সানজানা তালুকদার, কুবি প্রতিনিধি:
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত বাতিল করে পুনরায় রাজনীতি উন্মুক্ত করার দাবিতে স্মারকলিপি জমা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল।
রবিবার (৩ নভেম্বর) উপাচার্যের কাছে এই স্মারকলিপি জমা দেয় সংগঠনটির নেতাকর্মীরা।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, 'গত বছরের আট আগস্ট ১০০তম সিন্ডিকেট সভায় আওয়ামী দোসর হিসেবে পরিচিত তৎকালীন উপাচার্য মঈন ক্যাম্পাসে রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছিলেন। সেই সিন্ডিকেটের অবৈধ সিদ্ধান্ত এখনও বহাল রয়েছে, ফলে ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি এখনো উন্মুক্ত করা হয়নি। ছাত্রদল জানাতে চায় যে, বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি করা প্রতিটি শিক্ষার্থীর সাংবিধানিক অধিকার। কিন্তু, ২০২৪ সালের পূর্ববর্তী আওয়ামী ফ্যাসিবাদের ন্যায় এখনো আমরা ক্যাম্পাসে বৈষম্যের শিকার হচ্ছি। শিক্ষার্থী সংসদ গঠনের প্রথম ধাপ হওয়া উচিত প্রশাসনের প্রতি শিক্ষার্থীদের আস্থা স্থাপন করা এবং সক্রিয় সকল ছাত্রসংগঠনের কার্যক্রম উন্মুক্ত রাখা। কিন্তু, অধিকাংশ শিক্ষার্থীর মতামত উপেক্ষা করে একটি বিশেষ গোষ্ঠীকে সুবিধা দিতে প্রশাসন তৎপর রয়েছে।'
আরও বলা হয়, 'গতবছরের ৫ আগস্ট পরবর্তী যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী-সংসদ গঠিত হয়েছে, সেসব প্রতিষ্ঠানে ২০২৪ এর গনঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক পরিবেশ বিদ্যমান ছিল। তারা সকল স্টেকহোল্ডারদের মতামত নিয়ে শিক্ষার্থী-সংসদ অনুষ্ঠিত করেছে। অপরদিকে, রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকা ক্যাম্পাস "শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়" এর প্রশাসনও শিক্ষার্থীদের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে ছাত্রসংসদ গঠনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। তারা গঠনতন্ত্র প্রণয়নের পূর্বেই ছাত্ররাজনীতি উন্মুক্ত করে সবার জন্য গ্রহণযোগ্য পরিবেশ তৈরি করেছে। কিন্তু, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে তার উল্টো চিত্র দেখা যাচ্ছে।'
এ বিষয়ে কুবি শাখা ছাত্রদলের সদস্য সচিব মোস্তাফিজুর রহমান শুভ বলেন, 'আমরা ভিসি স্যারের সাথে আমাদের অধিকার আদায়ের বিষয়ে কথা বলেছি। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিন্ন রাজনীতি থাকবে, সকল ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠন তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করবে, শিক্ষার্থীবান্ধব ও মানবিক কাজ করবে ক্যাম্পাসে এটাইতো হওয়া উচিৎ। বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি আওয়ামী আমলের ন্যায় এখনও বৈষম্য সৃষ্টি করে রাখে, রাজনৈতিক মতামতকে সন্মান না জানিয়ে কন্ঠরোধ করতে চায় তাহলেতো শিক্ষার্থীদের কাছে প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে।'
আহ্বায়ক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, 'আমরা চাই কুকসু গঠন হোক। তবে সেটার আগে ছাত্ররাজনীতি আগে উন্মুক্ত করতে হবে। প্রশাসন যদি মনে করে, ছাত্ররাজনীতি উন্মুক্ত না করে উনারা অন্যকোন গোষ্ঠীর উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করবে, তাহলে সেটা হতে দেওয়া হবে না।'
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো: হায়দার আলী বলেন, 'আমরা তাদের স্মারকলিপিটি পেয়েছি। সেটা আমরা গঠনতন্ত্র প্রণয়ন কমিটির কাছে দিব। তারা সেখানে এটাকে উল্লেখ করবে। পরবর্তীতে গঠনতন্ত্র অনুমোদনের জন্য পাঠালে কর্তৃপক্ষ যদি এটার অনুমতি দেয়, তাহলে হবে।'
প্রসঙ্গত, এর আগে গতবছরের ০৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষ্যিতে ০৮ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০০তম সিন্ডিকেট সভায় ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়।