মো. মাহিন খান, ঝালকাঠি প্রতিনিধি:
প্রবাদ আছে— যে জানে, সে করে। এ প্রবাদ যেন হুবহু মিলে যায় ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাহুল চন্দের সঙ্গে। ৩৫তম বিসিএসের প্রশাসন ক্যাডারের এই কর্মকর্তা দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই শহর উন্নয়ন থেকে শুরু করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় তাঁর কার্যকর পদক্ষেপ এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।
রাজাপুরবাসীর মুখে মুখে এখন পরিবর্তন আর উন্নয়নের গল্প। আলোহীন রাস্তা, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ কিংবা খেলাধুলার সুযোগহীনতা— এসব দীর্ঘদিনের সমস্যা একে একে সমাধান করে দিচ্ছেন ইউএনও রাহুল চন্দ।
রাজাপুরে দায়িত্ব নেওয়ার আগে উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও হাট-বাজার ছিল অন্ধকারাচ্ছন্ন। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে কিছু সোলার লাইট বসানো হলেও নিম্নমানের হওয়ায় দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। রাহুল চন্দের উদ্যোগে বর্তমানে রাজাপুর শহর ও বড় হাট-বাজারগুলোতে বসানো হয়েছে হ্যালোজেন ও স্ট্রিট লাইট। এতে রাতের চলাচলে মানুষের মধ্যে তৈরি হয়েছে নিরাপত্তাবোধ।
একসময় দোকানপাট, বাড়িঘর ও প্রতিষ্ঠানের সামনে যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলা হতো। এখন শহরের বিভিন্ন স্থানে বসানো হয়েছে ডাস্টবিন, আবর্জনা পরিবহনের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে জনবল। ফলে শহরের পরিবেশ আগের চেয়ে অনেক বেশি পরিচ্ছন্ন হয়েছে। উপজেলা পরিষদ চত্বরেও বজায় রাখা হচ্ছে কঠোর পরিচ্ছন্নতা, জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য নেওয়া হয়েছে কার্যকর ব্যবস্থা।
অসহায়দের জন্য শীতবস্ত্র বিতরণেও তিনি দেখিয়েছেন ভিন্নধর্মী উদাহরণ। অন্যদের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে বিতরণ না করে নিজ হাতে নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করে রাতের আধারে অসহায়দের বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছেন শীতবস্ত্র। এতে সাহায্যপ্রাপ্ত পরিবারগুলো সম্মান ও স্বস্তি পেয়েছে।
রাজাপুরের ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড়দের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল একটি ইনডোর। তাঁর প্রচেষ্টায় সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। এখন খেলোয়াড়রা সারা বছর অনুশীলনের সুযোগ পাচ্ছেন, যা তাদের মধ্যে নতুন উদ্দীপনা জুগিয়েছে।
হিন্দু ধর্মাবলম্বী হলেও ইউএনও রাহুল চন্দ সব ধর্মের প্রতিই সমান দৃষ্টিভঙ্গি রাখেন। ঈদের নামাজে তিনি ঈদগাহের পাশে দাঁড়িয়ে থাকেন যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে। এ উদ্যোগ তাঁকে সাধারণ মানুষের কাছে আরও গ্রহণযোগ্য করে তুলেছে।
রাজাপুর উপজেলা পরিষদের অর্থায়নে সম্প্রতি নির্মিত হয়েছে আধুনিক ও প্রশস্ত উপজেলা ঈদগাহ। প্রায় ১৭ হাজার বর্গফুট আয়তনের এই ঈদগাহটি স্থানীয় মুসল্লিদের দীর্ঘদিনের চাহিদা পূরণ করেছে। ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহা, জানাজা ও অন্যান্য ধর্মীয় সমাবেশ এখন থেকে এখানে অনুষ্ঠিত হবে সুষ্ঠু পরিবেশে।
রাজাপুরবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি কবিরাজ বাড়ি খাল খনন ও দখলমুক্তকরণ উদ্যোগও বাস্তবায়ন করেছেন রাহুল চন্দ। উপজেলা পরিষদের ভেতরে সৌন্দর্যবর্ধন, জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন সহজীকরণ, আটকে থাকা নামজারি দ্রুত সম্পন্ন করা— এসব কাজও চলছে তাঁর নেতৃত্বে। এছাড়া শিক্ষার মানোন্নয়নে তিনি নিয়মিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করছেন। সরকার নির্ধারিত সময়ের আগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটি দেওয়ার প্রবণতা কঠোরভাবে প্রতিরোধ করছেন।
রাজাপুরের সাধারণ মানুষের ভাষ্য— প্রশাসনের একনিষ্ঠতা ও ইচ্ছাশক্তি থাকলে অনেক কিছুই সম্ভব। ইউএনও রাহুল চন্দ প্রমাণ করেছেন, দায়িত্বে সততা থাকলে উন্নয়ন স্বাভাবিকভাবেই আসে। এর আগে অনেক ইউএনও এলেও তাঁর মতো এত উন্নয়ন আর কেউ করতে পারেননি। স্থানীয়রা মনে করছেন, রাহুল চন্দ যদি আরও দীর্ঘদিন রাজাপুরে দায়িত্বে থাকেন, তবে উপজেলাটি একটি আধুনিক মডেল উপজেলায় রূপ নেবে।