আবু তাহের, নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি:
সংকটে ভুগছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র চিকিৎসাকেন্দ্রটি । শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, সন্ধ্যা হলেই বন্ধ হয়ে যাওয়া, ছুটির দিনে খোলা না থাকা, ওষুধসংকট ও প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগহীনতাসহ নানা সংকট ও সমস্যা নিয়ে চলছে কেন্দ্রটি। জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৫ বিভাগের শিক্ষার্থী , শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ প্রায় ১০ হাজার মানুষের সামান্য অসুখেই চিকিৎসা নিতে ছুটতে হয় ত্রিশাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কিংবা ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। দীর্ঘ ২২ কিলোমিটার দূরের শহরে রোগীবহনেও মিলছে না সেখানে থাকা একমাত্র অ্যাম্বুলেন্সের সেবা।
মেডিকেল সেন্টারটির অতিরিক্ত চিফ মেডিকেল অফিসার ডা. আবুল খায়ের মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘যে পরিমাণ জনবল আমাদের আছে, সেই তুলনায় মেডিকেল সেন্টার থেকে বেশি সেবা দেওয়া হচ্ছে। আমাদের তেমন কিছুই নেই। মোটামুটিভাবে চিকিৎসা দিতে যা যা প্রয়োজন সেসবের কিছুই পাচ্ছি না। ওষুধের জন্য আগে যেই পরিমাণ বাজেট ছিল, এখনো তাই আছে। বাজেটের পরিমাণ না বাড়লেও বাজারে ওষুধের দাম বেড়েছে। এ ছাড়া সপ্তাহের সাত দিন চব্বিশ ঘণ্টা সেবা দিতে হলে যে পরিমাণ দক্ষ লোকবল ও আধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জাম লাগবে, সেটা আমাদের নেই।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সানোয়ার রাব্বি প্রমিজ বলেন, ‘একমাত্র চিকিৎসাকেন্দ্রটি আমাদের জন্য ভরসার জায়গা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এখানে পর্যাপ্ত ডাক্তার নেই। সেবার মান নেই। ওষুধ সরবরাহ সীমিত। শুধু জ্বর বা প্রাথমিক চিকিৎসার ওষুধ ছাড়া অন্য কোনো ওষুধ পাওয়া যায় না। প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগ প্রায় নেই বললেই চলে। শিক্ষার্থীসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সবাই চিকিৎসা নিতে গিয়ে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। ২৪ ঘণ্টা সেবা পাওয়া তো দূরের কথা, বড় কোনো জটিলতা দেখা দিলে অনেক সময় ডাক্তারও পাওয়া যায় না।’
স্থানীয় সরকার ও নগর উন্নয়ন বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মো. মেহেদি হাসান রনি বলেন, ‘জ্ঞানচর্চার জন্য শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার নিশ্চয়তা থাকা জরুরি। কিন্তু দুঃখজনক হলো, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি রোগ কমানোর বদলে রোগ বাড়ানোর প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।’
সংকটের বিষয়টি স্বীকার করে ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক ড. মো. আশরাফুল আলম বলেন, ‘বিষয়টা বুঝতে পারছি। কিন্তু এ ক্ষেত্রে আমরা অসহায়। মেডিকেল সেন্টারটিতে চিকিৎসক থেকে শুরু করে সব কিছুরই সংকট আছে। প্রশাসন থেকে আবেদন করে নিয়োগ দেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে। তবে ইউজিসি নিয়োগ দিচ্ছে না, বাজেটও দিচ্ছে না।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘মেডিকেল সেন্টারটি যেন যথাযথ চিকিৎসা সেবা দিতে পারে, সেই ব্যাপারে আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি। এ বিষয়ে ইউজিসিতে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তবে সেখান থেকে আমরা কোনো ইতিবাচক সাড়া পাচ্ছি না। বরং আমাদের আগে যা বাজেট ছিল, সেটাও কমানো হয়েছে।’