সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছারিবাড়ির অডিটরিয়াম ভাঙচুরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে দর্শনার্থীদের প্রবেশে অনির্দিষ্টকালের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়েছে। এর আগে, গত ১১ জুন অনির্দিষ্টকালের জন্য দর্শনার্থী প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয় কর্তৃপক্ষ।
শুক্রবার (১৩ জুন) বেলা ১১ টার দিকে সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক মুহাম্মাদ নজরুল ইসলাম একজন দর্শনার্থীর হাতে প্রবেশ টিকিট তুলে দিয়ে এই নিষেধাজ্ঞা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন।
জেলা প্রশাসক মুহাম্মাদ নজরুল ইসলাম বলেন, রবীন্দ্র কাছারিবাড়িতে কোনো প্রকার হামলার ঘটনা ঘটেনি। কাছারিবাড়ি সম্পূর্ণ অক্ষত রয়েছে । হামলা হয়েছে মূলত কাছারিবাড়ির রবীন্দ্র অডিটরিয়ামে। সেটাও কাছারিবাড়িকে টার্গেট করে নয় বরং প্রবেশ টোকেন নিয়ে একজন প্রবাসী দর্শনার্থীর সঙ্গে কাছারিবাড়ির স্টাফদের ব্যক্তিগত অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাকে কেন্দ্র করে। কোনো মৌলবাদ বা কোনো রাজনৈতিক কারণে এ ঘটনা ঘটেনি বলেও উল্লেখ করেন। সেই সঙ্গে রবীন্দ্র কাছারিবাড়িতে আর কোনো নিরাপত্তার ঘাটতি নেই উল্লেখ করে সকল দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেন তিনি।
এদিন জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ নজরুল ইসলামের সঙ্গে কাছারিবাড়ি পরিদর্শন করেন প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের উপপরিচালক (প্রশাসন) শেখ কামাল হোসেন, সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার মো. ফারুক হোসেন, শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান, সহকারী কমিশনার মো. মুশফিকুর রহমান, উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ইকবাল হোসেন হিরু, উপজেলা জামায়াত আমির অধ্যাপক মিজানুর রহমান, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কাজী শওকত প্রমুখ।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের উপপরিচালক (প্রশাসন) শেখ কামাল হোসেন বলেন, ইতোমধ্যেই তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে। খুব শীঘ্রই ঘটনার বিস্তারিত রিপোর্ট তৈরি হবে। তদন্ত রিপোর্ট দেখে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার মো. ফারুক হোসেন জানান, রবীন্দ্র কাছারিবাড়িতে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। আর কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার সম্ভাবনা নেই। ইতোমধ্যেই হামলা ভাঙচুরের সঙ্গে জড়িত ৬ জনকে আটক করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ৮ জুন একজন দর্শনার্থী পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কাছারিবাড়ি পরিদর্শনে যান। এ সময় পার্কিং ফি নিয়ে গেটের এক কর্মচারীর সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে ওই দর্শনার্থীকে অডিটরিয়ামের ভেতরে আটকে মারধর করে আহত করে। সেই মারধরের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরালও হয়।
হামলার ঘটনায় ভুক্তভোগী শাহনেওয়াজ বাদী হয়ে শাহজাদপুর থানায় সেদিন রাতেই কাস্টোডিয়ান হাবিবুর রহমানকে ১নং আসামি করে একটি লিখিত অভিযোগ দেন। ঘটনার দুদিন পরেও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা থানা পুলিশ না নেওয়ায় প্রতিবাদে স্থানীয়রা গত মঙ্গলবার (১০ জুন) শাহজাদপুর প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করে। পরে উত্তেজিত জনতা কাছারিবাড়িতে প্রবেশ করে অডিটরিয়ামের দরজা, জানালা ভাঙচুর করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয় এবং শাহজাদপুরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মুশফিকুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।