মঙ্গলবার, ১২ অগাস্ট ২০২৫, ০৭:১৯ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনামঃ
বাঘাইছড়িতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক যুব দিবস উদযাপন সৌদিতে আকামা প্রতারণায় দালাল হাতিয়ে নিল লাখো টাকা মানিকগঞ্জ জজকোর্টের আইনজীবী ছালেকের বিরুদ্ধে সনদ বাতিলের দাবিতে গণপিটিশন শিবগঞ্জে আরাফাত রহমান কোকোর জন্মবার্ষিকীতে উপজেলা বিএনপির দোয়া মাহফিল কটিয়াদীতে যুব দিবসে র‍্যালি, আলোচনা ও ঋণ বিতরণ অনুষ্ঠিত কুড়িগ্রামে নানা আয়োজনে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক যুব দিবস-২০২৫ পালিত মিটফোর্ড হত্যাকাণ্ড ও মাইলস্টোন দুর্ঘটনার চিত্র মুছতে প্রশাসনের নির্দেশনা জাবির কেন্দ্রীয় মসজিদে নারী শিক্ষার্থীদের জন্য পৃথক নামাজ কক্ষ ও ওয়াশরুমের দাবিতে স্মারকলিপি কুয়েটের রোকেয়া হলের টাকায় জমি কিনার অভিযোগ প্রভোস্টের নামে কুয়াকাটায় সাংবাদিক তুহিন হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা কলাপাড়ার পশ্চিম লোন্দা গ্রামে টেকসই বেড়িবাঁধের দাবীতে ভেলায় ভেসে সংবাদ সম্মেলন কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের দাবিতে আমরণ অনশনে মাভাবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা জয়পুরহাটে জনদুর্ভোগ লাঘবে জামায়াতের নিজস্ব অর্থায়নে রাস্তা সংস্কার কাজের উদ্বোধন দুমকিতে সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি শফিক খান গ্রেফতার সন্দ্বীপে আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সদস্য ইয়াবাসহ গ্রেফতার জয়পুরহাট শহর জামায়াতের উদ্যোগে নির্বাচনী কর্মপরিকল্পনা সভা অনুষ্ঠিত আমতলীতে টাইফয়েড জ্বর প্রতিরোধে ৫৫ হাজার শিশু পাবে বিনা মূল্যে টিকা সন্দ্বীপে শীর্ষ সন্ত্রাসী ও অস্ত্র কারিগর সোহেল মাদকসহ গ্রেফতার সাংবাদিক তুহিন হত্যার বিচার দাবিতে পত্নীতলায় মানববন্ধন চরভদ্রাসন থানায় দালালমুক্ত পুলিশি সেবা: ওসিরজিউল্লাহ খানের ঘোষণা

সৌদিতে আকামা প্রতারণায় দালাল হাতিয়ে নিল লাখো টাকা

আনোয়ারুল ইসলাম রনি, রংপুর প্রতিনিধিঃ

লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার সারপুকুর ইউনিয়নের বালাপাড়া গ্রামে দালাল শাহ আলম ও তার ছেলে জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে সৌদি আরবে উচ্চ বেতনের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নেওয়ার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, একই এলাকার একাধিক যুবকের কাছ থেকে ৭-৮ লক্ষ টাকার বিনিময়ে দুই বছরের “আকামা” দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সৌদিতে পাঠানো হয়। কিন্তু বাস্তবে তাদের মাত্র তিন মাসের ফ্রি ভিসায় পাঠানো হয় এবং পরবর্তীতে পরিকল্পিতভাবে লক্ষাধিক টাকা আত্মসাৎ করে এই দালাল চক্র।

ভুক্তভোগী প্রবাসী লুৎফর রহমান ও আল আমিন ইসলাম সহ শাহজালাল সৌদি আরব থেকে জানান, আমাদের উচ্চ বেতনের চাকরির কথা বলে শাহ আলম বিদেশে পাঠান। কিন্তু এখানে এসে দেখি, কোনো কোম্পানি বা চুক্তিবদ্ধ কাজ নেই। বরং আমাদের অন্য দালালের কাছে হস্তান্তর করে দিয়ে তিন মাস বিনা বেতনে কাজ করানো হয়। বেতন চাইলে মরুভূমির মাঝখানে একটি ঘরে আটকে রেখে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হয়। এরপর পরিবার থেকে টাকা আদায়ের জন্য চাপ দেওয়া হয় এবং আমাদের পাসপোর্ট কেড়ে নেওয়া হয়।

