শুক্রবার, ০৮ অগাস্ট ২০২৫, ০৩:৫৫ অপরাহ্ন
আবু তাহের, নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিঃ
জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় দুই সাংবাদিককে হেনস্থা এবং পেটানোর হুমকি প্রদানের ঘটনায় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক জাহিদুল ইসলাম হৃদয়কে কারণ দর্শানোর (শোকজ) নোটিশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল।
বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) রাতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ছাত্রদলের দায়িত্বশীল পদে আসীন থেকে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগের ভিত্তিতে তার বিরুদ্ধে কেন স্থায়ী সাংগঠনিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, এই মর্মে আগামী ৪৮ ঘন্টার মধ্যে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে লিখিত ব্যাখ্যা প্রদানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার সকালে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় সাংবাদিকদের সাথে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ এবং মারার হুমকি প্রদানের ঘটনায় প্রশাসনিক ভবনের সামনে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত ক্যাম্পাস সাংবাদিকরা। গত মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, ট্রেজারার, রেজিস্ট্রার, ডিনদের সামনেই সাংবাদিকদের মারার হুমকির ঘটনায় প্রশাসন, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ এবং বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় সাংবাদিকরা তীব্র নিন্দা জানান। পাশাপাশি একাধিকবার ফেল করে ছাত্রত্ব হারানো এই ছাত্রদল নেতা রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করে ‘বিশেষ বিবেচনায়’ কিভাবে পুনরায় ভর্তি হয়েছে সেটি নিয়েও প্রশ্ন তোলেন সাংবাদিকরা।
মানববন্ধন শেষে উপাচার্যের সাথে সাংবাদিকরা সাক্ষাৎ করে এ ঘটনার প্রেক্ষিতে প্রশাসনের অবস্থান সম্পর্কে জানতে চান। এসময় উপাচার্য আলোচনা সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন। পরে সাংবাদিকরা উপাচার্য বরাবর লিখিত অভিযোগ প্রদান করেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও দেশ রূপান্তরের প্রতিনিধি শাহাদৎ হোসেন, প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি নবাব মোঃ শওকত জাহান কিবরিয়া, সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জান্নাতী বেগম, খবরের কাগজের আমিরুল ইসলাম বাপন, আমার বার্তার মুমিন ইসলাম সবুজসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকরা এসময় উপস্থিত ছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, অনুষ্ঠানে আগত অতিথিদের সম্মাননা স্মারক প্রদানের ছবি ও ভিডিও ধারণের সময় বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের সামনে থেকে সরে যেতে বলেন শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক জাহিদুল ইসলাম হৃদয়। এসময় সময়ের আলোর প্রতিনিধি আশরাফুল আলম পেশাগত কাজে চিত্রধারণ করার কথা জানালে তাকে ‘বেয়াদব’ বলে সম্বোধন করে থাপড়ানোর হুমকি দেন ছাত্রদলের এই নেতা। পরে অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিককে মারার হুমকির বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের এনটিভির প্রতিনিধি রোহান চিশতীকে একাধিকবার মারতে উদ্যত হন হৃদয়। এসময় প্রক্টর, অন্যান্য শিক্ষক এবং ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা হৃদয়কে সরিয়ে নেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জাহিদুল ইসলাম হৃদয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের স্নাতক ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক পরিচয়ের সুবিধা নিয়ে ছাত্রত্ব টিকিয়ে রাখতে আবারও বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করেন। একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্তে বিশেষ বিবেচনায় ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে স্নাতকোত্তরে ভর্তি হয়েছেন বলে জানান সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. বখতিয়ার উদ্দিন। একাধিক সূত্র মতে, হৃদয় বর্তমান শাখা ছাত্রদলের আরেক যুগ্ম-আহ্বায়ক ও সভাপতি পদপ্রার্থী ইমরান আহমেদ ফরাজির অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
2025 © জনপদ সংবাদ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
প্রয়োজনে যোগাযোগঃ ০১৭১২-০৬৮৯৫৩