আবদুল্লাহ আল শাহিদ খান, ববি প্রতিনিধি:
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (বাকসু) গঠনতন্ত্রের খসড়া প্রকাশ করা হয়েছে। এতে কেন্দ্রীয় সংসদে মোট ২৫টি ও হল সংসদে ১৫টি পদ রয়েছে। যার মধ্যে কেন্দ্রীয় সংসদে ২৩টি এবং হল সংসদে ১৩ টি পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে এ খসড়া গঠনতন্ত্র প্রকাশ করা হয় । শিক্ষক- শিক্ষার্থীরা চাইলে মতামত দিতে পারবে।
খসড়া অনুযায়ী কেন্দ্রীয় সংসদে মোট পদ ২৫টি। এর মধ্যে সভাপতি ও কোষাধ্যক্ষ পদ ছাড়া অন্য ২৩টি পদে সরাসরি নির্বাচন হবে। পদগুলো হলো সহসভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সহকারী সাধারণ সম্পাদক, মুক্তিযুদ্ধ, বিপ্লব ও গণতন্ত্র বিষয়ক সম্পাদক, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক, কমন রুম ও ক্যাফেটেরিয়া বিষয়ক সম্পাদক, আন্তর্জাতিক বিষয় সম্পাদক, সাহিত্য সম্পাদক, সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক, ক্রিয়া সম্পাদক, পরিবহন সম্পাদক, সমাজসেবা সম্পাদক এবং নির্বাহী কমিটির (১১) জন সদস্য।
সংরক্ষিত পদে পদাধিকারবলে সভাপতি হবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং কোষাধ্যক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের মধ্য থেকে উপাচার্যের মনোনয়ন অনুযায়ী নির্বাচিত হবেন।
এ ছাড়া হল সংসদে মোট পদ রয়েছে ১৫টি। সেগুলো হলো–সভাপতি, কোষাধ্যক্ষ, সহসভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সহ-সাধারণ সম্পাদক, সাহিত্য ও সম্পাদক, সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক, পাঠকক্ষ সম্পাদক, ইনডোর গেমস সম্পাদক, আউটডোর ও ক্রীড়া সম্পাদক, সমাজসেবা সম্পাদক এবং সংসদ কর্তৃক নির্বাচিত চার (৪) জন নির্বাহী সদস্য।
এর মধ্যে ১৩টি পদে নির্বাচন হবে এবং অন্য দুটি পদের মধ্যে হলের প্রভোস্ট পদাধিকারবলে সভাপতি হবে এবং হলের আবাসিক শিক্ষকদের মধ্য থেকে কোষাধ্যক্ষ মনোনীত করবেন।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনসংক্রান্ত প্রক্রিয়ায় আওতায় “বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র” বলতে সেই সকল নিয়মিত শিক্ষার্থীকে বোঝানো হবে, যারা ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষ স্নাতক শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছেন।এছাড়া, এতে অন্তর্ভুক্ত থাকবেন স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা।
ছাত্র সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রেও গঠনতন্ত্রে ভোটারের মতোই একই শর্ত বজায় রাখা হয়েছে। অর্থাৎ ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে স্নাতকে ভর্তিকৃত এবং বর্তমানে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে অধ্যয়নরত নিয়মিত শিক্ষার্থীরাই প্রার্থী হতে পারবেন।
গঠনতন্ত্রে বলা হয়েছে, ১(ক) ধারায় উল্লিখিত নিয়মিত শিক্ষার্থীরাই শুধু মনোনয়নপত্র দাখিলের যোগ্য বলে গণ্য হবেন। ফলে বিশেষ, সান্ধ্য বা পেশাদার কোর্সের শিক্ষার্থীরা যেমন ভোট দিতে পারবেন না, তেমনি প্রার্থীও হতে পারবেন না।
খসড়া গঠনতন্ত্র প্রকাশ হওয়ার পর এ নিয়ে রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।
ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের সভাপতি হাসিবুল হোসেন বলেন, ১৪ বছর পর ববির প্রথম ছাত্রসংসদের সংবিধি প্রকাশে তারা আনন্দিত ও প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানাচ্ছেন। তবে প্রশাসনের দীর্ঘসূত্রতা ও শুধু আশ্বাসনির্ভর আচরণে তারা হতাশ। তিনি দ্রুত বাকসুর পূর্ণাঙ্গ আইন প্রণয়ন এবং সবার অংশগ্রহণে একটি সম্মিলিত প্যানেল গঠনের ইচ্ছা প্রকাশ করেন, যাতে ববির প্রথম বাকসু নির্বাচনে সবাই মিলিতভাবে অংশ নিতে পারে।
ছাত্রদল নেতা মোশাররফ হোসেন বলেন, প্রকাশিত বাকসুর খসড়া গঠনতন্ত্র দেখে তারা আনন্দিত হলেও কিছু বিষয় পুনর্বিবেচনার প্রয়োজন আছে। তার মতে, গঠনতন্ত্রে শিক্ষার্থীদের স্বার্থ সর্বাগ্রে থাকতে হবে—শিক্ষক বা কর্মচারীদের সুবিধা যেন শিক্ষার্থীদের চেয়ে বেশি না হয়। যে বিষয়গুলো শিক্ষার্থীদের স্বার্থের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়, সেগুলো নিয়ে তারা আলোচনা করবেন এবং শিক্ষার্থীদের স্বার্থ নিশ্চিত করেই বাস্তবায়নে কাজ করবেন।
গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সংগঠক ভূমিকা সরকার বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে বাকসুর খসড়া গঠনতন্ত্র প্রকাশকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, এটি গণতান্ত্রিক পরিবেশ ও শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষায় সহায়ক হবে। তিনি সভাপতির সঙ্গে অন্যান্য সদস্যদের ক্ষমতার ভারসাম্য নিশ্চিত করা এবং শিক্ষার্থীদের মতামতের ভিত্তিতে গঠনতন্ত্র চূড়ান্ত করার দাবি জানান। পাশাপাশি দ্রুত অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ছাত্র সংসদ নির্বাচনের আহ্বান জানান। সংগঠনটি শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা অনুযায়ী বাকসুর কার্যক্রমে অংশ নেবে বলেও তিনি জানান।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি মো: মনিরুল ইসলাম বলেন, যে গঠনতন্ত্রের খসড়া প্রাথমিকভাবে প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে শিক্ষার্থীদের আশা-আকাঙ্ক্ষার পূর্ণ প্রতিফলন ঘটেনি। বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে প্রত্যাশা থাকবে, জুলাই আন্দোলনের চেতনা ও আকাঙ্ক্ষাকে প্রাধান্য দিয়ে, প্রাণের শিক্ষার্থীদের গ্রহণযোগ্য সকল মতামতের ভিত্তিতে একটি পূর্ণাঙ্গ গঠনতন্ত্র প্রণয়ন করা হোক।
উল্লেখ্য, ছাত্র সংসদের সভাপতি একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অনধিক পাঁচজন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দিয়ে একটি নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন।