সোমবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৬:২৯ অপরাহ্ন
আবু বকর সুজন, চৌদ্দগ্রাম কুমিল্লা প্রতিনিধিঃ
দীর্ঘ ৩৬ বছরেরও বেশী সময় কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার কনকাপৈত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন সাজেদা আকতার।
৩০ নভেম্বর ছিল তার শিক্ষকতা জীবনের শেষ কর্মদিবস। এদিন প্রিয় শিক্ষককে অবসর জনিত বিদায় সংবর্ধনা দিয়েছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও বর্তমান-প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা।
১৯৮৯ সালে নিজের শিক্ষকতা জীবন শুরু করেন সাজেদা আকতার। শুরুতে অন্য একটি বিদ্যালয়ে কিছুদিন শিক্ষকতা করলেও এর পরের বছরই বদলি হয়ে আসেন কনকাপৈত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এরপর একে একে কেটে গেছে প্রায় ৩৬ বছর। শিক্ষকতা জীবনের শেষ কর্মদিবসে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তার সহকর্মীদের পাশাপাশি উপস্থিত হন বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা। প্রিয় শিক্ষককে অশ্রুসজল নয়নে বিদায় দেন তারা। সৃষ্টি হয় এক আবেগঘন পরিবেশের।
পবিত্র কোরআন তেলওয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। এরপর বিদায়ী শিক্ষককের উদ্দেশ্যে মানপত্র পাঠ করেন চতুর্থ শ্রেণীর এক শিক্ষার্থী ।
তার হাতে তুলে দেয়া হয় বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের পক্ষ থেকে এবং সাবেক শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে অসংখ্য পুরস্কার প্রাইস মানি ও সম্মানসূচক ক্রেস্ট। শিক্ষাগুরুকে পুষ্পমাল্য পরিয়ে ফুল দিয়ে সাজানো গাড়িতে করে বাড়ি পৌঁছে দেন তার শিষ্যরা।
উপস্থিত অতিথি বিন্দুরা তাদের বক্তব্যে বলেন, শিক্ষকরা এদেশের সম্পদ, তারাই সোনার মানুষ গড়ার কারিগর। তার অনুপস্থিতিতে এ বিদ্যালয় তার শুন্যতা অনুভব করবে। সবকিছুরই শেষ আছে, না চাইলেও একদিন ঠিকই বিদায় বলতে হয়। আমরা তার অবসর জীবনের মঙ্গল কামনা করি। আর এ ধরণের অনুষ্ঠানের আয়োজন করায় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ সকলকে ধন্যবাদ জানাই।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পলাশ ভট্টাচার্য বলেন, আজ সত্যিই আমাদের জন্য বেদনার দিন, মন খারাপের দিন। সহকর্মী হিসেবে তার কাছে অনেক কিছু শিখেছি, অনেক সহযোগিতা পেয়েছি। তার ন্যায়পরায়নতা, কর্মদক্ষতা, সততা ও সময়ানুবর্তিতা আমাদের অনুপ্রেরণা যোগাবে। ৩৬ টি ব্যাচের শিক্ষার্থীদের তিনি নিজে তৈরি করেছেন যাদের অনেকে দেশসেরা বিদ্যাপীঠে অধ্যয়ন করে দেশকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
বিদায় সংবর্ধিত শিক্ষিকা সাজেদা আকতার বলেন, আজ আমার শিক্ষকতা জীবনের শেষ কর্মদিবস। অনেক কথা বলার ছিল। আমার শিক্ষকতা সময়ে তোমাদেরকে অনেক বেত্যাঘাত করছি ভালোর জন্য। আমার কর্মজিবনে ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
প্রাক্তন শিক্ষার্থী মোহাম্মদ রহিত বলেন, ‘স্যার ক্লাসে পড়াশোনা সুন্দর করে বোঝাতেন। স্কুল পরিষ্কার রাখতেন। শুধু পড়াশোনা নয়; বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে উদ্বুদ্ধ করতেন তিনি। স্যারের বাকিটা জীবন সুস্থতায় কাটুক, এই কামনা করি।’
বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র আনাফ বলেন ‘স্যার আমাদের সন্তানের মতো দেখেন। কোনো কারণে স্কুলে আসতে না পারলে বাড়িতে যেয়ে খোঁজখবর নিতেন।’
রবিবার (৩০ নভেম্বর )বিকালে বিদ্যালয় হল রুমে আয়োজিত বিদায় সংবধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আবদুল কুদ্দুস প্রধান।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ওবায়েদুল হক লিটনের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি বক্তব্য রাখেন উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আবু বকর মোহাম্মদ ছিদ্দিকী ,সাবেক শিক্ষিকা হাফছা আকতার ,সহকারী শিক্ষক নাছির উদ্দীন পাটোয়ারী ,জাহিদুল আলম শামিম ,সাবেক ছাত্র মোহামমদ রিগ্যান ,মোহাম্মদ রহিত প্রমুখ।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, ডাঃ জয়নাল আবদিন শিমুল ,উপজেলা প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি মিজানুর রহমান, করপাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান ,সহকারী শিক্ষক সৈয়দা জান্নাতুল ফেরদৌস ,সানজিদা ফারভিন, স্হানীয় ইউপি সদস্য মুজিবুর রহমান।
2025 © জনপদ সংবাদ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
প্রয়োজনে যোগাযোগঃ ০১৭১২-০৬৮৯৫৩