নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি:
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবিতে গনসমাবেশ ও প্রতীকী অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
রবিবার (২৪ আগস্ট) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবনের নিচে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এসময় বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড ও ফেস্টুন হাতে শিক্ষার্থীরা এতে অংশ নেন এবং ছাত্র সংসদ নির্বাচনের জোর দাবি জানান।
ছাত্র সংসদ সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকার। ছাত্র সংসদ থাকলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বৈষম্য থাকবে না, কেউ সিট বাণিজ্যে জড়াবে না, কোনো একক ছাত্র সংগঠনের দৌরাত্ম্যও থাকবে না।
মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্লোগান দেন—
“ছাত্র সংসদ আমার অধিকার, দিতে হবে দিতে হবে”,
“অবিলম্বে ছাত্র সংসদ দিতে হবে”,
“We want Nucsu”,
“অতি দ্রুত ছাত্র সংসদের রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে”,
“গণতন্ত্রের প্রথম ধারা, ছাত্র সংসদ সবার সাড়া”,
“তুমি সুন্দর তাই চেয়ে থাকি, সে কি মোর অপরাধ; ছাত্র সংসদ করতে কেন এত অজুহাত”,
“ছাত্রের অধিকার, সংসদ হবে এবার”।
মানববন্ধনে ফোকলোর বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী ঐশ্বর্য বলেন, “আমরা গত ৫ আগস্ট নতুন প্রশাসন গঠনের পর থেকে বারবার দাবি জানিয়ে আসছি—অতি দ্রুত ছাত্র সংসদ নির্বাচন দেওয়া হোক। এখানে আমরা যারা আছি, সবাই জুলাইয়ের সহযোদ্ধা। আমরা যারা জুলাই আন্দোলন করেছি, আমাদের প্রত্যেকের দাবি ছিলো প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ দিতে হবে।
এই প্রশাসন যদি নির্বাচন না দেয়, তাহলে আমরা ভাববো তারা জুলাই স্পিরিটের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করছে না। শুধু এই বিশ্ববিদ্যালয় নয়, সরকারও যদি কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচনে বাধা দেয়, তাহলে আমরা বলবো—আপনারা জুলাই আন্দোলনের পক্ষে নন।
আমাদের রক্তের উপর দাঁড়ানো এই প্রশাসনের কাছে দাবি—আগামীকালের মধ্যে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে। অন্যথায় আমরা প্রতিদিন লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে যাবো এবং এক সময় প্রশাসনিক ভবন ঘেরাও করবো।”
আইন ও বিচার বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী জেনাস ভৌমিক বলেন, এই প্রশাসন গণঅভ্যুত্থানের ফসল হলেও, তা ভাবতে আমাদের লজ্জা হয়। এক বছর পার হয়ে গেছে, কিন্তু ছাত্র সংসদ বাস্তবায়নে তাদের কোনো আন্তরিকতা দেখা যায়নি। ভিসি স্যার দায়িত্ব নেওয়ার পর আমরা শিক্ষার্থীরা তার সঙ্গে কথা বলেছি, প্রথম সিন্ডিকেট সভায় সিন্ডিকেট সদস্যদের সঙ্গেও আলোচনা করেছি। তবুও ছাত্র সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রশাসনের কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেই।
আমরা স্পষ্ট জানিয়ে দিতে চাই—অনতিবিলম্বে ছাত্র সংসদ নির্বাচন কার্যকর না হলে আমরা আমরণ অনশনে যাবো এবং আন্দোলনের মাধ্যমে আমাদের ন্যায্য দাবি আদায় করবো। ছাত্র সংসদ কোনো সন্ত্রাসের কেন্দ্র নয়; বরং এটি না থাকলেই ক্যাম্পাসে সন্ত্রাস, সিট দখল, মাদক বিস্তার, ক্যাফেটেরিয়ায় চাঁদাবাজি বৃদ্ধি পায়। বিপরীতে, ছাত্র সংসদ থাকলে এসব রোধ হয় এবং এটি সব ছাত্র সংগঠনের জন্যই উপকারী। তাই অবিলম্বে ছাত্র সংসদ নির্বাচন দিতে হবে।
হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি বিভাগের ২০২৩-২৪ সেশনের শিক্ষার্থী মো. ইলিয়াস বলেন, “শেখ হাসিনা যেমন নির্বাচন ছাড়া স্বৈরাচার হয়ে উঠেছিলেন, আজ আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংগঠনগুলিও যদি ছাত্র সংসদ না থাকে তবে স্বৈরাচার হয়ে উঠবে। তারাও ছাত্রলীগের মতো সিট বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়বে। আমরা চাই না কোনো সিট বাণিজ্য কিংবা কোনো একক ছাত্র সংগঠনের দৌরাত্ম্য।
এই নজরুলের বুকে আমরা চাই অংশগ্রহণমূলক ছাত্র সংসদ। তাই আমরা চাই শিউলি মালা, অগ্নিবীণা এবং সবগুলো হল থেকে একেকটি অগ্নিকুণ্ড নেমে আসুক এবং শিক্ষার্থীরা নিজেদের অধিকার নিয়ে কথা বলুক।”
সমাবেশ শেষে তারা উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলমের সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং উপাচার্য ছাত্র সংসদ বিষয়ে আগামী মঙ্গলবার শিক্ষার্থীদের সাথে বসে গঠনতন্ত্র বিষয়ে আলোচনা করার সিদ্ধান্ত জানান।