নিউজ ডেক্স
- ১ জুন, ২০২৫ / ২২ বার পঠিত

মোঃ মাহিন খান, ঝালকাঠি প্রতিনিধি:
ঝালকাঠি সরকারি হরচন্দ্র বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শতবর্ষী পুকুরটি ভরাটের চেষ্টায় নেমেছিল শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর। পাইপ স্থাপন ও বালু ফেলার প্রস্তুতি সম্পন্ন করার পর স্থানীয়দের প্রতিবাদে বিষয়টি জেলা প্রশাসকের নজরে আসে। তাৎক্ষণিক হস্তক্ষেপে কাজ বন্ধ হলেও নাগরিক সমাজ ও পরিবেশবিদদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে উদ্বেগ।
শুধু এই একটি পুকুর নয়—ঝালকাঠি শহরের অনেক ঐতিহ্যবাহী পুকুরই ইতোমধ্যে হারিয়ে গেছে, আর যেগুলো আছে তাও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ময়লা, আবর্জনা ও অব্যবস্থাপনার কারণে।
ফায়ার সার্ভিসের ঝালকাঠি স্টেশন অফিসার মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, “শহরের মধ্যে মাত্র ৩-৪টি পুকুর থেকে এখন জরুরি সময়ে পানি সংগ্রহ করা সম্ভব। বাকিগুলো ভরাট বা দূষণের কারণে অকেজো হয়ে গেছে। বড় অগ্নিকাণ্ড হলে আমাদের একমাত্র ভরসা নদী থেকে পানি উত্তোলন।”
পরিবেশ আন্দোলনের নেতা আল আমিন বাকলাই বলেন, “শহরের খাল খননের উদ্যোগ ছিল আশাজাগানিয়া। কিন্তু কাজ শেষ হওয়ার আগেই এল হযবরল। একের পর এক পুকুর ভরাট হলে জলাবদ্ধতা ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় বিপর্যয় দেখা দেবে।”
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম জানান, “কাজটি শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের পরিকল্পনায় নেওয়া হয় কয়েক বছর আগে। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করলেও এখন তা বন্ধ রয়েছে।”
অন্যদিকে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের সহকারী প্রকৌশলী মো. খাইরুল ইসলাম বলেন, “বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের জমি নির্বাচন অনুযায়ীই আমরা পরিকল্পনা করি। বর্তমানে কাজ বন্ধ এবং পরবর্তী পদক্ষেপের প্রস্তুতি চলছে।
গণসংহতি আন্দোলনের জেলা আহ্বায়ক এসএ জুয়েল হাওলাদার বলেন, “আজ ভরাট করে বরাদ্দ খাবে, কাল আবার খননের নামে বরাদ্দ খাবে। এই তো পুরো খেলা।”
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র ইয়াছিন ফেরদৌস ইফতি বলেন, “পুকুর শুধু পানি বা মাছের জন্য নয়, ইকোসিস্টেমের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কিন্তু সচেতনতার অভাবে আমরা নিজেরাই নিজেদের সর্বনাশ ডেকে আনছি।”
নারী নেত্রী হাসিনা আক্তার বলেন, “সুগন্ধা নদী থেকে আর যেন বালু না তোলা হয়, সেদিকে নজর দিতে হবে প্রশাসনকে। নদীর পাড়ে আমাদের বসতঘর, আর সহ্য করা যাচ্ছে না।”
পরিবেশবিদ ও সাংবাদিক আমিন আল রশিদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পুকুরে কী হবে? চাইলে নদীও ভরাট করে দিন! রাস্তা আছে না? বিশিষ্ট আইনজীবী ও সাংস্কৃতিক কর্মী অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন কবির বলেন, “শহরের পানি সরে না কারণ প্রায় সব পুকুরই ভরাট হয়ে গেছে। অগ্নিকাণ্ড বা অতিবৃষ্টিতে বিপদ বাড়বে। বাকি দুই-চারটি সরকারি পুকুরই শেষ ভরসা, সেগুলোও যদি চলে যায় তাহলে শহর হয়ে পড়বে চরম ঝুঁকিতে।”