রবিবার, ১৭ অগাস্ট ২০২৫, ০১:৪৮ পূর্বাহ্ন
মোহাম্মদ ছিদ্দিক, কটিয়াদী (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ
বাড়ির উঠানে খাদ্যের স্বাদ বৃদ্ধিকরা ও ভেষজগুণে সমৃদ্ধ জনপ্রিয় মসলা বস্তায় আদা চাষ করে সাড়া ফেলেছেন কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলা আচমিতা ইউনিয়নের অষ্টঘড়িয়া গ্রামের মোঃ তুহিন মিয়া নামের এক কৃষক।
স্বল্প জায়গায়, কম সময়ে বস্তায় আদা চাষে স্বাভাবিক চাষ পদ্ধতির চেয়ে তিনগুণ ফলন পাওয়ার আশা এই কৃষকের। উৎপাদন খরচ বাদেও কয়েক গুণ লাভ দেখে আগ্রহী হচ্ছেন অন্য চাষিরাও।
জানা যায়,কটিয়াদী কৃষি অফিসের পরামর্শে প্রনোদনার বীজ ও সারের সহযোগিতা পেয়ে প্রথম বারের মত তিনি বাড়ির আঙ্গিনায় বস্তায় ব্যাগিং পদ্ধতিতে বারি-১ জাতের আদা লাগিয়ে সাড়া ফেলেছেন। প্রথমে ছাই, জৈব সার ও বালু মিশিয়ে মাটি প্রস্তুত করে পরীক্ষামূলকভাবে বাড়ির আঙ্গিনায় ১০০০ বস্তায় মাটি ভরাট করে টবের মতো করেন তিনি। প্রতিটি বস্তায় তিন থেকে চারটি করে আদার চারা রোপণ করেন। তার দেখাদেখি এখন অষ্টঘড়িয়া গ্রামের অনেকেই বস্তায় আদা চাষ করতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।
আদা চাষি মোঃ তুহিন মিয়া বলেন,“এভাবে আদা চাষে সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো,বাড়ির আঙ্গিনায় খুবই সীমিত খরচ আর অল্প শ্রমে চাষ করা সম্ভব। গাছে পানির চাহিদা অনেক কম। আবার সার বা কীটনাশক ব্যবহার করতে হয় খুবই কম।মাঝে মধ্যে পাতা মরা রোগ প্রতিরোধে কিছু ওষুধ স্প্রে করতে হয়। এর বাইরে তেমন কোনো পরিচর্যা করতে হয় না। এভাবে আদা চাষ করে সহজেই লাভবান হওয়া যায়।
”তিনি আরও বলেন,“প্রথম অবস্থায় অল্প পরিসরে চাষ করেছি। এ বছর যদি লাভ ভালো হয়, তাহলে আগামীতে আরও বড় পরিসরে আদা চাষ করবো। বস্তায় আদা চাষ করতে মোট খরচ প্রায় ২৫০০০ টাকা বাজার দর ভাল থাকলে বিক্রি হবে ১ লক্ষ টাকা যা লাভ হবে ৭৫ হাজার টাকা। একেকটি বস্তায় আদা পাওয়া যাবে প্রায় দেড় থেকে দুই কেজি। বিভিন্ন গ্রাম থেকে আদা চাষ দেখতে আসেন অনেকে।
একই গ্রামের ডা. আঃ হাসিম খান বলেন, এভাবে আদা চাষ এর আগে আমি দেখিনি। এটি দেখার পরে আমাদের মধ্যে আগ্রহ তৈরি হয়েছে।বাড়ির আশেপাশে আমার অনেক জায়গা পড়ে আছে। তুহিনের কাছ থেকে বীজ নিয়ে আদা চাষ করবো। বস্তায় আদা চাষ করলে ব্যাপক লাভের সম্ভাবনা রয়েছে।
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা বরকত উল্লাহ পাঠান বলেন, বস্তায় আদা চাষ অত্যন্ত লাভজনক।তুহিন মিয়াকে দেখে অনেক কৃষক পতিত জমিতে বস্তায় আদা চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। আমরাও তাদের সার্বক্ষণিক পরামর্শ ও উৎসাহ দিচ্ছি। অন্য কৃষকদের মধ্যে এটি সম্প্রসারিত হলে এলাকায় মসলা উৎপাদন আরও সমৃদ্ধ হবে।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ শফিকুল ইসলাম ভূইয়া বলেন, আদা চাষে খুব বেশি খরচ নেই। একটি বস্তায় ১০ কেজি মাটি, চার কেজি জৈব সার, এক কেজি ভার্মি কম্পোস্ট দিতে হবে। উপজেলায় ১৭ হাজার বস্তায় আদার চাষ হয়েছে। স্বল্প খরচে বস্তা পদ্ধতিতে আদা চাষ করে পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বাড়তি আয় ও লাভবান হতে পারবেন চাষিরা। উপজেলায় দিনদিন বস্তায় আদা চাষির সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এজন্য আদা চাষিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করা হচ্ছে।
2025 © জনপদ সংবাদ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
প্রয়োজনে যোগাযোগঃ ০১৭১২-০৬৮৯৫৩