আমির ফয়সাল, জাবি প্রতিনিধি:
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) আহত শিক্ষার্থীদের নিয়ে মতবিনিময় সভা ও সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়েছে।
সোমবার (৪ঠা আগস্ট) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের গ্যালারি কক্ষে উক্ত সভাটি পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় প্রকাশনা সম্পাদক আবু সাদিক কায়েম, কেন্দ্রীয় ক্রীড়া সম্পাদক হারুনুর রশিদ রাফি, শহিদ শ্রাবণ গাজীর পিতা আব্দুল মান্নান গাজী, ছাত্রশিবিরের জাবি শাখার সভাপতি মহিবুর রহমান মুহিব ও সাধারণ সম্পাদক মো. মোস্তাফিজুর রহমান। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ জাবি শাখার নেতৃবৃন্দ, জুলাই আন্দোলনে জাবির আহত শিক্ষার্থী, সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক কর্মীগণ।
উদ্বোধনী বক্তব্যে শহিদ শ্রাবণ গাজীর বাবা আব্দুল মান্নান গাজী বলেন, "আমার ছেলে এই আন্দোলন করেছিল যাতে ছাত্ররা তাদের নযাযয অধিকার পায়। আমার ছেলে ১৫ জুলাই মালয়েশিয়া থেকে এসে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনে যোগ দেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ডাকেই আমার ছেলে শহিদ হয়েছে কিন্তু এখানে আমার ছেলের জনয তেমন কিছুই করেনি। আমরা চাই অন্তত এই বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি হল হলেও আমার ছেলের নামে নামকরণ করা হোক। আরেকটি দুঃখের বিষয় গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পার হলেও আমার ছেলের কোনো বিচার পাইনি।"
জাবি ছাত্রশিবিরের সভাপতি মহিবুর রহমান মুহিব বলেন, "জুলাই গণঅভ্যুত্থান ছিল কৃষক, মজুর, শ্রমিক ও জনতার। পথশিশুরা ছিল আন্দোলনের ঢালস্বরূপ। আন্দোলনে পথ দেখিয়েছে জবি শিক্ষার্থী ও শিক্ষকগণ। জুলাইয়ের এক বছর পার হতে চললেও ১৫ জুলাই ভিসির বাড়িতে হামলাকারী ছাত্রলীগের বিচারের কিছুটা অগ্রগতি হলেও ফ্যাসিবাদের দোসর শিক্ষকদের বিচারের কোনো অগ্রগতি দেখছি না। জাকসু নির্বাচনও বারবার পেছানো হচ্ছে। আমরা ইসলামী ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে আগামী ৯ সেপ্টেম্বরের মধ্যে জাকসু নির্বাচন করার জোর দাবি জানাচ্ছি। আজ জাবির সিন্ডিকেট মিটিং চলছে, আশা করি ছাত্রসংগঠনগুলোর দাবির আলোকে জাবির ৪টি হলের নাম জুলাই শহিদদের প্রাধান্য দিয়ে নামকরণ করা হবে।"
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় ক্রীড়া সম্পাদক হারুনুর রশিদ রাফি বলেন, "স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন প্রথম শুরু করেছিলাম ২০১১ সালে, তারপর সেটিকে আনুষ্ঠানিক রূপ দেওয়া হয় ২০১৩ সালে। আমরা স্বপ্ন দেখেছি কবে শেখ হাসিনার পতন হবে। ২০১৯ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি বিরোধী আন্দোলনে শিবির সক্রিয় ভূমিকা রেখেছে। এ আন্দোলনে যুক্ত থাকায় তখন আমাদেরকে বিএনসিসিতে র্যাঙ্ক দেওয়া হয়নি। ২০২৩ সালে বিএনপির কিছু নেতা ক্ষমতা, চাকরি ও পদ পাওয়ার লোভে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন থেকে দুরে সরে গিয়েছিল কিন্তু পরবর্তীতে ১ দফা দাবিতে বিএনপি আমাদের সাথে ঐকযমত পোষণ করে। জুলাইয়ে স্বৈরাচার হটানোর ক্রেডিট শুধুমাত্র আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নয় বরং বাংলাদেশের প্রতিটির অঞ্চলের মানুষের। আমরা যেদিন স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের সাথে যুক্ত সবাইকে ক্রেডিট দিতে পারব, সেদিন আমরা সফল হব।"
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তব্যে ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক আবু সাদিক কায়েম বলেন, "শহিদ শ্রাবণ যখন দেখেছে ছাত্রদের ওপর অমানবিক নির্যাতন চালানো হচ্ছে, ছাত্রলীগ যখন হামলা শুরু করে মেধাবী ছাত্রদের রক্ত ঝরায় তখন সে যোগয দাবি আদায়ের জনয আন্দোলনে নেমে আসে। কিন্তু আজকে আমাদের কষ্ট লাগে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শহিদদের যোগ্য মর্যাদা দিতে পারেননি।
এখন পর্যন্ত আমরা খুনী হাসিনার বিচার দেখতে পাইনি। আমরা যখন শহিদ পরিবারের সাথে কথা বলি আমরা তখন তাদের আকাঙ্ক্ষার জায়গাটি বাস্তব দেখাতে দিতে পারি না। যদি সঠিকভাবে জুলাই সনদ প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা হয় এবং শহিদদের সঠিক মর্যাদা দেওয়া হয় তাহলেই আমরা আমাদের কাঙ্ক্ষিত জাতীয় ঐক্যে এক ও অভিন্ন থাকতে পারব। এছাড়া আমরা আশা করি, ঘোষিত তারিখেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদগুলোতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
আমাদের বন্ধুপ্রতীম ছাত্রসংগঠনগুলোকে সাথে নিয়ে আমরা আওয়ামীলীগ প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধ থাকতে চাই। এত বছর বাংলাদেশে আমাদেরকে হতযা করা বৈধ ছিল। আমরা চাই না পরবর্তীতে বাংলাদেশে আবার স্বৈরাচারী পরিবেশ তৈরি হোক। আমাদের এত শহিদ এত গাজী থাকার পরেও আমরা যদি এবার জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে বাংলাদেশকে বিনির্মাণ করতে না পারি তাহলে আমরা এই সুযোগ কখনো আর পাব না।"
এছাড়া আরও অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত হয়ে বক্তব্য রাখেন এবং আহত জাবি শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সম্মাননা স্মারক প্রদানের মাধ্যমে সভা শেষ হয়।