শনিবার, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০১:০৫ অপরাহ্ন
ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধিঃ
ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলায় নকল সোনার পুতুল ও রুপার মুদ্রা দেখিয়ে প্রতারণার অভিযোগে পাঁচজনকে আটকের ঘটনায় চাঞ্চল্য তথ্য বেড়িয়ে এসেছে। ওই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরশেদুল হক ও উপ-পরিদর্শক (এসআই) শহিদুল ইসলামসহ কয়েকজন কর্মকর্তার যোগসাজশে আটক ব্যাক্তিদের কাছে থাকা ৬ লাখ ৮০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করাসহ ক্রেতাদেরই সাজানো হয় প্রতারক।
এ ঘটনার বিষয়ে তথ্য পুলিশকে সরবরাহকারী আকাশ নামে এক ব্যাক্তির সাথে এসআই শহিদুল ইসলামের কথোপকথনের একটি অডিও ফাঁস হওয়ায় বেড়িয়ে আসে চাঞ্চল্যকর কিছু তথ্য। যা এরইমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল।
এ ঘটনায় স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। আইনের কর্তা ব্যাক্তিদের এমন কার্যক্রমে হতাশ সাধারণ মানুষ। ফলে আইনের প্রতি আস্থা হারানোর হারানোর শঙ্কা রয়েছে।
ঘটনার চার দিন পর বেড়িয়ে আসে আসল রহস্য। একটি কল রেকর্ডের মাধ্যমে জানা যায় কিভাবে পুতুলকাণ্ড ঘটানো হয়েছিল।
বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে পুতুলকাণ্ডের ঘটনার কল রেকর্ডটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ফেসবুক) ছড়িয়ে পড়ে। যা মুহূর্তেই নেট দুনিয়ায় ঝড় ওঠে। নেটিজেনদের কটু মন্তব্যে ভাড়ী হয়ে ওঠে সামাজিক মাধ্যম।
অডিও কলে ওই ঘটনার তথ্য সরবরাহকারী আকাশ নামে এক যুবক ও রাণীশংকৈল থানার এসআই শহিদুল ইসলামকে বলতে শোনা যায়। আকাশ এসআই শহিদুলকে বলেন, আমি আগে থেকেই জানতাম যাদের আটক করে কারাগারে দিয়েছেন তারা না বুঝে নকল সোনা কিনতে আসছিল। তাদের কোন দোষ নেই। তাদের কাছে ৬ লাখ ৮০ হাজার টাকা ছিল। আমার সাথে আপনাদের (পুলিশ) কন্ট্রাক হয় তাদের ধরিয়ে দিলে লাখে ৩০ হাজার টাকা দিবেন। কেন দিলেন না?
প্রতি উত্তরে এসআই শহিদুল ইসলাম জানান, স্যার (ওসি) আমাকে নম্বর দিয়ে আপনার সাথে যোগাযোগ করতে বলেছেন আপনি না আসলে লোক পাঠাবেন তাও পাঠাননি। কাউকে পাঠান।
আকাশ বলেন, আপনারা কনফ্রাম না করলে বা না ডাকলে কিভাবে পাঠাবো। তাদের কাছে ৬ লাখ ৮০।
শহিদুল বলেন, না তাদের কাছে এতো টাকা ছিল না। পাওয়া গেছে ৩ লাখ। ওই টাকাও তাদের ফেরত দেয়া হয়েছে। তখন খুশি হয়ে স্যারকে ৫০ হাজার টাকা দেয় তারা। আকাশ আরও বলেন, তারা কেউ টাকা ফেরত পায়নি। তারা সবাই তো জেলে। আর কাকে টাকা ফেরত দিলেন তা আমি দেখবো কেন সোর্সের সাথে যা কন্ট্রাক হয়েছে তা দিয়ে দিবেন। আর তারা তো নিরপরাধ মানুষ ছিল। তারা কিনতে আসছিল।
তখন শহিদুল বলে ওঠেন তারা সত্যি নির্দোষ ছিল। বড় স্যারও বলেছিল, তাদের মামলা দেয়া হলো। তবে ওসি স্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কি করার। আর তাদের যে টাকা ফেরত দিয়েছে ওখানে সাংবাদিকরাও ছিল। আমিও আগে থেকে জানতাম এই ব্যবসা চলে সেখানে। যাক আপনি লোক পাঠান। এর বাইরেও অর্থ লেনদেনসহ নানা বিষয়ে কথা বলতে শোনা যায় অডিওতে।
তবে অডিও পোস্টের কমেন্টে নেটিজনরা লিখেন, আওয়ামী লীগ সরকার পতন হলেও তার রেখে যাওয়া দোসররা এখনো বহাল তবিতে রয়েছে বিভিন্ন থানায়। তারা ৫ আগস্টের পর থেকে গ্রামের সাধারণ মানুষদের জিম্মি করছে। ১৩ মিনিট ৪২ সেকেণ্ডের একটি ফাস হওয়া কল রেকর্ড এর মাধ্যমে স্পষ্ট, পুলিশের অভিযানে আটক হয়েছিল তারা নির্দোষ। তাদের ক্রেতা থেকে প্রতারক সাজিয়ে মিথ্যা মামালা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আর এর পেছনে রাণীশংকৈল থানার ওসিসহ পুলিশের কিছু পুলিশ কর্মকর্তা জড়িত রয়েছে। অবিলম্বে ওই থানার ওসি আরশেদুল হকসহ জড়িতদের দ্রুত ব্যবস্থা নিতে ঊর্ধ্বতনদের প্রতি অনুরোধ জানান তারা।
তবে রাণীশংকৈল থানার এসআই শহিদুল ইসলাম কল রেকর্ডের কথা স্বীকার করে বলেন, ওসি সাহেবের নির্দেশেই আকাশের সাথে কথা হয়। এখানে আমার কোন দোষ নেই বলে জানান তিনি।
অভিযোগ প্রসঙ্গে রাণীশংকৈল থানার ওসি মুহঃ আরশেদুল হক কোন মন্তব্য করতে রাজী হননি ।
এবিষয়ে ঠাকুরগাঁও সহকারী পুলিশ সুপার (রাণীশংকৈল সার্কেল) স্নেহাশীষ কুমার দাস বলেন, বিষয়টি অবগত হয়েছি। তদন্ত করে পুলিশ সুপারের নির্দেশে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আর ঠাকুরগাঁও পুলিশ সুপার শেখ জাহিদুল ইসলাম জানান, ঘটনার বিষয়টি নজরে এসেছে। তদন্ত করা হচ্ছে। এর সাথে জড়িত থাকলে ছাড় নয়, তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উল্লেখ্য, এরআগে ওই উপজেলায় নকল সোনার পুতুল ও রুপার মুদ্রা দেখিয়ে প্রতারণার অভিযোগে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ। গত মঙ্গলবার (০১ সেপ্টেম্বর) প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত সোনালি রঙের মূর্তি, পুরোনো নকশার রুপার মুদ্রা ও নগদ টাকাসহ আসামীদের আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছিলেন রাণীশংকৈল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরশেদুল হক।
2025 © জনপদ সংবাদ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
প্রয়োজনে যোগাযোগঃ ০১৭১২-০৬৮৯৫৩