আনোয়ারুল ইসলাম রনি, রংপুর প্রতিনিধিঃ
অবশেষে কারমাইকেল কলেজের আন্দোলন পৌঁছেছে প্রশাসনের সর্বোচ্চ পর্যায়ে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়ার বাস্তবতা সরেজমিনে দেখতেই সোমবার (২৪ জুন) দুপুরে কারমাইকেল কলেজ ক্যাম্পাস পরিদর্শনে যান সেনাবাহিনী, জেলা প্রশাসন এবং মেট্রোপলিটন পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা।
এ সময় ৭২ পদাতিক ব্রিগেডের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হুমায়ুন কাইয়ুম ও রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মজিদ আলী কারমাইকেল কলেজের জিএল হোস্টেলে উপস্থিত হয়ে ছাত্রদের ডাইনিং থেকে খাবার পরখ করেন। খাবারের মান নিয়ে তাঁরা সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানান।
এর আগে, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ঘন্টাব্যাপী আলোচনা করেন সেনাবাহিনী ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা। সেখানে শিক্ষার্থীদের ৩৭ দফা দাবি শোনেন এবং তারা শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণে সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে কথা বলে সমাধানের আশ্বাস দেন। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তারা বলেন, "আপনাদের দাবিগুলো যৌক্তিক। আমরা চেষ্টা করবো এগুলো বাস্তবায়নের পথ সুগম করতে।"
উত্তরের অক্সফোর্ডখ্যাত, ১০৮ বছরের ঐতিহ্যবাহী রংপুর কারমাইকেল কলেজ দীর্ঘদিন ধরে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত। দেশের অন্যতম প্রাচীন এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নেই পর্যাপ্ত একাডেমিক ভবন, আধুনিক অডিটরিয়াম, মানসম্মত আবাসিক সুবিধা কিংবা পর্যাপ্ত সংখ্যক শিক্ষক।
এই বাস্তবতায় কলেজের শিক্ষার্থীরা গত চারদিন ধরে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি পালন করছেন। ২১ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে—
নতুন একাডেমিক ভবন নির্মাণ, আধুনিক অডিটরিয়াম ও মাল্টিমিডিয়া সুবিধা, পর্যাপ্ত শিক্ষক নিয়োগ, আবাসিক হল সংস্কার ও সম্প্রসারণ, যাতায়াতের জন্য কলেজ বাস, ক্যাম্পাস নিরাপত্তায় স্থায়ী পুলিশ বক্স, নতুন বিভাগ চালু,নারী শিক্ষার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ও স্যানিটারি এই সংকট নিরসনে শিক্ষার্থীরা পুনরায় আহ্বান জানিয়েছেন সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্যকে সরাসরি কলেজে এসে বাস্তব পরিস্থিতি পরিদর্শন করার জন্য। শিক্ষার্থীরা স্পষ্ট করে দিয়েছেন, শুধুমাত্র আশ্বাসে নয়, দৃশ্যমান পদক্ষেপেই তারা আন্দোলন স্থগিত করবেন।
চতুর্থ দিনে গড়ানো এই আন্দোলন এখন রংপুর ছাড়িয়ে জাতীয় পর্যায়ে আলোচিত ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ের এই সরেজমিন পরিদর্শন পরিস্থিতির গুরুত্বকেই ইঙ্গিত করে। এখন দেখার বিষয়—সরকার শিক্ষার্থীদের এই ন্যায্য দাবিগুলোর দ্রুত বাস্তবায়নে কী পদক্ষেপ নেয়।
শিক্ষার্থীদের কণ্ঠে এখন একটাই সুর—"এই ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ আর বঞ্চিত থাকবে না। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা ক্লাসে ফিরবো না।"