারিয়া ইমরোজ জানান, গ্রীষ্মের খরতাপে যখন ক্লান্ত প্রকৃতি, ঠিক তখনই কৃষ্ণচূড়া যেন হাজির হয় তার আঁধারে ঢেকে রাখা মাধুর্য নিয়ে। তার লাল-কমলা পত্র-পল্লব যেন দ্বিগুণ বাড়িয়ে দেয় ক্যাম্পাসের মনোহরতা। অবসন্ন সারা বেলা পার করেও যখন কৃষ্ণচূড়ার দিকে তাকাই, মনে হয় যেন এক রঙিন উদ্বুদ্ধতার জন্ম হয় মনের কোণে। ছায়াতলে হাঁটতে গিয়ে মনে আসে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দুঃখগুলো বদলে গিয়ে সুখ হয়ে যায়!
আপাত কার্যকারণ ছাড়াই এই সময়টাতে প্রকৃতি তার রহস্যময় সুন্দর্যে কেড়ে নেয় মানুষের চিত্তকে!
হিসাববিজ্ঞান ডিপার্টমেন্টের সুবর্ণ স্বর্ণা বললেন, কৃষ্ণচূড়া লেন শুধু একটি পথ নয়—এটি প্রকৃতি, শিক্ষা ও আবেগের এক অসাধারণ সংমিশ্রণ। কৃষ্ণচূড়া গাছের লাল রঙের ফুল যখন ফুটে, লেনটি যেন রক্তিম আলোয় ভরে যায়। সেই দৃশ্য শিক্ষার্থীদের মনে জাগায় প্রশান্তি, ভালোবাসা এবং স্মৃতির ঢেউ।
এই লেনের পরিবেশ মানসিক চাপ কমিয়ে আনে, এক ধরনের শান্তির পরশ দেয়। কেউ এখানে হাঁটতে হাঁটতে ভাবেন ভবিষ্যতের স্বপ্ন নিয়ে, আবার কেউ এখানে রেখে যান জীবনের সবচেয়ে সুন্দর মুহূর্তগুলোর ছায়া।
সব মিলিয়ে, কৃষ্ণচূড়া লেন একটি অনুভবের নাম—যেখানে প্রতিটি পা ফেলায় থাকে ভালোবাসা, স্মৃতি আর একটুখানি আবেগ।
অর্থনীতি ডিপার্টমেন্টের অরূপা সরকার বললেন, “একটি বৃষ্টি ভেজা দিন, মেঘলা আকাশ, ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়ছে। আমার পরনে লাল শাড়ি, হাতে কৃষ্ণচূড়া, চুলগুলো এলোমেলো আর ভিজে। কৃষ্ণচূড়া লেনে আলতা পায়ে একা একা হেঁটে চলেছি। হঠাৎ চোখ পড়লো ভার্সিটি পড়ুয়া এক কাপলের দিকে। ছেলেটি তার প্রিয়তমাকে লেনে দাঁড়িয়ে ছবি তুলে দিচ্ছে। কিন্তু ছবি ভালো হচ্ছে না বলে মেয়েটির ভীষণ অভিমান। আমি ছুটে গিয়ে আমার হাতে থাকা ফুলটি দিয়ে মেয়েটিকে বললাম, ‘ঝিম ধরা লেনে যখন পিয়তমা ছবি তুলে, প্রকৃতিও যেন গ্ল্যামার ছড়ায়—কানে বুজে রাখা কৃষ্ণচূড়া ফুলে….’”
সাধারণ শিক্ষার্থীরা আরো জানান, মাভাবিপ্রবির ক্যাম্পাস—এভাবে বিভিন্ন সংগঠন এবং প্রশাসন যদি ক্যাম্পাসের সৌন্দর্যের দিকে নজর দেন, তাহলে মাভাবিপ্রবি ক্যাম্পাস সৌন্দর্যে অপরূপময় হয়ে উঠবে।

সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন

2025 © জনপদ সংবাদ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

প্রয়োজনে যোগাযোগঃ ০১৭১৫-১২৫২৪৩