মো:জিসান রহমান, মাভাবিপ্রবি প্রতিনিধিঃ
পবিত্র ঈদুল আজহা মুসলিম উম্মাহর অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব, যা ত্যাগ, আত্মসমর্পণ ও মানবিকতার এক উজ্জ্বল প্রতীক। কোরবানির এই উৎসবকে ঘিরে মানুষের মনে যেমন আনন্দ, তেমনি অন্তর্নিহিত রয়েছে আত্মত্যাগ ও সহমর্মিতার গভীর বার্তা। এই ভাবনাই প্রতিফলিত হয়েছে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (মাভাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীদের অনুভবে।
এফটিএনএস বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ধী-বুনিয়ানুম মারসুস বলেন, “ঈদুল আজহা কেবল উৎসব নয়, এটি হালাল উপার্জন, ন্যায্যতা ও দরিদ্রদের কল্যাণে কাজ করার শিক্ষা দেয়। কোরবানির মূল বার্তাই হলো ত্যাগ এবং সমাজে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন। ইসলাম শুধু ইবাদতের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং একজন মানুষকে আর্থিক ও সামাজিকভাবে সুশৃঙ্খল হওয়ার শিক্ষা দেয়।”
সিপিএস বিভাগের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আরাবিয়া সুলতানা প্রীতি বলেন, “ঈদ আমাদের মানবিক মূল্যবোধে উদ্বুদ্ধ করে। গ্রামের ঈদের আমেজ, আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি—এসব শহুরে জীবনে পাওয়া যায় না। তবে ঈদের প্রকৃত শিক্ষা যদি আমরা ধারণ করতে পারি, তাহলে সমাজে বৈষম্য অনেকটাই কমে আসবে।”
টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আল হাসান বলেন, “ঈদুল আজহা হলো মুসলিমদের জন্য একটি বড় আনন্দ ও উৎসবের দিন। এই দিনে আমরা মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সন্তুষ্টির জন্য কোরবানি দিয়ে থাকি—কেউ গরু, কেউ ভেড়া ইত্যাদি কোরবানি করেন। তবে কিছু মানুষ কোরবানি দেন শুধুমাত্র মাংস খাওয়ার জন্য বা লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে—যা ইসলামের মূল দর্শনের পরিপন্থী। লোক দেখানো কোরবানি আল্লাহর কাছে কবুল হয় না।”
তিনি আরও বলেন, “হাদিসের কিতাব জামে আত-তিরমিজি-এর ১৫৩৫ নম্বর হাদিসে বর্ণিত হয়েছে: ‘নিশ্চয়ই লোক দেখানোর মনোভাব শিরকের সমতুল্য।’ এছাড়া, পবিত্র কুরআনের সূরা আল-আন’আম-এর ১৬২ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন:
‘বল, আমার নামাজ, আমার কোরবানি, আমার জীবন ও আমার মৃত্যু—সবকিছুই আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের জন্য নিবেদিত।’”
বিজিই বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ফজলে রাব্বি বলেন, “ঈদুল আজহা শুধুই একটি উৎসব নয়, এটি ত্যাগ, শিক্ষা এবং আত্মশুদ্ধির এক মহামিলন। ইসলামের মহান আদর্শ আমাদের শিখিয়েছে—আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নিজের প্রিয় জিনিসও কোরবানি করতে পিছপা হওয়া যাবে না। এই শিক্ষা কেবল পশু কোরবানির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়—বরং জীবনের প্রতিটি স্তরে, নিজের স্বার্থ, অহংকার কিংবা অন্যায় প্রবৃত্তির বিরুদ্ধে কোরবানির বার্তা দেয়।”
তিনি আরও যোগ করেন, “আজকের তরুণ প্রজন্মকে এই চেতনাকে হৃদয়ে ধারণ করতে হবে—পরিবারে, সমাজে এবং রাষ্ট্রে ন্যায়, সহানুভূতি ও দায়িত্বশীলতা প্রতিষ্ঠায়। ঈদুল আজহার আসল সৌন্দর্য তখনই ফুটে ওঠে, যখন আমরা কোরবানির আত্মা নিয়ে চারপাশের মানুষদের সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করি, বৈষম্যের দেয়াল ভেঙে মানবতার সেতুবন্ধন গড়ি।”
শিক্ষার্থীদের এসব অনুভব ও মতামত থেকে স্পষ্ট—ঈদুল আজহা কেবল একটি ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং আত্মিক সংযোগ, মানবিকতা ও সামাজিক দায়বদ্ধতার এক অনন্য শিক্ষা। তরুণ প্রজন্ম যদি এই মূল্যবোধ নিজেদের জীবনে বাস্তবায়ন করতে পারে, তাহলে সমাজে গড়ে উঠবে একটি ইতিবাচক, সহানুভূতিশীল ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজব্যবস্থা। ঈদের অন্তর্নিহিত শিক্ষা যদি আমাদের আচার-আচরণ ও দৈনন্দিন জীবনে প্রতিফলিত হয়, তবেই তা হবে প্রকৃত কোরবানির বাস্তব রূপায়ণ।