তুর্য দাস, সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি:
টাকা জমা দেবার সময় শৃঙ্খলা না মানায় কথা কাটাকাটির জের ধরে ব্যাংকের ক্যাশিয়ারের উপর হামলা ও ভল্টের চাবিসহ সঙ্গে থাকা টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় সুনামগঞ্জ ব্রাংক ব্যাংকের প্রধান শাখায় সোমবার সাড়ে তিন ঘণ্টা স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ ছিল।
সোমবার সকালে শহরের স্টেশন রোডের নেজা প্লাজার নিচে ব্র্যাক ব্যাংকের ক্যাশ ইনচার্জ মো. বেলায়েত হোসনের উপর এই হামলার ঘটনা ঘটে। হামলাকারীরা নগদ ৮২ হাজার টাকা, মোবাইল ফোন ও ব্যাংকের ভল্টের চাবি ছিনতাই করে পালিয়েছে বলে ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়। একারণে সকাল ১০ টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত ব্যাংকের কার্যক্রম বন্ধ ছিল।
পরে সোনালী ব্যাংকে থেকে ব্যাংকের ভল্টের বিকল্প চাবি এনে কার্যক্রম সচল করা হয়।
ব্র্যাক ব্যাংকের কর্মকর্তা কর্মচারীরা জানান, রবিবার বিকেল তিনটায় ওমরগণি নামের এক গ্রাহক তার স্ত্রী ফারজানা আলীর হিসাবে ৮০ হাজার টাকা জমা দিতে আসেন। ব্যাংকের ভেতর অন্য গ্রাহকরা লাইনে দাঁড়িয়ে সেবা নিচ্ছিলেন। কিন্তু তিনি লাইনে না দাঁড়িয়ে টাকা জমা দিতে সবার সামনে চলে যান।এসময় ক্যাশ ইনচার্জ বেলায়েত হোসেন তাকে লাইনে দাঁড়িয়ে শৃঙ্খলা মেনে টাকা জমা দেবার জন্য বলেন। ওমরগণি ওই সময় ক্ষুব্ধ হন। এক পর্যায়ে ক্যাশ ইনচার্জ ও ওমরগণির মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। পরে ব্যাংকের ম্যানেজার শহীদুল ইসলাম পরিস্থিতি সামাল দিয়ে বিষয়টি মিটমাট করে দেন।
সোমবার সকালে ক্যাশ ইনচার্জ বেলায়েত হোসেন ব্যাংকের নিচে আসলে ওঁত পেতে থাকা ওমরগণি সহ ৪-৫ জন তার ওপর হামলা চালান। এসময় বেলায়েত হোসেনের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছুরি দিয়ে আঘাত করলে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। চিৎকারের শব্দ শুনে লোকজন জড়ো হলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। পরে আহত অবস্থায় বেলায়েৎ হোসেনকে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ব্র্যাক ব্যাংকের ম্যানেজার শহীদুল ইসলাম সোহাগ জানান, গ্রাহক ওমর গণি’র সঙ্গে বেলায়েত হোসেনের বাকবিতণ্ডা হয়। পরে বিষয়টি ব্যাংকে উপস্থিত সবার সামনে মিটমাট করা হয়েছে। সোমবার সকালে ব্যাংকে ঢুকার সময় ভবনের নীচে বেলায়েত হোসেনের ওপর হামলা চালিয়ে তাকে এলোপাতাড়ি চুরিকাঘাত করা হয়। এসময় নগদ ৮২ হাজার টাকা, ভল্টের চাবি ও মোবাইল ছিনিয়ে নেওয়া হয়। ঘটনার পর সাড়ে ৩ ঘন্টা লেনদেন বন্ধ থাকার পরে সোনালী ব্যাংক থেকে ভল্টের চাবি এনে লেনদেন চালু করা হয়। এ বিষয়ে হামলাকারীদের নামে থানায় মামলা দায়ের করা হবে।
অভিযুক্ত ওমরগণি বললেন, ক্রেডিট কার্ডের বিল জমা দিতে গিয়েছিলাম। টাকা গ্রহণে সিরিয়েল মেন্টেইন না করে স্বজনপ্রীতি দেখে প্রতিবাদ করি। পরে ক্যাশিয়ার আমার সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। এক পর্যায়ে লাটি হাতে তেড়ে আসেন। এসময় ব্যাংকের ব্যবস্থাপক এগিয়ে এসে পরিস্থিতি সামাল দেন। সন্ধ্যায় দুজনে কথা বলে বিষয়টি মিটমাট করার কথাও বলেন ব্যবস্থাপক। সোমবার সকালে বেলায়েত ফোন দেন আমাকে, আমি তার সঙ্গে কথা বলার প্রয়োজন বোধ করি নি। এরপর সাড়ে নয়টার দিকে ব্যাংকের সামনে পেয়ে তিনি উসকানি দিয়ে কথা বলেন। শেষে হাতাতির ঘটনা ঘটে। ব্যাংকের সিসি ক্যামেরা চেক করার দাবিও করলেন ওমরগণি।
ব্যাংক কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেনের ভাই অ্যাড. কামাল হোসেন জানান, ওমরগণি তার সহযোগী আরপিননগর এলাকার বাসিন্দা শিমুল ও জনিসহ হামলাকারীদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করা হবে।
সুনামগঞ্জ সদর থানায় ওসি আবুল কালাম বললেন, ঘটনার খবর শুনে পুলিশ ব্যাংকে গিয়েছিল। ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে ক্যাশিয়ারের উপর হামলার ঘটনায় মামলা করা হবে।