মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫, ০২:৫২ পূর্বাহ্ন
মোঃ আরিফুল ইসলাম, রাউজান (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি:
চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী মডেল থানাধীন মদুনাঘাট এলাকায় গত ৭ অক্টোবর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দে সংঘটিত ব্যবসায়ী আব্দুল হাকিম হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটনে গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য অর্জন করেছে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ।
চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার জনাব মোঃ সাইফুল ইসলাম সানতু, বিপিএম-বার এর দিক-নির্দেশনায় জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) ও হাটহাজারী মডেল থানা পুলিশ যৌথভাবে অভিযান পরিচালনা করে হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ও সহযোগীদের শনাক্ত এবং গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
ঘটনার দিন সকালে নিহত হাকিম নিজ প্রাইভেটকারযোগে হামিম এগ্রো ফার্মে যান। বিকেলে চট্টগ্রাম শহরে ফেরার পথে মদুনাঘাট ব্রিজের পশ্চিম পাশে পৌঁছালে মোটরসাইকেলযোগে আসা অজ্ঞাতনামা সন্ত্রাসীরা তার গাড়ির সামনে এসে এলোপাতাড়ি গুলি চালায়। গুরুতর আহত অবস্থায় তিনি পরবর্তীতে মৃত্যুবরণ করেন।
ঘটনার পর জেলা গোয়েন্দা শাখা ও হাটহাজারী থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে প্রাপ্ত প্রাথমিক তথ্য ও গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করে।
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ৩১ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে রাউজান থানাধীন বাগোয়ান ইউনিয়নের গরীব উল্লাহ পাড়া এলাকা থেকে মোঃ আব্দুল্লাহ খোকন (প্রকাশ ল্যাংড়া খোকন)-কে গ্রেফতার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে সে হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে এবং পরবর্তীতে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে।
খোকনের দেয়া তথ্য অনুযায়ী ২ নভেম্বর ২০২৫ তারিখে রাউজান থানাধীন নোয়াপাড়া ইউনিয়নের চৌধুরীহাট এলাকা থেকে হত্যাকাণ্ডে জড়িত মোঃ মারুফ-কে গ্রেফতার করা হয়। মারুফের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্রের অবস্থান জানা যায়, যা অপর আসামি মোঃ সাকলাইন হোসেনের হেফাজতে ছিল।
পরবর্তীতে ৪ নভেম্বর ২০২৫ রাতে জেলা গোয়েন্দা শাখা ও হাটহাজারী থানার একটি বিশেষ টিম রাউজান থানাধীন নোয়াপাড়া এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে মোঃ সাকলাইন হোসেন-কে গ্রেফতার করে। তার হেফাজত থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি একনলা বন্দুক, একটি এলজি ও একটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়।
বিজ্ঞ আদালতের অনুমতিক্রমে পুলিশ রিমান্ড জিজ্ঞাসাবাদে মারুফ, জিয়া, ও সাকলাইনের দেয়া তথ্যমতে ৯ নভেম্বর ২০২৫ তারিখে রাউজান থানাধীন নোয়াপাড়া চৌধুরীহাটের আইয়ুব আলী সওদাগরের বাড়িতে জেলা পুলিশের অভিযান পরিচালিত হয়।
উক্ত অভিযানে হাকিম হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ৪টি বিদেশি পিস্তল, ১টি রিভলবার, ১টি চায়না রাইফেল, ১টি শর্টগান, ৪৯ রাউন্ড রাইফেলের গুলি(৭.৬২), ১৭ রাউন্ড শর্টগানের কার্তুজ, ১৯ রাউন্ড পিস্তলের গুলি (৭.৬৫), ৭টি ম্যাগজিন, ২টি দেশীয় রামদা, ১টি রকেট ফ্লেয়ার, ৫০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, ২৫০ গ্রাম গাঁজা (আনুমানিক) এবং ৯৬,০০০ নগদ টাকাসহ ২ জনকে গ্রেফতার করা হয়।
আসামিদের জবানবন্দি ও স্থানীয়সুত্রে জানা যায়, রাউজান থানাধীন বালুমহলের নিয়ন্ত্রণ ও স্থানীয় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে।
এ পর্যন্ত পুলিশের তৎপরতায় মোট ৬ জন আসামি গ্রেফতার হয়েছে এবং হাকিম হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ডসহ বাকি আসামিদের পরিচয় শনাক্ত করা হয়েছে।
গ্রেফতারকৃত আসামিরা হলেন: ১। মো:আব্দুল্লাহ, পিতা: সলিমুল্লাহ, মাতা নুরজাহান বেগম সাং:গরীব উল্লাহ পাড়া সলিম উল্লাহ চৌধুরীর নতুন বাড়ি ০৩ নং ওয়ার্ড ১৪ নং বাগোয়ান ইউপি থানা রাউজান ।২। মো: মারুফ, পিতা:মো: হারুন, মাতা: সাজু আক্তার সাং নোয়াপাড়া কুজি আলীর বাড়ি ০৫ ওয়ার্ড ১৩ নং নোয়াপাড়া ইউপি থানা রাউজান জেলা চট্টগ্রাম। ।৩। জিয়াউর রহমান, পিতা-হাজী দলিল উর রহমান, মাতা-ফরিদা বেগম, সাং-পাচখাইন, থানা-রাউজান
জেলা-চট্রগ্রাম ।৪। মোঃ সাকলাইন হোসেন, পিতা- মোঃ ইকবাল হোসেন, মাতা- শামীমা আক্তার, সাং- পালোয়ান পাড়া, সালেহ ইঞ্জিনিয়ারের বাড়ী, মোকার দিঘীর পাড়, ০৬নং ওয়ার্ড, ১৩নং নোয়াপাড়া ইউপি, থানা- রাউজান, জেলা- চট্টগ্রাম ।৫। মোঃ সাকিব পিতা: মৃত মোঃ শওকত, মাতা: দিলুয়ারা বেগম, ঠিকানা: আইয়ুব আলী সওদাগরের বাড়ি, চৌধুরীহাট, নোয়াপাড়া, থানা- রাউজান, জেলা- চট্টগ্রাম এবং ।৬। শাহেদ, পিতা: সোবহান @ শহর মুলুক, মাতা: নাছিমা বেগম, ঠিকানা: আইয়ুব আলী সওদাগরের বাড়ি, চৌধুরীহাট, নোয়াপাড়া, থানা- রাউজান, জেলা- চট্টগ্রাম।
চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার এর নির্দেশনায় নোয়াপাড়া, চৌধুরীহাট ও আশপাশের এলাকায় চেকপোস্ট স্থাপন, পুলিশি টহল, বিশেষ অভিযান এবং রাত্রীকালীন সাঁড়াশি তল্লাশি কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
চট্টগ্রাম জেলা এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, সন্ত্রাসী কার্যক্রম দমন ও সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জেলা পুলিশের সমন্বিত অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
2025 © জনপদ সংবাদ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
প্রয়োজনে যোগাযোগঃ ০১৭১২-০৬৮৯৫৩