তারা আরও জানান, বর্তমানে তারা চরম দুরবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন। খাবারের অভাবে অনেক সময় ডাস্টবিন থেকে খাবার সংগ্রহ করতে বাধ্য হচ্ছেন। জীবন বাঁচাতে কৌশলে নির্যাতনকারীদের হাত থেকে সরে এসে দেশে ফেরার চেষ্টা করছেন তারা।

ভুক্তভোগীদের গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, পরিবারগুলোতে নেমে এসেছে শোক ও হতাশার গভীর ছায়া।

আলামিনের মা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন ভিটামাটি শেষ করে ঋণ করে ছেলেকে অনেক আশা নিয়ে সৌদিতে পাঠাইছি এই শাহ আলমের মিথ্যা আশায় এখন শুনি আমার ছেলে মৃত্যুর পথে কিভাবে দেশে ফেরত আসবে কেউ জানে না আমি শাহ আলমের বাড়িতে বারবার যাই আর শাহ আলমের মিথ্যা আশা নিয়ে ফিরে আসি। আমার সন্তানকে আমার বুকে ফিরিয়ে দিন। ছেলেকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারব না।

আল আমিনের বাবা বলেন, কার কাছে বিচার চাইবো? শাহ আলমের ছেলে জাহাঙ্গীর প্রভাব খাটিয়ে আমাদের হুমকি দিচ্ছে। আইনের আশ্রয় নিয়েও কোনো বিচার পাচ্ছি না। আমি প্রধান উপদেষ্টার কাছে অনুরোধ করছি—আমার ছেলেকে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করুন। জমি বন্ধক রেখে ও ঋণ তুলে ৭ লক্ষ ২০ হাজার টাকা অনেক আশা নিয়ে শাহ আলমকে দিয়েছিলাম, যেন ছেলে বিদেশে গিয়ে টাকা উপার্জন করে দেশে পাঠাবে। কিন্তু সেই স্বপ্ন আজ মৃত্যুর পথে ঠেলে দিয়েছে। যদি এর সমাধান না পাই আমাদের আত্মহত্যা ছাড়া কোনো পথ থাকবে না।

লুৎফর রহমানের মা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন শাহ আলমের হাতে উনিশ শতক জমি বিক্রি করে ৭ লক্ষ ২০ হাজার টাকা তুলে দেই। তিনি মিষ্টি কথা বলে আমাদের সর্বস্ব কেড়ে নিয়েছেন। ছেলে এখন মৃত্যুর মুখে, আর শাহ আলম মিথ্যা আশা দিয়ে চুপ থাকতে বলে। আমি প্রশাসনের কাছে বিচার চাই আমার বুকের ধনকে ফিরিয়ে দিন। ছেলের চিন্তায় আমি অসুস্থ হয়ে পড়েছি, হয়তো বেশি দিন বাঁচবো না। মরার আগে অন্তত ছেলের মুখ দেখে যেতে চাই।

লুৎফর রহমানের বোন বলেন আমার ভাইকে মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে দুই বছরের আকামা দেওয়ার কথা বলে আমাদের থেকে ৭ লক্ষ ২০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এখন আমার ভাই মৃত্যুর পথে। আমি সরকারের কাছে বিচার চাই এবং এই দালাল চক্রের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি, যাতে আর কোনো বোন তার ভাইয়ের কষ্ট দেখতে না হয়।

দালাল চক্রের কবলে পড়ে নিঃস্ব হয়ে যাওয়া সুমন মিয়া বলেন, শাহ আলম আমাকে উচ্চ বেতনের চাকরি ও দুই বছরের আকামা দেওয়ার কথা বলে ৭ লক্ষ টাকা নিয়ে সৌদি পাঠায়। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখি, ওই নামে কোনো কোম্পানি নেই। আমাকে এক চক্রের কাছে হস্তান্তর করা হয়, যারা বিনা বেতনে কাজ করিয়ে অমানবিক নির্যাতন চালায়।

