সানজানা তালুকদার, কুবি প্রতিনিধি:
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলে জুনিয়র শিক্ষার্থীর দ্বারা এক সিনিয়র শিক্ষার্থীকে হেনস্তার অভিযোগ উঠেছে।
অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরা হলেন শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ও বাংলা বিভাগের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের মোঃ রোমান মিয়া এবং মোঃ ইউনূস আলী।
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি (আইসিটি) বিভাগের বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী দ্বীন ইসলাম হৃদয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি বরাবর এই লিখিত অভিযোগ দেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর একটি পোস্ট ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে তিনি দাবি করেন, গত ১৯ অক্টোবর ১০৪ নং কক্ষ থেকে ১০৩ নং কক্ষে শিফট হওয়ার সময় পূর্বে থেকে ১০৩ নং কক্ষে বসবাসরত রোমান এবং ইউনূস দ্বীন ইসলামের সাথে উচ্চস্বরে কথা বলেছেন, টেবিল চাপড়ে তাকে মারতে তেড়ে গেছেন।
এছাড়া ভুক্তভোগী তার পোস্টে আরও দাবি করেন, উক্ত ঘটনার প্রেক্ষিতে গত ২০ অক্টোবর হল প্রশাসন রোমান ও ইউনূসকে ডেকে তাদের সিট বাতিল করে এবং ২১ তারিখের মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে গত ২২ অক্টোবর হল প্রশাসন থেকে তাকে জানানো হয় ওরা (রোমান ও ইউনূস) হলে থাকবে। এরমধ্যে, ২০ অক্টোবর ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের একাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস্ বিভাগের শিক্ষার্থী তৌহিদুল ইসলাম কর্তৃক রাজনৈতিক প্রভাবে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ তুলেন।
উক্ত ঘটনায় ব্যক্তিগত নিরাপত্তাহীনতার ভোগার অভিযোগ তুলে গতকাল (২৩ অক্টোবর) হল প্রভোস্টের মাধ্যম হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন দ্বীন ইসলাম।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত মোঃ রোমান মিয়া বলেন, 'আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা মিথ্যা। উনি( দ্বীন ইসলাম) হুট করে আমাদের রুমে উঠে। তখন আমি জানতে চাই আমাদের রুমে তো অলরেডি ৮ জন আছে সেখানে আরও একজন কেন উঠবেন? তখন তিনি বলেন যে, তিনি প্রশাসনের মাধ্যমে উঠেছেন। এরপর আমি বলছি সবাই তো প্রশাসনের মাধ্যমে উঠে। তারপর তিনি কিছুই না বলে প্রভোস্ট স্যারের কাছে বিচার দেয়। এর পরদিন প্রভোস্ট স্যার আমাদেরকে ডাকায় এবং সব কথা শুনে আমাদের দুইজনের হলের সিট বাতিল করে দেয়। এরপরে সন্ধ্যার আবার ফোন করে বলে এবারের মতো আমাদেরকে ক্ষমা করেছে। পরবর্তীতে আর এমন ঘটনা যাতে না ঘটে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে বলেছেন।'
কোনো দোষ না করলে হল প্রশাসন হলের সিট বাতিল করবে কেন–জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আমাদের রুমে ৮ জন থাকার পরেও আরেকজন কেন উঠবে সেটা জানতে চাওয়ায় আমার সিট বাতিল করেছিল।'
অভিযুক্ত আরেক শিক্ষার্থী মোঃ ইউনূস আলী বলেন, 'উনি (দ্বীন ইসলাম) যখন আমাদের রুমে আমার পাশের সিটে উঠছে তখন ওই সিটে অলরেডি একজন আছে। আমি জানতে চাইলাম যে অলরেডি আছে তার সাথে কথা বলেছেন কি না? তখন তিনি বলেন যে তিনি প্রশাসনের মাধ্যমে উঠেছেন। এরপর আমি বললাম প্রশাসনের মাধ্যমে উঠলেও এই সিটে যে আছে তার সাথে কথা বলা উচিত। তখন তিনি কিছু না বলে প্রভোস্ট স্যারের কাছে বিচায় দেন। এর পরেরদিন প্রভোস্ট স্যার আমাদের সকলের কথা শুনে এবং রোমান আর আমার সিট বাতিল করে দেয়। পরবর্তীতে সন্ধ্যায় স্যার আবার ফোন দিয়ে বলেন আমাদেরকে এবারের মতো ক্ষমা করেছেন। পরবর্তীতে যাতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে এবং আমাদেরকে হলে থাকতে বলেন।'
কোনো অপরাধ না করলে হলের সিট বাতিল করা হলো কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'এ ব্যাপারে আপনি প্রভোস্ট স্যারের সাথে কথা বলেন কেন বাতিল করেছে।'
অভিযুক্ত আরেক শিক্ষার্থী তৌহিদুল ইসলামের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
এ ব্যাপারে হল প্রভোস্ট মোঃ জিয়া উদ্দিন বলেন, 'আমি এ ব্যাপারে কিছুই জানি না।'
২০ অক্টোবর ঘটনার সমাধান করে অভিযুক্তদের সিট বাতিল করার বিষয়ে অস্বীকার করে প্রভোস্ট বলেন, 'আমি এ ব্যাপারে কিছুই জানি না। প্রক্টর অফিসে একটা অভিযোগ দিয়েছে শুনেছি। আগামী রবিবার এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে।'
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবদুল হাকিম বলেন, 'অভিযোগ পত্রটি এখনো আমার হাতে আসেনি। তবে, আমি খোঁজ খবর নিয়েছি। আগামী রবিবার অভিযোগপত্র হাতে পেলে বিষয়টি দেখব।'
উল্লেখ্য, এর আগেও মো. ইউনূস আলী ও রোমান মিয়ার বিরুদ্ধে একই বিভাগের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের রযাগ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। এছাড়া, অভিযুক্ত তৌহিদুল ইসলাম এক ব্যাচমেটকে মারার অপরাধে হল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল।