আবু বকর সুজন, চৌদ্দগ্রাম (কুমিল্লা) প্রতিনিধিঃ
খুচরা ঔষধের দোকান দিতে প্রয়োজন ট্রেড লাইসেন্স, ড্রাগ লাইসেন্স ও ফার্মাসিস্ট কোর্স সার্টিফিকেট। অথচ খুচরা ঔষধ বিক্রয়ে নিয়মকানুন থাকলেও মানেন না বিক্রেতারা।
খুচরা ঔষধ বিক্রির দোকানে সঠিক বিতরণ এবং ব্যবস্থাপনার জন্য ফার্মাসিস্টদের প্রশিক্ষণ এবং লাইসেন্স থাকা অপরিহার্য হলেও কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার চিত্র ভিন্ন। ফার্মেসী টেকনেশিয়ান প্রশিক্ষণ কোর্স ছাড়া বিতরণ কর্মী দিয়ে চলছে ঔষধ দোকানগুলো। এতে রোগীরা পাচ্ছেন না সঠিক ঔষধ, প্রেসক্রিপশন ছাড়া দেয়া হচ্ছে বিপজ্জনক এন্টিবায়োটিক।
তথ্যানুযায়ী খুচরা ঔষধ বিতরণে বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিল কর্তৃক পরিচালিত ফার্মেসি সার্টিফিকেট রেজিস্ট্রেশন কোর্স সম্পন্ন করতে হয়। তিন ক্যাটাগরির মধ্যে সাধারণ ওষুধ বিতরকারীদের কমপক্ষে সি ক্যাটাগরির ফার্মেসি টেকনেশিয়ান কোর্স করতে হয়। ন্যুনতম মাধ্যমিক (এস.এস.সি) বা স্বীকৃত সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর, বাংলাদেশ ফার্মেসী কাউন্সিল ও বাংলাদেশ কেমিস্টস এন্ড ড্রাগিস্টস সমিতি (বিসিডিএস) কর্তৃক যৌথভাবে পরিচালিত ত্রৈ-মাসিক ফার্মেসি সার্টিফিকেট রেজিস্ট্রেশন কোর্সের প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করার পর ফার্মেসি টেকনিশিয়ান হিসাবে নিবন্ধিত হওয়ার যোগ্য হয় একজন প্রার্থী। ঔষধের সঠিক ডোজ, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও পদ্ধতি সম্পর্কে ধারণা দিয়ে রোগীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন এই ফার্মেসি টেকনেশিয়ানরা।
আইন অনুযায়ী প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রয় করলে সর্বোচ্চ ১২০০০ টাকা জরিমানা বা লাইসেন্স বাতিলের ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। তবে চৌদ্দগ্রামের ফার্মেসি গুলোতে ফার্মাসিস্ট না হয়ে ঔষধ বিতরণ সহ প্রেসক্রিপশন ছাড়া এন্টিবায়োটিক বিতরণের চিত্র নিত্যকার। নিয়মবিধি সম্পর্কে অসচেতন ক্রেতারা হচ্ছেন ভুক্তভোগী। আইন থাকলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তদারকি না থাকায় সুজোগ নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
এ বিষয়ে ভোক্তা অধিদপ্তর কুমিল্লার সহকারী পরিচালক কাউসার মিয়া জানান, 'ফার্মাসিস্ট প্রশিক্ষণ সার্টিফিকেট ছাড়া ঔষধ বিতরণের বিষয়ে আমরা অবগত রয়েছি। জনবল সংকটের কারণে অভিযান চালানো সম্ভব হয়না।'
ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর কুমিল্লার সহকারী পরিচালক সালমা সিদ্দিকা কালবেলা কে বলেন, 'প্রত্যেক ড্রাগ লাইন্সেন্সের বিপরীতে একজন ফার্মাসিস্ট থাকতে হয়। ফার্মেসি কাউন্সিলের ফার্মাসিস্ট কোর্স অনেকদিন বন্ধ ছিল, জুলাই থেকে সেটা আবার চালু হচ্ছে। আমরা যখন তাদের (ফার্মেসি) সাথে আলোচনা করি, অভিযানে যাই তখন আদেরকে বলি ফার্মাসিস্ট থাকতে হবে। যদি কোনো কারণে কোনো ফার্মাসিস্ট পরিবর্তন হয় অর্থাৎ নতুন ফার্মাসিস্ট নিয়োগ দেয় তবে সেক্ষেত্রেও আমাদেরকে অবহিত করতে হবে।'
এ বিষয়ে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ রশিদ আহমেদ চৌধুরী বলেন, 'উপজেলায় হাটবাজারে ছোট বড় অনেক ফার্মেসি আছে। ড্রাগ লাইসেন্স নেয়ার সময়ই ফার্মাসিস্ট সার্টিফিকেট জমা দিতে হয়। ফার্মেসি গুলো পশিক্ষণ ছাড়া ফার্মাসিস্ট দিয়ে চলে সেটা আমরাও শুনেছি। এর বিরুদ্ধে ভোক্তা অধিদপ্তর ও ঔষধ প্রশাসন অভিযান করলে আমরা সহযোগীতা করবো।'
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক ফার্মেসির দোকানদার জানান চৌদ্দগ্রামে অনেক দোকানে ফার্মাসিস্ট নেই। শুরুতে থাকলেও পর্যাপ্ত বেতন সুযোগ সুবিধা না দেওয়ার কারণে ফার্মাসিস্ট
চলে যায়।