বৃহস্পতিবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৫, ০৩:৪৯ পূর্বাহ্ন
ইয়াসিন আলী খান, দোয়ারাবাজার (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি:
শারমিন জাহান মিতার ছোটবেলার স্বপ্ন ছিল শিক্ষক হওয়া- জ্ঞান ছড়িয়ে দেওয়া, তরুণ প্রজন্মকে আলোর পথে এগিয়ে নেওয়া। সেই স্বপ্ন আজ বাস্তবে রূপ নিয়েছে দোয়ারাবাজারের সুরমা ইউনিয়নের টিলাগাঁও গ্রামের কৃতি কন্যা শারমিন জাহান মিতা’র জীবনে। ৪৪তম বিসিএসে সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে ইংরেজি প্রভাষক পদে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়ে তিনি কৃতিত্বের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
মিতার এই সাফল্যের খবরে দোয়ারাবাজারের প্রত্যন্ত টিলাগাঁও গ্রামে আনন্দের ঢেউ উঠেছে। পরিবার, শিক্ষক, সহপাঠী ও এলাকাবাসী যেন নিজেদেরই কোনো স্বপ্ন পূরণ হতে দেখছেন তাঁর মাধ্যমে।
শিক্ষাজীবনে একাগ্রতা ও মেধার দুর্লভ সমন্বয়ে এগিয়ে চলা মিতা ২০১১ সালে টেংরাটিলা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, ২০১৩ সালে সরকারি মহিলা কলেজ, সিলেট থেকে এইচএসসি পাস করেন কৃতিত্বের সঙ্গে। পরবর্তীতে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) ইংরেজি বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স উভয় পর্যায়ে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অর্জন করে প্রমাণ করেছেন নিজের যোগ্যতা ও মেধার উৎকর্ষ।
তিনি দোয়ারাবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অবসরপ্রাপ্ত পরিসংখ্যানবিদ আব্দুল মন্নাফ ও উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের পরিবার কল্যাণ সহকারী বেগম ফাতেমা আক্তার দম্পতির জ্যেষ্ঠ কন্যা।
২০২০ সালে পারিবারিক সিদ্ধান্তে তাঁর বিয়ে হয় মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়ার মো. মুহিবুর রহমানের সঙ্গে, যিনি বর্তমানে বাংলাদেশ পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) হিসেবে প্রশিক্ষণরত।
নিজের এই সাফল্য প্রসঙ্গে শারমিন জাহান মিতা আবেগময় কণ্ঠে বলেন- ‘এই অর্জন আমার জীবনের এক বিশেষ অধ্যায়। আল্লাহর অশেষ রহমত, বাবা-মায়ের দোয়া, শিক্ষকদের আন্তরিক দিকনির্দেশনা আর নিজের পরিশ্রম- সবকিছুর ফল এটি। আমি চাই, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মেয়েরাও যেন বড় স্বপ্ন দেখে, সাহস রাখে, আর নিজেদের যোগ্যতায় সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেয়।’
কন্যার সাফল্যে আবেগাপ্লুত পিতা আব্দুল মন্নাফ বলেন- মিতা ছোটবেলা থেকেই অধ্যবসায়ী, আত্মনির্ভরশীল আর দায়িত্বশীল ছিল। তার সাফল্য আমাদের জীবনের সবচেয়ে বড় আনন্দের মুহূর্ত। এই অর্জন শুধু আমাদের পরিবারের নয়, পুরো দোয়ারাবাজারবাসীর গর্ব।’
তাঁর মা বেগম ফাতেমা আক্তার বলেন- আমার মিতা ছোটবেলা থেকেই আলাদা ছিল- খুব মনোযোগী, নিজের কাজ নিজে করতে ভালোবাসত। কখনোই সময় নষ্ট করত না। আজ তার সাফল্যে আমার চোখে পানি আসে, তবে সেটা গর্বের আনন্দের অশ্রু। আমি শুধু আল্লাহর কাছে দোয়া করি— সে যেন সৎ, ন্যায়নিষ্ঠ ও মানবিক শিক্ষক হিসেবে দেশের সন্তানদের আলোর পথে নিয়ে যেতে পারে।’
শারমিন জাহান মিতার এই কৃতিত্ব এখন দোয়ারাবাজার ও সুনামগঞ্জের তরুণ প্রজন্মের কাছে অনুপ্রেরণার প্রতীক। এলাকার মানুষের বিশ্বাস— তিনি ভবিষ্যতে দেশের শিক্ষা অঙ্গনে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে উঠবেন, আলোকিত করবেন সমাজ ও প্রজন্মকে।
2025 © জনপদ সংবাদ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
প্রয়োজনে যোগাযোগঃ ০১৭১২-০৬৮৯৫৩