চৌদ্দগ্রাম (কুমিল্লা) প্রতিনিধি:
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলা প্রধান শিক্ষক পরিষদের সভাপতি মোঃ কামরুজ্জামানের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের ফান্ড থেকে প্রায় ২৪ লাখ টাকা আত্মসাতের ঘটনায় মঙ্গলবার বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যায়নি আমন্ত্রিত অতিথিরা।
দুর্নীতির বিপক্ষে প্রতিবাদ করায় অতিথি ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতির প্রশংসা করছে নেটিজেনরা। কামরুজ্জামান তারাশাইল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও উপজেলা আ’লীগের বিজ্ঞান-প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক। সোমবার ও মঙ্গলবার বিভিন্ন মিডিয়ায় এনিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যায়নি প্রধান অতিথি ইউএনও, বিশেষ অতিথি শিক্ষা অফিসার ও সভাপতিসহ অতিথিবৃন্দ।
বিদ্যালয় ও স্থানীয় সূত্র মতে, ২০১১ সালের ১০ অক্টোবর মো. কামরুজ্জামান তারাশাইল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। এরপর থেকে তিনি বিভিন্নভাবে আর্থিক অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন। ২০১৯ সালে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির আভ্যন্তরীণ এক নিরীক্ষায় ৯ লাখ ৯০ হাজার ৮৫৬ টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পায়। পরে তৎকালীন স্থানীয় সংসদ সদস্য মুজিবুল হকের মধ্যস্থতায় ৪ কিস্তিতে বিদ্যালয়কে ৪ লাখ টাকা পরিশোধ শর্তে রফাদফা হয়।
এরপর কামরুজ্জামান বিদ্যালয় তহবিলে ২ কিস্তি পরিষদের পর ওই কমিটির মেয়াদ শেষ হলে তিনি আর টাকা জমা দেননি। এদিকে বর্তমান পরিচালনা কমিটি ২০২১ সালের আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের আগস্ট পর্যন্ত আভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা করে ১৪ লাখ ৬ হাজার ৭৮১ টাকা আত্মসাতের প্রমান পান। এরপর বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ শাহআলম মজুমদার গত ৩০ সেপ্টেম্বর লিখিতভাবে প্রধান শিক্ষক মোঃ কামরুজ্জামানকে নিরীক্ষা কপিসহ নোটিশ পাঠানো হয়।
সেখানে উল্লেখ করা হয়, আপনার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের বিরুদ্ধে কেন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবেনা আগামী তিন দিনের মধ্যে সভাপতি বরাবর লিখিতভাবে জানানোর অনুরোধ রইল। অন্যথায় আপনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। নোটিশ প্রদানের ১৪ দিন অতিবাহিত হলেও তিনি এর কোন জবাব দেননি। বরং তড়িগড়ি করে নিজ উদ্যোগে মঙ্গলবার নিজের বিদায় অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। এরই মধ্যে বিষয়টি জানাজানি হলে স্থানীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। প্রথমে ব্যানারে ইউএনও, শিক্ষা অফিসার, জামায়াত নেতৃবৃন্দ ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানের নাম উল্লেখ করেছিল।
এনিয়ে মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশের পর ও জামায়াতের ধমক খেয়ে নেতৃবৃন্দের নাম বাদ দিয়ে ইউএনও, শিক্ষা অফিসার ও সভাপতির নাম রাখা হয় ব্যানারে। তবে ব্যানারে উল্লেখিত কোন অতিথি এবং সভাপতি বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ছিলেন না। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিদ্যালয় পরিচালনা এডহক কমিটির অভিভাবক সদস্য মতিউর রহমান সুমন, শিক্ষক প্রতিনিধি আলমগীর আলম মাঝি, অন্যান্য বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের মধ্যে জামাল হোসেন, ইফতেখারুল আলম, আলী হোসেন, আরশাদ উল্যাহ, আবুল হাশেম, শাহজাহান কবির।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, মোঃ কামরুজ্জামান দলীয় প্রভাব খাটিয়ে তৎকালীন স্থানীয় সংসদ সদস্য মুজিবুল হকের সহযোগীতায় ২০১১ সালের তারাশাইল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদে যোগদান করেন। ওই সময়ে প্রধান শিক্ষক নিয়োগকে কেন্দ্র করে পরিচালনা কমিটির একাংশের সাথে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের সৃষ্ট বিরোধের ঘটনায় প্রধান শিক্ষক ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতির পক্ষের সন্ত্রাসীরা দশম শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের মেধাবী ছাত্র মোকতার আহমেদ চৌধুরীকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে মারাত্মকভাবে আহত করেছে। ওই ঘটনার প্রতিবাদে পাঁচ দিন পর্যন্ত অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেন এবং সন্ত্রাসীদের শাস্তির দাবিতে ওই বছরের ৯ থেকে ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা ৩টি বিষয়ে নির্বাচনী পরীক্ষা ও অন্যান্য শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জনসহ শ্রেণী কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেয়। ওই সময়ে তিনি উপজেলা আ’লীগের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক থাকায় দলীয় প্রভাব খাটিয়ে আন্দোলন দমন করে ১০ অক্টোবর প্রধান শিক্ষক পদে যোগদান করেন। এরপর তিনি বিদ্যালয়ের অর্থ আত্মসাতসহ নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম মজুমদার বলেন, ‘সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। প্রধান শিক্ষক নিজেই নিজের সংবর্ধনার আয়োজন করে। তাছাড়া আমি দুর্নীতির বিরুদ্ধে। তাই, প্রধান শিক্ষককে বিদায় সংবর্ধনা দেয়ার প্রশ্নই আসে না’।
মঙ্গলবার বিকেলে বিদায় অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা একেএম মীর হোসেন বলেন, ‘প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে যেহেতু অনিয়মের অভিযোগ পেয়েছি, সে কারণে অনুষ্ঠানে যাওয়া হয়নি। তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ দ্রæত সময়ের মধ্যে তদন্ত কমিটি করে প্রাপ্ত রিপোর্ট অনুসারে বিধিগত ব্যবস্থা নেয়া হবে’।