সোমবার, ০২ Jun ২০২৫, ১১:৪৩ পূর্বাহ্ন
মোঃ সাইফুল ইসলাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধিঃ
নাসিরনগর উপজেলার গোকর্ণ ইউনিয়নে ঘটে গেছে হৃদয়বিদারক এক ঘটনা। গতকাল (৩০ মে) বিকেলে আকাশিয়া মাঠ থেকে গরু আনতে গিয়ে খালের প্রবল স্রোতে ভেসে যায় গোকর্ণ গ্রামের আপন দুই বোন। রাতভর খোঁজাখুঁজির পর আজ শুক্রবার (৩১ মে) সকাল ছয়টার দিকে গোকর্ণ বেরিবাঁধ সংলগ্ন তিতাস নদীতে ভাসমান অবস্থায় তাদের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।তিতাস নদীতে মরদেহ উদ্ধারের মুহূর্তে গ্রামবাসীর ভিড় লেগে যায়।
নিহতরা হলেন গোকর্ণ মধ্যপাড়ার প্রবাসী মিনার আলীর দুই মেয়ে। একজনের নাম মারিয়া (১১), অপরজন সামিয়া(০৮) । দু’জনেই ওইদিন দুপুরে পরিবারের গরু আনতে মাঠে গিয়েছিল বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা।
মেয়েটির বাবা মিনার আলীর ফোনে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন,“ওরা আমার আদরের সন্তান, কে জানতো এমনভাবে ফিরে আসবে! আমাদের সব শেষ হয়ে গেলো।”
মেয়েটির চাচা জালাল আহমেদ কান্না করতে করতে বলেন,আমরা সারারাত নৌকা নিয়ে তাদের খুঁজেছি,ফায়ারসার্ভিস ও পুলিশ অনেক খোজাঁখুজি করে ও পাই নাই। আজকে সকালে একজনের লাশ নদীতে ভেসে উঠে, অপরজনের লাশ মাছের জালে আটক পরে। আমাদের সব কিছু শেষ ভাই , আমার কলিজা টুকরো গুলো শেষ হয়ে গেছে।
একজন স্থানীয় কৃষক জানান,বিকেলের দিকে আমরা শুনি তারা খালের পাশে ছিল, হঠাৎ পানির স্রোত বেড়ে গেলে হয়ত তারা দুজনেই ভেসে যায়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহীনা নাসরিন জানান, খবর পেয়ে আমি এসিল্যান্ডসহ রাত বারোটার দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছাই, মেয়ে দুটোর মায়ের সাথে কথা বলে জানতে পারি গরু ছড়াতেই নদীর পাশে যায় তারা। পরে সন্ধার সময় গরুগুলো বাড়িতে চলে এলেও মেয়েরা বাড়িতে ফিরেনি। আমরা অনেক খোজাঁখুজি করেও তাদের সন্ধান পাইনি। পরে মাইকিং করে পুরো এলাকায় নিখোঁজের সংবাদ জানানো হয়। সন্ধা গড়িয়ে রাত গভীর হলেও কোন খোঁজ না পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ভৈরবে ডুবুরিদের খবর দেয়। ডুবুরিরা আসার আগের সকালে লাশ দুটো নদী থেকে ভেসে উঠে । মেয়েগুলোর বাবা মিনার আলী কিছুদিন হলো বিদেশে গেছে। তার চার সন্তানের মধ্যে এক ছেলে বড় তারপরের দু’জন মেয়ের মৃত্যু হয়েছে , আরেক মেয়ে ছোট। আসলে এমন মর্মান্তিক ঘটনায় শান্তনা দেওয়ার কোন ভাষা নেই। তারপরও আমি মেয়ের মাকে যতটুকু সম্ভব শান্তনা দিয়ে এসেছি। এমন ক্ষতি কোনভাবেই পূরণ করার মতো নয়।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত গোকর্ণ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বলেন,এই ঘটনা খুবই মর্মান্তিক। আমরা এলাকাবাসীকে অনুরোধ করছি বর্ষার সময়ে নদী বা খালের ধারে গেলে সতর্ক থাকতে। পরিবারকে সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হবে।”
নাসিরনগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জানান,
“খবর পাওয়ার পরপরই আমরা ঘটনাস্থলে ছুটে এবং তদন্ত করে লাশ দাফনের অনুমতি দেওয়া হবে।
ঘটনার পর পুরো গোকর্ণ গ্রামজুড়ে শোকের আবহ বিরাজ করছে। প্রতিবেশীরা মৃতদের বাড়িতে গিয়ে শোকপ্রকাশ করছেন। স্কুলের শিক্ষক-সহপাঠীরাও এদের মৃত্যুতে গভীরভাবে মর্মাহত।
2025 © জনপদ সংবাদ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
প্রয়োজনে যোগাযোগঃ ০১৭১৫-১২৫২৪৩