মোঃ সোহাগ আহমেদ কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধিঃ
পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার মহিপুর উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে দীর্ঘদিন ধরে জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এতে প্রতিদিন রোগী ও স্বাস্থ্যকর্মীরা দুর্ঘটনার শঙ্কায় দিন পার করছেন।
এ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অবকাঠামোগত সমস্যার পাশাপাশি জনবল সংকটও চরম আকার ধারণ করেছে। ভবনের বিভিন্ন অংশে ফাটল সৃষ্টি হয়েছে এবং ছাদ থেকে খসে পড়ছে নির্মাণ সামগ্রী। দুইতলা বিশিষ্ট এ ভবনে চিকিৎসা সেবা ঝুঁকিপূর্ণভাবে চালিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছেন কর্মরত স্বাস্থ্যকর্মীরা।
মহিপুর গ্রামের বাসিন্দা মাওলানা আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, আমাদের ইউনিয়নসহ পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে প্রতিদিন শত শত নারী-পুরুষ, শিশু ও শিক্ষার্থীরা এ কেন্দ্রে চিকিৎসা নিতে আসে। দ্রুত সংস্কার না করলে চিকিৎসা সেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে।
উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে মোট ৮টি পদের মধ্যে ৫টি পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে। এর মধ্যে মেডিকেল অফিসার, ফার্মাসিস্ট, মিডওয়াইফ, নাইট গার্ড ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীর পদ অন্তর্ভুক্ত। ফলে সেবাপ্রত্যাশীরা সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। বর্তমানে উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার, পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা ও অফিস সহায়ক—মাত্র তিনজন মিলে কোনোরকমে স্বাস্থ্যসেবা চালিয়ে যাচ্ছেন।
ডালবুগঞ্জ থেকে আসা রোগী ইব্রাহীম দফাদার বলেন, বহু বছর আগে নির্মিত ভবনের দেয়াল ও ছাদে বড় বড় ফাটল ধরেছে। ভেঙে পড়ছে ইটের গাথুনি ও ছাদের নির্মাণ সামগ্রী। যেকোনো মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তবুও বাধ্য হয়ে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে।
কুয়াকাটা থেকে চিকিৎসা নিতে আসা রোজিনা বেগম বলেন,ভবনে প্রবেশ করলেই মনে হয় মাথার ওপর ভেঙে পড়বে। কিন্তু বিকল্প না থাকায় ঝুঁকি নিয়েই চিকিৎসা নিতে হয়।
পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা নুরজাহান বেগম বলেন, জরাজীর্ণ ভবনের কারণে আমরাও আতঙ্কের মধ্যে দায়িত্ব পালন করছি। একাধিক কক্ষ ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। আমি দীর্ঘদিন ধরে এ ভবনের দোতলায় পরিবার নিয়ে বসবাস করছি। বর্ষাকালে ছাদ থেকে পানি পড়ে এবং কোথাও কোথাও ভেঙে পড়ে নির্মাণ সামগ্রী। বিষয়টি একাধিকবার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানালেও এখনো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার আবিদা সুলতানা বলেন, ভবনের বিভিন্ন স্থানে ফাটল সৃষ্টি হয়েছে এবং কিছু কক্ষে ছাদ থেকে অংশ ভেঙে পড়েছে। যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তবুও আমাদের সেবা চালিয়ে যেতে হচ্ছে। অপরদিকে জনবল সংকটের কারণে প্রত্যাশিত স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা শংকর প্রসাদ অধিকারী জানান, কিছুদিন পূর্বে ইঞ্জিনিয়ার এসে ভবনটি পরিদর্শন করেছেন। এ বিষয়ে আমি ইতোমধ্যে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি প্রেরণ করেছি। এছাড়া আগামী অক্টোবরে নতুন নিয়োগ সম্পন্ন হলে জনবল সংকটও নিরসন হবে।
স্থানীয়দের দাবি, স্বাস্থ্যসেবার মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। অবিলম্বে নতুন ভবন নির্মাণ ও পর্যাপ্ত জনবল নিয়োগের মাধ্যমে নিরাপদ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জোর দাবি জানান তারা।