সানজানা তালুকদার, কুবি প্রতিনিধিঃ
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) সোচ্চার স্টুডেন্ট'স নেটওয়ার্কের উদ্যোগে 'ইমপাওয়ারিং ইউথ ফর হিউম্যান রাইটস অ্যাকশন্স' শিরোনামে মানবাধিকার বিষয়ক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।
১৫ আগস্ট (শুক্রবার) অর্থনীতি বিভাগের ২০২০- ২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী রায়হান আহমেদের সঞ্চালনায় ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের কনফারেন্স রুমে সকাল ১০ টায় সেমিনারটি শুরু হয়।
উক্ত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মুতাসিম বিল্লাহ ও সোচ্চার স্টুডেন্টস নেটওয়ার্ক কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপদেষ্টা ও বিজয়-২৪ হলের প্রাধ্যক্ষ ড. মোহাম্মদ মাহমুদুল হাসান খান।
এছাড়া, অতিথি বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সোচ্চার টর্চার ওয়াচডগ বাংলাদেশের সভাপতি ড. শিব্বির আহমেদ, মানবাধিকার ইউনিটের জাতীয় পরামর্শক মো. সানেকুদরাত সাকী এবং অ্যান্থ্রোপলজি ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার পিএইচডি গবেষক মুহাম্মদ আব্দুর রাকিব। সেমিনারটির সভাপতিত্ব করেন সোচ্চার স্টুডেন্টস নেটওয়ার্ক কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি মো. নাঈমুর রহমান ভুঁইয়া।
উক্ত সেমিনারে বক্তারা ক্যাম্পাস রযাগিং, ক্যাম্পাস রযাগিংয়ের কারণ, সমাধান ও সোচ্চার স্টুডেন্টস নেওয়ার্ক কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের করণীয় বিভিন্ন দায়িত্ব নিয়ে আলোচনা করেন। এছাড়াও সাধারণ শিক্ষার্থীদের মানবাধিকার বিষয়ক বিভিন্ন আইন সম্পর্কে ধারণা প্রদান করেন তাঁরা।
সোচ্চার টর্চার ওয়াচডগ বাংলাদেশের সভাপতি ড. শিব্বির আহমেদ বলেন, 'স্বাধীনতার আগে ও পরে ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক সহিংসতা থাকলেও এখন নতুন ধরনের সহিংসতা দেখা যাচ্ছে, ছাত্রদের ধরে নিয়ে হলে বা ক্যাম্পাসে রাতভর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, এমনকি হত্যার ঘটনা। এসব ঘটনায় ভুক্তভোগীর রুমমেট বা সহপাঠীরা জানলেও ভয় বা চাপে তারা কিছু করতে পারেন না। আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনা এর চরম উদাহরণ। রাজনৈতিক মত, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লাইক দেওয়া কিংবা তুচ্ছ কারণে শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতন চালানো হয়।'
তিনি আরও বলেন, '৮৫% শিক্ষার্থী হলে এবং ১৫% ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে টর্চারের শিকার হন। ফ্যাসিবাদী সরকার ক্যাম্পাসে আতঙ্কের সংস্কৃতি তৈরি করেছে। ক্যাম্পাসগুলো স্বাধীন হলে এই ফ্যাসিবাদ টিকত না।'
সহকারী প্রক্টর মুতাসিম বিল্লাহ বলেন, 'ফ্যাসিবাদের আমলে তাদের অঙ্গসংগঠন ছাত্রলীগ শিক্ষার্থীদের ওপর মানসিক অত্যাচার করতো। শুধু শিক্ষার্থীরাই নয় শিক্ষকদের উপরও নানানভাবে মনিটরিং করা হতো। এমনকি তখন মানবাধিকার কর্মীরাও লীগের অধীনে থাকতো। তাদের আড্ডাখানাকেই মানবাধিকার সংগঠন নাম দিয়ে পরিচালনা করতো। মূলত যে-সকল স্থান থেকে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সুযোগ ছিল সে সকল ক্ষেত্রগুলোতে তাদের কর্মীরা নিয়োজিত থাকতো। বর্তমানে ফ্যাসিবাদের পতন হলেও ক্যাম্পাসে ফ্যাসিবাদের প্রথা এখনো রয়ে গেছে। গত ১৭ বছর ফ্যাসিবাদের প্রভাবে আমরা আমাদের যৌক্তিক দাবি বাস্তবায়নের উপায় ভুলে গেছি।'
তিনি আরও বলেন, 'মানবাধিকার কর্মীদের দুইটা বিষয়ের প্রতি নজর রাখা দরকার প্রথমটি হচ্ছে হলে মতামত প্রকাশ করার বাধাগুলো লেখনীর মাধ্যমে অথবা বলার মাধ্যমে চিহ্নিত করা এবং দ্বিতীয়ত নিজের মত প্রকাশের স্বাধীনতার দ্বারা অন্যদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা যেন বাধাগ্রস্ত না হয় এ বিষয়টি বিবেচনায় রাখা।'
সোচ্চার স্টুডেন্টস নেটওয়ার্ক কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ মাহমুদুল হাসান খান বলেন, 'সবচেয়ে বড় রযাগটা যেখানে হয় সেটা হচ্ছে হলে। প্রশাসন নানা উদ্যোগ নিয়েছে এই রযাগিং এর বিরুদ্ধে। দুর্ভাগ্যবশত, তারপরও মার্কেটিং বিভাগে রযাগিং হয়েছে। কিন্তু, যখন মার্কেটিং বিভাগে শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার করা হয়ে ঠিক তখনও লোকপ্রশাসন বিভাগে টানা ১৬ দিন ধরে রযাগিং হচ্ছিলো। এই রযাগিং গুলা যাতে বন্ধ করা হয় এবং ডকুমেন্ট করা হয় সেদিকেও লক্ষ রাখতে হবে।'
সোচ্চার স্টুডেন্টস নেটওয়ার্ক কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি মো. নাঈমুর রহমান ভুঁইয়া বলেন, 'সোচ্চার'কে আমরা আমাদের ক্যাম্পাসে একটা লিডিং ক্লাব হিসেবে গড়ে তুলব। আর স্টুডেন্টদের কল্যাণে যেন কাজ
করতে পারি সেটা আমরা নিশ্চিত করব এবং স্টুডেন্টরা যেন নির্ভয়ে ক্যাম্পাসে চলাচল করতে পারে নিজের বাড়ির মতো মনে করতে পারে এবং নিরাপদে ক্লাস করতে পারে সেটা আমরা নিশ্চিত করব।'
উল্লেখ্য, উক্ত সেমিনার শেষে সেমিনারে অংশগ্রহণকারী ৫০ জন শিক্ষার্থীদের মাঝে সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়।