তিন মাসের আকামা দিয়ে প্রতারণা করে। জীবন বাঁচাতে কৌশলে পালিয়ে এয়ারপোর্টে গেলে পুলিশ আমাকে গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠায়। দীর্ঘদিন জেল খেটে দেশে ফিরি। শাহ আলম প্রভাবশালী মহলের সাথে মিলে আমাদের হুমকি দেয়। আমার জীবনের অনেক বড় একটা অংশ এই দালাল শাহ আলম শেষ করে দিয়েছে আমি সরকারের কাছে আবেদন করছি যারা সৌদিতে মানবেতর জীবনযাপন করছে, তাদের আলোচনার মাধ্যমে দেশে ফিরিয়ে আনুন এবং এই দালাল সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিন। আমার মত এরকম ভয়ংকর অবস্থা যেন অন্য কারো না হয়।

বালাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শফিকুল ইসলাম বলেন, ঘটনাটি জানার পর আমি অত্যন্ত মর্মাহত হয়েছি। সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি যেন ওই যুবকদের দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনা হয় এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর সমস্যার সমাধান করা হয়। একই সঙ্গে দোষীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করা হোক, যাতে ভবিষ্যতে আর কেউ এ ধরনের প্রতারণার শিকার না হয়।

ডা. গোলাম রব্বানী পাটোয়ারী বলেন, আমাদের এলাকার একাধিক যুবকের সাথে শাহ আলম সিন্ডিকেট বহুদিন ধরে প্রতারণা করে আসছে। আমি সম্মানিত প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস সাহেবের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি যেন মানবিক দিক বিবেচনায় দ্রুত তাদের সন্তানদের দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হয়। একই সঙ্গে এই দালাল সিন্ডিকেটকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক, যাতে ভবিষ্যতে বাংলাদেশে আর কোনো সিন্ডিকেট এ ধরনের অপরাধ করার সাহস না পায়। এছাড়াও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর ন্যায়বিচার ও অধিকার আদায়ে সরকার প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করবে বলে আমি আশা করছি।

বালাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পূর্ণচন্দ্র রায় বলেন, ভুক্তভোগী আল-আমিন আমার প্রাক্তন ছাত্র। শাহ আলম তাকে সৌদি আরবে পাঠানোর প্রক্রিয়ায় আমার উপস্থিতিতেই ১০ হাজার টাকার লেনদেন হয়েছিল। আজ সেই শিক্ষার্থীর এ অবস্থায় আমি অত্যন্ত মর্মাহত। আমি চাই, আল-আমিনসহ এলাকার যেসব যুবকের সাথে প্রতারণা হয়েছে, তাদের জন্য সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত হোক। একই সঙ্গে সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি যেন দ্রুত তাদের দেশে ফিরিয়ে এনে পরিবারের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়।

এছাড়াও ভুক্তভোগী লুৎফর রহমান জানান বিদেশ থেকে শাহ আলমকে দেশে ফেরার জন্য চাপ দিলে এবং বিষয়টি গণমাধ্যমকে জানানোর কথা বললে দালাল শাহ আলম অন্যান্য ভুক্তভোগীদের নির্দেশ দেন, লুৎফরকে মুখ বেঁধে ইচ্ছামতো পেটাও, আর যদি পেটাতে পারো তবে তোমাকে টাকা দেওয়া হবে।

এ ঘটনায় এলাকাবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করে অবিলম্বে দালাল চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা, ভুক্তভোগীদের দেশে ফিরিয়ে আনা এবং তাদের অর্থ উদ্ধারের জোর দাবি জানিয়েছেন। তারা আশা করছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের তাৎক্ষণিক হস্তক্ষেপে প্রবাসী যুবকরা নিরাপদে দেশে ফিরতে পারবে এবং ভবিষ্যতে আর কেউ এই সিন্ডিকেটের ফাঁদে পড়বে না।

এ বিষয়ে আদিতমারী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ আলী আকবর বলেন, “গত দুই মাসে এ ধরনের কোনো অভিযোগ আমি পাইনি। তবে অভিযোগ পেলে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন

2025 © জনপদ সংবাদ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

প্রয়োজনে যোগাযোগঃ ০১৭১২-০৬৮৯৫৩