আনোয়ারুল ইসলাম রনি, রংপুর প্রতিনিধি:
রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগে সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে নিজ বাসা থেকে তাকে আটক করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ডিএমপির গণমাধ্যম শাখার উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলায় কলিমউল্লাহসহ মোট পাঁচজনকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি নির্মাণ প্রকল্প—শেখ হাসিনা ছাত্রী হল ও ড. ওয়াজেদ মিয়া রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউট ভবনের কাজে প্রায় ৪ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তোলা হয়েছে।
এই মামলায় অপর আসামিরা হলেন: সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এ কে এম নূর-উন-নবী, সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাহাঙ্গীর আলম, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক মো. আবদুস সালাম বাচ্চু এবং এম এম হাবিবুর রহমান।
দুদকের অনুসন্ধান অনুযায়ী, প্রকল্প বাস্তবায়নে অনুমোদিত ডিজাইন ও প্রকল্প প্রোফাইল (ডিপিপি) উপেক্ষা করে নকশায় পরিবর্তন আনা হয় এবং প্রায় ৩০ কোটি টাকার চুক্তি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়াই করা হয়। এ ছাড়া, প্রকল্পে নির্ধারিত নিয়ম অমান্য করে ঠিকাদারকে আর্থিক সুবিধা প্রদানের জন্য নিরাপত্তা জামানতের বিপরীতে ‘না-আপত্তি সনদ’ দিয়ে ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে সহায়তা করা হয়—ফলে রাষ্ট্রীয় অর্থ প্রায় ৪ কোটি টাকা ঝুঁকির মুখে পড়ে।
মামলার অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, প্রকল্পের অগ্রিম বিল প্রদানের ক্ষেত্রে সরকারি নীতিমালা অনুসরণ করা হয়নি। এমনকি যথাযথ মূল্যায়ন ছাড়াই অস্বাভাবিক দরপ্রস্তাব গ্রহণ করে কাজের অর্ডার দেওয়া হয়। সরকারি ক্রয় বিধিমালা লঙ্ঘন করে দ্বিতীয় পরামর্শক নিয়োগের ঘটনাও রয়েছে এই অনিয়মের তালিকায়।
উল্লেখ্য, অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ ২০১৭ সালের ৩১ মে থেকে ২০২১ সালের ৩১ মে পর্যন্ত বেরোবির উপাচার্যের দায়িত্বে ছিলেন। এর আগে তিনি বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) উপ-উপাচার্য হিসেবেও কাজ করেছেন। জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি জাতীয় পর্যায়ে পরিচিতি পান।
তার উপাচার্য থাকা সময়কালজুড়ে নানা বিতর্ক ও অভিযোগে জর্জরিত ছিলেন। শিক্ষকদের একটি সংগঠন 'অধিকার সুরক্ষা পরিষদ' দাবি করেছে, দায়িত্বে থাকার ১,৪৬০ দিনের মধ্যে তিনি ১,২২০ দিনই ক্যাম্পাসে অনুপস্থিত ছিলেন। ঢাকায় অবস্থিত লিয়াজোঁ অফিস থেকেই তিনি অধিকাংশ প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনা করতেন।
তাঁর বিরুদ্ধে অনুপস্থিতি ছাড়াও স্বজনপ্রীতি, কর্তৃত্ববাদী আচরণ এবং দুর্নীতির অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরেই উঠেছিল। তবুও তৎকালীন সরকারের ঘনিষ্ঠতার কারণে তিনি পুরো মেয়াদ পূর্ণ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।