কুয়েট প্রতিনিধিঃ
১১ই আগস্ট, ২০২৫ (সোমবার): খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) রোকেয়া হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মো. আশরাফুল আলমের বিরুদ্ধে হলের তহবিল থেকে ৩৪ লাখ টাকা উত্তোলন করে ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে।
বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর দ্রুত ছয় মাসের মধ্যে সমন্বয়ের আশ্বাস দিলেও, একদিনেই বিপুল পরিমাণ অর্থ উত্তোলন করায় শুরু হয়েছে নানা আলোচনা ও সমালোচনা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সাতটি হলের মধ্যে রোকেয়া হল একমাত্র ছাত্রী হল। অভিযোগ রয়েছে, গত ২৯ জুলাই জনতা ব্যাংকের কুয়েট কর্পোরেট শাখা থেকে প্রভোস্ট নিজে স্বাক্ষর করে ৩৪ লাখ টাকা উত্তোলন করেন। নিয়ম অনুযায়ী, হলের তহবিল থেকে টাকা উত্তোলনে প্রভোস্ট এবং সহকারী প্রভোস্টের যৌথ স্বাক্ষর প্রয়োজন। কিন্তু সহকারী হল প্রভোস্ট তাসমি আক্তার জানান, “আমি অ্যামাউন্ট ছাড়া চেকে স্বাক্ষর করে দিয়েছিলাম, পরে সেটিতে ৩৪ লাখ টাকা বসিয়ে তোলা হয়েছে।”
ব্যাংক কর্তৃপক্ষের ভাষ্যমতে, হিসাবধারীর স্বাক্ষর মিললে তারা টাকা দিতে বাধ্য। ব্যাংক ম্যানেজার আব্দুল হামিদ বলেন, “১০ লাখ টাকার বেশি উত্তোলন হলে বাংলাদেশ ব্যাংকে রিপোর্ট করা হয়। সে অনুযায়ী নিয়ম মেনেই টাকা উত্তোলন করা হয়েছে।”
অভিযুক্ত প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মো. আশরাফুল আলম বলেন, “পারিবারিক কারণে টাকাটা উঠানো হয়েছিল। পরে সমন্বয়ের জন্য সময় চেয়েছি। ডিসেম্বরের মধ্যে কিস্তিতে টাকা ফেরত দেওয়া হবে।” তবে পারিবারিক প্রয়োজনে হলের টাকা ব্যবহারের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, “একটি লোনের জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। লোন পেলে টাকাটি জমা দেওয়া হবে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সূত্র দাবি করেছে, ওই প্রভোস্টের বিরুদ্ধে আরও বিভিন্ন আর্থিক অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, সম্প্রতি তিনি জাব্দিপুর এলাকায় জমি কিনেছেন। এছাড়া হল প্রভোস্ট হওয়ার পরপরই এক আত্মীয়কে হলে চাকরি দেন। এমনকি অর্থের বিনিময়ে প্লাম্বার, লাইব্রেরিয়ান, ঝাড়ুদার ও সুইপার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
প্রসঙ্গত, গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে রোকেয়া হলের দায়িত্ব গ্রহণ করেন অধ্যাপক আশরাফুল আলম। শিক্ষার্থীদের মাঝে তখন থেকেই তার ভূমিকা নিয়ে নানা প্রশ্ন রয়েছে।
এ বিষয়ে কুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাকসুদ হেলালী বলেন, “হলের টাকা কিভাবে উত্তোলন করা হলো, সেটা হল প্রশাসনই ভালো জানে। লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এই ঘটনাকে ঘিরে কুয়েটের শিক্ষক-শিক্ষার্থী মহলে উত্তেজনা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, একজন দায়িত্বশীল প্রশাসক কীভাবে শিক্ষার্থীদের আবাসিক তহবিল থেকে ব্যক্তিগত প্রয়োজন মেটাতে পারেন?