আমির ফয়সাল, জাবি প্রতিনিধিঃ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের বের করতে অভিযান চালিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
তবে অভিজান পরিচালনার সময় দুই দফায় বাঁধার মুখে পরে প্রশাসন।
শনিবার রাত নয়টা থেকে আ ফ ম কামালউদ্দিন হলে হল প্রশাসন ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একত্র অভিযান শুরু করে। চারতলা থেকে অভিযান শুরু হয়। এসময় বেশ কয়েকটি কক্ষ সিলগালা করা হয় সেই সাথে হলে অবস্থানরত মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের রবিবার সকাল দশটার মধ্যে হল ছাড়ার নির্দেশ দেন।
অভিযান পরিচালনার সময় আ ফ ম কামাল উদ্দিন হলের প্রাধ্যাক্ষ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এ কে এম রাশিদুল আলম , কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক আব্দুর রব, উপ–উপাচার্য (প্রশাসন) সোহেল আহমেদ ও উপ–উপাচার্য (শিক্ষা) মাহফুজুর রহমানসহ বিভিন্ন হলের প্রাধ্যক্ষরা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে চারতলা অভিযান শেষ করে তিনতলায় অভিযান পরিচালনার সময় সদ্য শিক্ষা কার্যক্রম শেষ হওয়া ২০১৮–২০১৯ শিক্ষাবর্ষের (৪৮ ব্যাচের) শিক্ষার্থীদের বাধার মুখে পরে প্রশাসন। এসময় ইংরেজি বিভাগের শেখ হাফিজুর রহমান ৪৮ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের পক্ষে হল প্রাধ্যাক্ষের কাছে ৪৮ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের দাবি তুলে ধরেন। এসময় তারা মেয়াদোত্তীর্ণ অন্য সকল ব্যাচের শিক্ষার্থীদের বের করার পর ৪৮ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের হল থেকে বের করার দাবি জানান। সেই সাথে সব হলে একযোগে অভিযান পরিচালনা করতে বলেন। এসময় হল প্রভোস্ট, উপ-উপাচার্য প্রশাসন এর সাথে তাদের বাকবিতন্ডা হয়।
এদিকে হলে অভিযান শেষে প্রভোস্টের কক্ষে অবস্থান কালে সেখানে কয়েকটি হল থেকে এসে ২০১৭-২০১৮ শিক্ষাবর্ষের (৪৭ ব্যাচের) শিক্ষার্থীরা জড় হয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন।
রাত সাড়ে এগারোটার দিকে মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের সাথে কথা না বলে ফিরে যাওয়ার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষের গাড়িতে কয়েকজন মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষার্থী আঘাত করে। এতে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, অভিযান পরিচালনার একপর্যায়ে হলের একদল মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষার্থী হল ছাড়বেন না জানিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। এরপর অভিযান পরিচালনায় অংশ নেওয়া শিক্ষকেরা হলের প্রাধ্যক্ষ কক্ষে আলোচনায় বসেন। আলোচনার একপর্যায়ে রাত সাড়ে এগারোটার দিকে কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক আব্দুর রব নিজের গাড়িতে করে চলে যাচ্ছিলেন। তখন মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের কয়েকজন তাঁর গাড়িতে হাত দিয়ে আঘাত (থাপ্পড়) করেন।
এই পরিস্থিতিতে অধ্যাপক আব্দুর রব গাড়ি থেকে নেমে তাঁদের সঙ্গে কথা বলেন। কিছুক্ষণের মধ্যে সেখানে প্রক্টর আসেন এবং ‘এটা কোন ধরনের আচরণ’ তা জানতে চান। তখন শিক্ষার্থীরা উত্তেজিত হয়ে বিভিন্ন স্লোগান দেন। পরে প্রশাসনের শীর্ষ ব্যক্তিরা এসে শিক্ষার্থীদের শান্ত করেন
মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের অনেকে আরও কিছু দিন হলে থাকতে চান।
বিক্ষোভকারী মেয়াদ উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পরপরই তারা গণরুমে ছিলেন দুই থেকে তিন বছর। ওই সময়টা তাদের জীবন থেকে নষ্ট হয়েছে। তাদের পড়াশোনা শেষ হয়েছে। এখন চাকরির প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তাঁরা এখনই হল ছাড়বেন না। তাঁদের আরেকটু সময় প্রয়োজন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিক্ষোভকারী এক শিক্ষার্থী প্রথম আলোকে বলেন, হলে বর্তমানে কোনো সিট সংকট নেই। নতুন শিক্ষার্থীরা আসার আগেই আমরা হল ছেড়ে দেব, তা আমরা কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। কিন্তু প্রশাসন হঠকারী সিদ্ধান্ত নিয়ে আমাদের কক্ষে অভিযান চালিয়েছে। কয়েকটি কক্ষ সিলগালা করেছে। চাইলেই তো আর হল থেকে যখন-তখন বের হওয়া যায় না।
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও আ ফ ম কামালউদ্দিন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক একেএম রাশিদুল আলম বলেন, জাকসু নির্বাচনকে সুষ্ঠু করতে আমরা মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের হল থেকে চলে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেছি। হলে মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের রেখে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না। তাই অভিযান পরিচালনা করেছি। একে একে সব হলে অভিযান পরিচালনা করা হবে। সাবেক শিক্ষার্থীরা আমাদের এই কাজে সহায়তা করবে বলে আশা করছি।