সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ০৪:৪৮ পূর্বাহ্ন
আমির ফায়সাল, জাবি প্রতিনিধি:
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) আন্তর্জাতিক সম্পর্ক (আইআর) বিভাগের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের প্রতি অন্যায্য আচরণ, রাজনৈতিক ট্যাগ দিয়ে অপমান, খাতার অবমূল্যায়ন এবং মানসিক হয়রানির অভিযোগ তুলেছেন চতুর্থ বর্ষের এক শিক্ষার্থী।
ভুক্তভোগীর দাবি, শুধু তিনি নন, একই ব্যাচ ও অন্যান্য ব্যাচের আরও বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী দীর্ঘদিন ধরে ওই শিক্ষকের পক্ষপাতমূলক আচরণ, অপমানজনক বক্তব্য, এবং একাডেমিক অবিচারের শিকার হয়ে আসছেন।
এ ঘটনায় সোমবার (১৬ নভেম্বর) দুপুরে বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে করা একটি লিখিত অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী। অভিযোগপত্রে এমন ঘটনার ভুক্তভোগী আরও ৮ জন শিক্ষার্থী তাদের সাথে হওয়া অন্যায়ের বক্তব্য তুলে ধরেছেন। অভিযুক্ত শিক্ষক ফজলুল হালিম রানা উক্ত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক।
অভিযোগপত্র থেকে জানা যায়, সহযোগী অধ্যাপক ফজলুল হালিম রানা ইচ্ছাকৃতভাবে বিভিন্ন শিক্ষার্থীর টিউটোরিয়াল পরীক্ষার খাতায় কম নম্বর দিয়ে থাকেন। একই ভুল থাকা সত্ত্বেও অন্য শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে নমনীয়তা দেখালেও বিশেষ কিছু শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে তিনি অন্যায়ভাবে নম্বর কেটে দেন। এমনকি কিছু শিক্ষার্থীর খাতা মূল্যায়ন না করে পূর্বের টিউটোরিয়ালে পাওয়া নম্বর পরবর্তী টিউটোরিয়ালে বসিয়ে দিয়েছেন। এ বিষয়ে শিক্ষার্থীরা ব্যাখ্যা চাইলে তিনি যুক্তিসঙ্গত কারণ দেখাতে পারেননি। উল্টো শিক্ষার্থীদের অপমান করেন।
এদিকে তার অন্যায় আচরণের ভুক্তভোগী আরও কয়েক শিক্ষার্থী। তারা জানিয়েছেন, সহযোগী অধ্যাপক হালিম রানা নিয়মিতভাবে মাদ্রাসা ব্যাকগ্রাউন্ড বা পোশাক—পরিচ্ছদের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের ‘শিবির’, ‘জঙ্গি’ বা রাজনৈতিকভাবে চিহ্নিত করে অপমান করেন।
ভর্তি হওয়ার সময়ও তিনি বিভিন্ন শিক্ষার্থীকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেছেন, তাঁদের বাবা—মায়ের পেশা, শিক্ষাগত যোগ্যতা ও ধর্মীয় পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। কিছু ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাঁর আচরণ এতটাই অসম্মানজনক ছিল যে ভুক্তভোগীরা মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে বিশ^বিদ্যালয় বদলানোর কথাও ভেবেছেন।
অভিযোগপত্রে উল্লেখ আছে, হালিম রানার আচরণের কারণে কিছু শিক্ষার্থী গুরুতর মানসিক চাপের শিকার হয়েছে। কেউ কেউ আত্মহত্যার চেষ্টাও করেছে।
এমনকি একজন শিক্ষার্থী দাবি করেছেন, তাঁর বহিষ্কারের জন্য সহযোগী অধ্যাপক রানা প্রশাসনের কাছে মিথ্যা অভিযোগও দিয়েছেন। কিন্তু তা প্রমাণিত হয়নি। আরেকজন শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, খাতায় সঠিকভাবে তথ্য উপস্থাপন করলেও শিক্ষক পরবর্তীতে নিজের দেওয়া লেকচারের তথ্য অস্বীকার করে তার নম্বর কমিয়ে দিয়েছেন।
শুধু একাডেমিক ক্ষেত্রেই নয়, বিভাগীয় কার্যক্রমেও হালিম রানার বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। ক্লাস নেওয়ার ক্ষেত্রে অনিয়ম, ক্লাস রিপ্রেজেন্টেটিভের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগও উঠে এসেছে উপাচার্য বরাবর দেয়া অভিযোগপত্রে। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা দাবি করেছেন, শিক্ষক হিসেবে তিনি পেশাদারিত্ব বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের দাবি, সহযোগী অধ্যাপক হালিম রানার কর্মকাণ্ডে তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষার্থীদের প্রতি বৈষম্যমূলক ব্যবহার করছেন এবং খাতা যথাযথভাবে মূল্যায়ন না করে মানসিক হয়রানি এবং রাজনৈতিকভাবে ট্যাগিং করছেন। এমতাবস্থায় তার বিরুদ্ধে দ্রুত তদন্ত ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছেন তারা।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে সহযোগী অধ্যাপক ফজলুল হালিম রানার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ অভিযোগ ভিত্তিহীন ও কল্পনাপ্রসূত। আমি খাতা দিয়েছি কিন্তু অফিশিয়ালি বিশ^বিদ্যালয়ের কাছে মার্কস জমা দিইনি। আর পোশাক পরিচ্ছদ নিয়ে ট্যাগিং করিনি। ৮ জন স্টেটমেন্ট দিয়েছে, কিন্তু আমার শিক্ষার্থী ৮০ জন। বাকিরা কেন দেয়নি?
অভিযোগপত্রের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, একটি অভিযোগ এসেছে। এটা যাচাই—বাছাই করে দেখা হবে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
2025 © জনপদ সংবাদ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
প্রয়োজনে যোগাযোগঃ ০১৭১২-০৬৮৯৫৩